ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | শর্তসাপেক্ষে জামিন পেলেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম

শর্তসাপেক্ষে জামিন পেলেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম

নিউজ ডেক্স : বাংলাদেশে অফিসিয়াল সিক্রেক্টস অ্যাক্টের মামলায় প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হওয়া প্রথম আলো পত্রিকার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন দিয়েছেন আদালত। পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকা এবং পাসপোর্ট জমা রাখার শর্তে তাকে জামিন দেয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি আবদুল্লাহ আবু বলেন, রোজিনা ইসলামের মামলাটি স্পর্শকাতর হলেও আমরা তার জামিনের আবেদন বিবেচনা করার জন্য বলেছি। তবে আমরা বলেছি, পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে। আসামী পক্ষ তাকে রাজি হয়েছে।

রোজিনা ইসলামের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী জানিয়েছেন, পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় তাকে জামিন দিয়েছেন আদালত। জামিনের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ যে শর্ত দিয়েছে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই।

তার আরেকজন আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার বলেন, ১৫ জুলাই এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার কথা রয়েছে। আমরা আইনগতভাবে এই মামলা মোকাবেলা করবো। রোজিনা ইসলাম আসার পরে তিনি যে সিদ্ধান্ত নেন, সেভাবে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেবো।

যারা হেনস্থা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা, সেই প্রসঙ্গে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, সাংবাদিক সব সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার তার জামিন আবেদনের শুনানি হওয়ার পর রায় দেয়ার জন্য রোববার তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।সেদিন রোজিনা ইসলামের জামিনের বিরোধিতা করলেও রোববার রাষ্ট্রপক্ষ জামিন আবেদনে আপত্তি করেনি।

গত ১৭ই মে ছয় ঘণ্টা আটকে রাখার পর রাতে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে রোজিনা ইসলামকে হস্তান্তর করা হয়। রাতে তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেক্টস অ্যাক্টে মামলা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সেই মামলায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নথি চুরি এবং অনুমতি ছাড়া সেই নথির ছবি তোলার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাকে প্রথমে আটকে রাখা এবং তারপর শত বছরের পুরোনো আইনে মামলা দেয়ার ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। সাংবাদিকদের সব সংগঠন প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে।

সোমবার বিকেল যখন তাকে স্বাস্থ্য সচিবের পিএস-এর কক্ষে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল। সেই ঘটনার কিছবি এবং ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে তাকে গলা চেপে ধরে রেখেছেন সচিবালয়ের এক নারী কর্মকর্তা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করার জন্য নানা সময়ে আলোচনায় আসা রোজিনা ইসলামকে সোমবার রাতে শাহবাগ থানায় রাখা হয়েছিল।

পরে মঙ্গলবার সকালে তাকে আদালতে নেয়া হয়। সেদিন জামিন আবেদনের ওপর আংশিক শুনানি হয়েছিল। তবে আদালত রিমাণ্ডে না দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল।

সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে বুধবার সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্য মন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রোজিনা ইসলাম ন্যায় বিচার পাবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন।

তবে সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও তথ্য মন্ত্রী হাছান মাহমুদ দুজনই রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নথি চুরির যে অভিযোগ এনেছে সেটিই পুনরুল্লেখ করেছেন।

তবে সরকারের মন্ত্রীরা যাই বলুন, রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে আটকের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সোমবার বিকেল থেকেই সাংবাদিকরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন।

বুধবার ঢাকায় প্রেসক্লাবের সামনে, সেগুন বাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে ও কারওয়ান বাজারে সাংবাদিকদের নানা সংগঠন রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছে।

ঢাকার বাইরে সারাদেশে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। ওদিকে জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ দেশী বিদেশ নানা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। -বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!