নিউজ ডেক্স : আরিফুল হোসেন। বয়স তের। এবয়সে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে চালিয়ে যাচ্ছে ভিক্ষা বৃত্তি। কখনো সে পিতৃহারা বলে দাবি করে সাধারণ মানুষ থেকে টাকা ভিক্ষা করে। কখনো বলে তার বোনের বিয়ে তাই টাকা প্রয়োজন। যদি কেউ টাকা না দেয় তাহলে পা জাপটে ধরে। টাকা না দেয়া পর্যন্ত পা ছাড়ে না। অনেকে বিব্রতকর পরিসি’তি থেকে রক্ষা পেতে টাকা দিতে বাধ্য হয়। এভাবে মিরসরাইয়ের সর্বত্র ভিক্ষাবৃত্তি চালিয়ে যাচ্ছে শতাধিক শিশু। অনেকে নিরীহ শিশুদের সংগঠিত করে ভিক্ষা বৃত্তিতে ব্যবহার করছে।পেশাদার বেশকিছু ভিক্ষুক মাসিক,দৈনিক অথবা কমিশনের ভিত্তিতে এই শিশুদের এ কাজে ব্যবহার করছে। যে বয়সে শিশুরা বিদ্যালয়মুখী হওয়ার কথা এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি নিজ স্বার্থে ওই শিশুদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ানো ওই সব শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি থেকে সরিয়ে আনতে প্রশাসনের কোন উদ্যোগ নেই।সম্প্রতি উপজেলার বারইয়ারহাট বাজারে কথা হয় আরিফের সাথে।
সে জানায়, ঘরে তার পিতা মাতা রয়েছে। গত দুই বছর ধরে সে ভিক্ষাবৃত্তি চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে সে মাঝেমধ্যে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে টাকা চাইতো। এখন ভিক্ষা বৃত্তিকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। দৈনিক সে তিনশ থেকে চারশ টাকা আয় হয়। কিছু টাকা তার পিতা-মাতাকে দেয়। বাকি টাকা নিজে খরচ করে।
জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার করেরহাট থেকে সাহেরখালী পর্যন্ত বেশকিছু পেশাদার ভিক্ষুক রয়েছে। এদের মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধি, শারিরীক প্রতিবন্ধী, অক্ষম ব্যক্তি ছাড়াও সহজে আয়ের পথ হওয়ায় কিছু সক্ষম ব্যক্তিও এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। তবে শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তিতে বেশি ব্যবহার করে ভিক্ষা সংগ্রহ করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও অক্ষম ভিক্ষুকরা। মিরসরাইয়ে সাত থেকে বার বছর বয়সী প্রায় শতাধিক শিশু করেরহাট, বারইয়ারহাট, শান্তিরহাট, জোরারগঞ্জ, মিঠাছড়া, মিরসরাই সদর, বড়তাকিয়া, হাদি ফকির হাট, সরকার হাট, ছোটকমলদহ, বড়দারোগার হাটসহ গ্রামেগঞ্জে ভিক্ষুুকদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। তেমনি দশ বছর বয়সী শিশু হাসান ভিক্ষকের সহযোগী হিসেবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কাশেমের সাথে মাসিক এক হাজার টাকা বেতনে সারাদিন ভিক্ষার কাজ করে।
হাসান জানায়, তার মা-বাবা তাকে এ কাজে এনে দিয়েছেন। সারাদিন ভিক্ষা করে দুই থেকে আড়াইশ টাকা পান। কখনও আরো বেশি টাকা পায়, কখনও কম। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক মো. জামাল মিয়া জানান, দৈনিক ৮-৯ ঘন্টা ভিক্ষা করে আড়াই থেকে তিনশ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। সহযোগী হিসেবে রাখা শিশুকে মাসে দুই হাজার টাকা দিতে হয়। তিনি জানান, ভিক্ষা করতে সুবিধা ও সহজে পথ চলার জন্য শিশুটিকে সহযোগী হিসেবে রাখা হয়েছে।
মিরসরই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাববিনা লিনা জানান, ভিক্ষুকদের নিয়ে জেলা পর্যায়ে সরকারের কার্যক্রম থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে কোন কার্যক্রম নেই। শিশু ভিক্ষুক নামে পরিচিত শিশুরা পেশাদার ভিক্ষকদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। শিশুদের ওই পেশা থেকে ফিরিয়ে আনতে সমাজে সচেতনতা প্রয়োজন।