ব্রেকিং নিউজ
Home | সাহিত্য পাতা | যদি শুনতে পারতাম ফেসবুক বন্ধ

যদি শুনতে পারতাম ফেসবুক বন্ধ

462

শুভ্রা নীলাঞ্জনা : রাত পোহালেই যদি শুনতে পারতাম ফেসবুক বন্ধ হয়ে গেছে। নিজের বিনা কস্টে অর্জিত দুই বিঘা জমি লোপাট হয়ে গেছে। উফ কি শান্তি পেতাম। পেয়ে কিছু হারানোতেও যে এতো সুখ সে কথা বুঝিনি আগে। ঘুম থেকে উঠেই স্ট্যটাসের চিন্তা নেই, ছবি তুলার ধান্দা নেই, লাইক কমেন্টের আশা প্রত্যাশা নেই। লাইক নিয়ে গোপন দির্ঘস্বাস নেই। ভার্চুয়াল হিংসেমি, কুটনামি নেই, আহা আগের মতো কি শান্তির জীবন।খুব কাছের লোকদের, খুব কাছের বন্ধুদের, অনেক দিন কথা হয় না এমন কোন বন্ধু বা আত্মীয়র সাথে খুব আগ্রহ নিয়ে কথা হবে। ল্যান্ডফোন টা আবার আগের মতো বেজে উঠবে। কারো জন্ম হলে ছোট কয়েক টা কাঁথা কিউট কিউট ছোট ছোট জামা নিয়ে দেখতে যাব।এখন সাথে সাথে নবজাতকের ছবি দেখা হয়ে যায় আর যাওয়া হয় না। কারণ আকাঙ্ক্ষা নেই নব জাতক কে দেখে ফেলেছি। কারো বিয়েতে যাওয়া হয়নি তো আকংখা থেকে যেত যে একদিন সময় করে বউ দেখে আসতে হবে। এখন সব অতীত। শুধুই মনেহয় আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম।

আমাদের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম আমাদের সামাজিক যোগাযোগ ও পরস্পরের ভিতর মধুর সম্পর্ককে শূণ্যতে এনে ঠেকিয়েছে। আগে সত্যিকারের বন্ধু ছিল হাতে গুনা ২/৩ জন। এখন হাজার হাজার নকল বন্ধুর ভীড়ে জীবনের সবচেয়ে কাছের বন্ধুটিই হারিয়ে যায় ফেসবুকের ব্যাস্ততার অভাবে। ভার্চুয়াল বন্ধুদের সময় দিতে যেয়ে যেমন লাইক, কমেন্ট ইনবক্স এ প্রতি উত্তর কতগুলি বেহুদা স্টেটাস পড়তে যেয়ে সময় চলে যায় দ্রুত গতিতে। কাছের বন্ধুটিকে সময় দেওয়া হয়না তার যতটুকু প্রাপ্য ছিল। তার কথা আর ভাবা হয় না আলাদা করে। আগে মান অভিমান হলে অপেক্ষায় থাকা হতো। এখন অপেক্ষা করা টা বোকামি অথবা ব্যাকডেটেড। কারণ শুন্যস্থান খুব তাড়াতাড়ি পুর্ণ হয়ে যাচ্ছে অজানা, অচেনা, নামহীন, গোত্রহীন, মেকিবন্ধুদের দিয়ে। এতেই আমরা খুশি। মানুষ খুব তাড়াতাড়ি বদলে যাচ্ছে বেহুঁশ হয়ে যাচ্ছে, নিজের অস্তিত্ব কে বিলিন করে দিচ্ছে খুব সহজেই। লাগামহীন ভাবে ছুটে চলছি আমরা ভার্চুয়াল দুনিয়ার দিকে। কিসের আশায়? কিসের মোহে? জানা নেই সেই অজানা আকর্ষন কি? জানেনা কেউ লাভ, জানেনে কেউ ক্ষতি, শুধুই কি ভালোলাগা? নিজেকে সবাইর সাথে যুক্ত হওয়ার নামে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া।এখন আমাদের সমাজ, সংসার, পরিবার সব যেন ফেইসবুক আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। যাই করি সব ফেসবুকের কথা মাথায় রেখে। ছবি তুলি ফেসবুকের জন্য, কিছু লিখি ফেসবুকের জন্য, সারাদিন ফেসবুকে শুধু অন লাইন, অফ লাইন করা। এখন কেউ আমরা নিজের নই সবাই আমরা ফেসবুকের তরে। আগে ভালো গল্পের বই পড়া হতো এখন তাও হয়না। আগে সবাই একসাথে হলে গল্প করতাম এখন একসাথে হলে যার যার মোবাইলটা নিয়ে আলাদা হয়ে পড়লাম।তাহলে আর এক সাথে হওয়া কেন? এখন দুইটা ছেলে মেয়ে রিক্সা করে যাচ্ছে পরস্পরের সাথে গল্প করে নয় দুইজন দুইজনের মোবাইলের ভিতর মগ্ন হয়ে হয়ে যাচ্ছে। এখন চলছে ফেসবুক যুগ। এই যুগের ধর্মই হয়ত তাই। আমরা যত দ্রুত গতিতে আগাচ্ছি ঠিক তেমনি আমাদের ভালোবাসা আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা থেকে দ্রুত পিছিয়ে পড়ছি। এই জীবন থেকে আমরা কি আদৌ ফিরব? মনে হয় না।

জোকারসবার্গের নিজের ফেসবুক চালানোর সময় নেই কারণ সে আর ও বৃহত্তর প্রজেক্ট এ হাত দিয়েছে যেখানে নেট যেয়ে পৌঁছেনি সেইসব মানুষ দের সৌরশক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর সব মানুষ কে কি ভাবে এক সুতায় গাঁথা যায় সেই ধান্দায় আছে। ফেসবুকের স্বাদ কিভাবে তাদের আস্বাদন করানো যায় সেই নিয়ে গবেষনা চলছে। কিছু মানুষ স্বস্তিতে ছিল, শান্তিতে ছিল অচিরেই সেই সব মানুষ অশান্তির পৃথিবীতে পা দিচ্ছে। স্বাগতম তোমাদের। হে পৃথিবীর মানবজাতী এসো আমরা সবাই একসাথে উন্মাদ হই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!