ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ‘বাংলাদেশের মানুষের উদারতা-মহানুভবতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত’ : প্রধানমন্ত্রী

‘বাংলাদেশের মানুষের উদারতা-মহানুভবতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত’ : প্রধানমন্ত্রী

1506137102
নিউজ ডেক্স : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্থান ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা অসহায় ও নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তাদের খাদ্য ও অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের মানুষের এ উদারতা ও মহানুভবতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে ভাষণ প্রদানের পর গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় সকালে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আয়োজিত জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে অংশ নিয়ে আমি সাধারণ বিতর্ক পর্ব, ওআইসি কনট্যাক্ট গ্রুপের উচ্চ পর্যায়ের সভাসহ সব দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা তুলে ধরেছি। চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় বিশ্ব নেতারা আমাদের প্রশংসা করেছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবারের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন এমন একটি সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন মিয়ানমারে জাতিগত নিধন অভিযানের ফলে হাজার হাজার নিরীহ রোহিঙ্গা প্রতিদিন প্রাণভয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গত তিন সপ্তাহে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এদের বেশিরভাগই নারী, শিশু ও বয়স্ক। আগে থেকেই চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ছিল। ফলে বর্তমানে মোট আট লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আমাদের দেশে অবস্থান করছে। এদের খাদ্য, বাসস্থান ও জরুরি সহায়তা সংকুলান এবং এদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা জটিল সংকটের মুখোমুখি।
লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবারের অধিবেশনে আমি রোহিঙ্গা সমস্যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি এ সমস্যা সমাধানে মুসলিম বিশ্বসহ সবার সহযোগিতা কামনা করি। সামগ্রিকভাবে এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অবদান ও ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল ও সুসংহত হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্বে অংশ নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার কথা জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। এই সংকটের স্থায়ী সমাধানে তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে যে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেছিলেন, সেই প্রস্তাবগুলোর কথাও বলেন তিনি। তুরস্ক ও ইরানের রাষ্ট্রপতিসহ মুসলিম বিশ্বের বেশ কয়েকজন নেতা ওআইসি কনট্যাক্ট গ্রুপের সভায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসব দেশ বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সভায় আমি রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চলমান নির্যাতন বন্ধে এবং মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রর্ত্যাবতন নিশ্চিত করতে ওআইসির পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাই।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন শেখ রেহানা
লিখিত বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার ছোট বোন শেখ রেহানা বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। শেখ রেহানা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘তুমি ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারো, আর ১০ লাখ মানুষকে খাওয়াতে পারবা না?’ এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী তার বোনকে বলেন, ‘ঠিকই তো। ১৬ কোটি মানুষকে পারলে, ১০ লাখকে কেন খাওয়াতে পারবো না?’ আরেক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দরিদ্র দেশ হলেও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় তিনি বাংলাদেশের ভূঁয়সী প্রশংসা করেছেন। উনি আশ্বাস দিয়েছেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণের পদক্ষেপ নেবেন। এ বিষয়ে যথাসাধ্য করার চেষ্টা করবেন তিনি।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, চীনের সঙ্গে কি কোনও আলোচনা হয়েছে? এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব রাষ্ট্রদূতরা স্পটে গেছেন। সবাই সহানুভূতিশীল হয়েছেন। ভারত-চীন সবাই এগিয়ে এসেছে। তারা ত্রাণ পাঠিয়ে সহায়তা করেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে ৫টি দেশের সীমান্ত রয়েছে। প্রত্যেকের সঙ্গে শরণার্থী নিয়ে সমস্যা আছে। তারাও সবাই সহানুভূতিশীল।’ এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জাতীয় দুর্যোগ কমিটি আছে। তারা কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের প্রশিক্ষিত ৪০০ ভলেনটিয়ার ও বিএনসিসির ১০০সহ মোট ৫০০ ভলেনটিয়ার আছে তারা সেখানে দিনরাত পরিশ্রম করছেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে আমাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জয়েন্ট সেক্রেটারি নানক অনেকে সেখানে আছেন। তারা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। দলের পক্ষ থেকে ৪০০ ভলেনটিয়ার কাজ করছে। আমাদের দলের অনেকেই ওখানে যাচ্ছে কাজ করছে। লঙ্গরখানায় তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাদের আমরা খাদ্য দিচ্ছি। ওষুধ দিচ্ছি। আমাদের যেসব রিলিফ আসছে তা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে আসছে। সেনাবাহিনী সেগুলো রিসিভ করে ডিসির কাছে দিচ্ছে। এছাড়া নেভি, কোস্টগার্ড দিনরাত কষ্ট করে যাচ্ছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। -ইত্তেফাক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!