Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ৩০ বছরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে এবার কম

৩০ বছরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে এবার কম

নিউজ ডেক্স : আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর সারা দেশে যে তাপমাত্রা, তা গত ৩০ বছরের একই সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার গড়ের চেয়ে কম। গত দুদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা রাতে গড়ে ৯-১৫ ডিগ্রি এবং দিনের বেলায় ২২-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই তাপমাত্রা গত ৩০ বছরের এই সময়ে দেশের স্বাভাবিক তাপমাত্রার গড়ের চেয়ে এক থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কম। এ কারণে এই মুহূর্তে দেশের ১০টি জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চললেও সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে। খবর বিবিসি বাংলার।

আবহাওয়াবিদ মো. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এ বছর শীতের অনুভূতি বেশি দেখা যাচ্ছে। পুরো দেশেই বিশেষ করে উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা আগামী কয়েকদিনও স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশের সাধারণ তাপমাত্রার হিসাব অনুযায়ী বড় কোনো এলাকা জুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আট থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা যদি ছয় থেকে আট ডিগ্রির মধ্যে থাকে তাহলে তাকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলে। কিন্তু তাপমাত্রা যদি ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়, তাহলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়।

চলছে শৈত্যপ্রবাহ : দেশের ১০টি জেলায় এই মুহূর্তে চলছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শৈত্যপ্রবাহ আরো দুই থেকে তিন দিন চলবে। গতকাল সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর সোমবার চুয়াডাঙায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ২১ ডিসেম্বর সকালে কিছুটা বেড়েছে। আগের দিন ২০ ডিসেম্বরে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা ছিল যশোর, তেঁতুলিয়া, পাবনার ঈশ্বরদী, রাজশাহী ও বরিশালে। আরো আটটি জেলার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে রয়েছে। আবহাওয়াবিদ মল্লিক বলেছেন, বুধবার থেকে তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু শীতল বাতাসের কারণে দেশজুড়ে শীতের অনুভূতি বেশিই থাকবে। এ সময়ে রোদের দেখা কম মিলবে, আকাশ মেঘলা থাকতে পারে অনেক জায়গায়। কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা একই রকম থাকতে পারে। গড় তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণ কী? : সাধারণত বছরের এই সময় তাপমাত্রা কম থাকে। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই কমতে শুরু করে তাপমাত্রা। আর এ বছর কিছুটা আগেই শুরু হয়েছিল শীতের মৌসুম।

এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছিল, ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ একটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। তবে মল্লিক বলেছেন, এ মাসের অবশিষ্ট কয়েকদিনে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু তিনি বলেন, এ বছরের এই শীতল তাপমাত্রা গত ৩০ বছরের তাপমাত্রার চেয়ে অঞ্চলভেদে এক থেকে পাঁচ ডিগ্রি পর্যন্ত কম। কারণ, এ সময় হিমালয় থেকে আসা হিমেল বাতাস উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাতাসের গতিবেগ ভৌগলিক কারণে বেশি থাকে। এ বছর সেটি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি দেখা যাচ্ছে।

কোনো একটি এলাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য এ বছর অনেক কমে গেছে। আবার সাধারণ সময় দিনের বেলায় যে তাপমাত্রা থাকে রাতে তার চেয়ে কয়েক ডিগ্রি কমে যায়। পরদিন সূর্য ওঠার পর সেটি বাড়ে। কিন্তু এ বছর দিন ও রাতে তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য কমে গেছে।

কুয়াশার কারণে এই সময়ে দেশের অনেক জায়গায় সূর্য দেরি করে ওঠে। এর ফলে দিনে সূর্যের কিরণকাল কমে যায়। ফলে উষ্ণতার হারও কমে যায়। এ বছর কুয়াশা কিছুটা বেশি। বছরের এই সময়ে সূর্যের দক্ষিণায়ন হয়। এর মানে হচ্ছে সূর্যের অবস্থান সরাসরি বাংলাদেশের ভূমি বরাবর নয়। এখন সূর্যের অবস্থান বঙ্গোপসাগর বরাবর রয়েছে, যে কারণে সূর্য কিছুটা তির্যকভাবে আলো দিচ্ছে বাংলাদেশে। এ কারণে সূর্যের তাপ কম অনুভূত হয়। কোনো অঞ্চলের বাতাসে জলীয় বাষ্প ৪০ শতাংশের নিচে নেমে গেলে আবহাওয়া শুষ্ক এবং বাতাস ভারী হয়। তার ফলে শীত বাড়ে। দেশে এই মুহূর্তে গড়ে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক কম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!