ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | জামায়াত নেতার নামে আওয়ামী লীগ এমপির সড়ক ঘোষণা

জামায়াত নেতার নামে আওয়ামী লীগ এমপির সড়ক ঘোষণা

013459_pic

নিউজ ডেক্স : কক্সবাজার জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম রহিম উল্লাহর জানাজায় বক্তৃতা ও কান্নাকাটি করে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন ক্ষমতাসীন দলের এমপি সাইমুম সরোয়ার কমল। গত বুধবার একটি বিতর্কিত দলের নেতার জানাজায় বক্তৃতা দিতে উঠে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি কমল স্মৃতিচারণা করেন কাঁদতে কাঁদতে। প্রয়াত ওই নেতার নামে একটি সড়কের নামকরণ এবং তাঁর পরিবারের জন্য জমি দেওয়ার ঘোষণা দেন এমপি কমল। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামশুল আলম মণ্ডল বলেন, এমপি কমলের প্রয়াত পিতা ওসমান সরোয়ার আলম চৌধুরী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠকও। ওসমান সরোয়ার আলম চৌধুরী দলীয় দুইবারের নির্বাচিত এমপি এবং আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। অথচ এমপি কমল গত পাঁচ বছরেও নিজের প্রয়াত পিতার নামে একটি সড়কের নামকরণ করেননি। অথচ সামনে ভোট নিয়ে তিনিই (এমপি কমল) কি না জামায়াত নেতার নামে সড়কের নামকরণ করবেন?

কেন্দ্রীয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, রহিম উল্লাহ যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর রায় ঘোষণার পর কক্সবাজারে তাণ্ডব ও সহিংসতা চালান। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রতিহত করতে তিনি প্রকাশ্যে হামলা চালান এবং চারজনকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক এই নেতা ১৯৯৮ সালের ১৭ আগস্ট সংঘটিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতা সঞ্জয় তলাপাত্র হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি।

বিবৃতিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শহীদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘যেখানে জামায়াত, সেখানেই প্রতিরোধ’ এই অঙ্গীকারে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

বুধবার কক্সবাজার-৩ আসনের এমপি কমল বক্তৃতায় বলেন, প্রয়াত জি এম রহিম উল্লাহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার এক বছর সিনিয়র ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল।’ তিনি বলেন, জি এম রহিম উল্লাহ কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি তাঁকে সহযোগিতা দিয়ে আসছেন।

এমপি কমল স্মৃতিচারণার সময় অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, প্রয়াত জামায়াত নেতা ভাড়া ঘরে থাকতেন, তাই তাঁর পরিবারের ঘর করার জন্য তিনি জমি দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। জামায়াত নেতার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তাঁর নামে একটি সড়কের নামকরণেরও ঘোষণা দেন তিনি।

এসব বিষয়ে কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম বলেন, এমপি কমল ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে একজন প্রয়াত ব্যক্তির জানাজায় কান্নাকাটি করতেই পারেন। তাঁর পরিবারকে নিজের টাকায় জমিও কিনে দিতে পারেন। কিন্তু জনগণের ব্যবহৃত কোনো সড়কের নাম একজন জামায়াত নেতার নামে উৎসর্গ করার কোনো অধিকার এমপির থাকতে পারে না।

রামু উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শামশুল আলম মণ্ডল আরো বলেন, এমপি কমল কক্সবাজার শহরের কলাতলী গোলচত্বরে বঙ্গবন্ধুর একটি স্মৃতিফলক স্থাপনের কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি ফলকের জন্য বরাদ্দ করা টাকাও উত্তোলন করেছিলেন। কাজটি তিনি করেননি এবং টাকা ফেরত যায়।

সাইমুম সরোয়ার কমল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে অনেক কিছু বলেছিলাম। আমি একে একে দুটি জানাজায় অংশ নিয়েছি। তবুও আমার বক্তৃতায় অন্তত মানুষ তো খুশি হয়েছে। এমপি কমল বলেন, জমি তিনি নিজের টাকায় কিনে দেবেন। তবে সড়কের নামকরণ করতে পারবেন কি না তাতে তিনি সন্দিহান।

গত মঙ্গলবার দুপুরে শহরের হোটেল সাগরগাঁওর একটি কক্ষ থেকে জিএম রহিম উল্লাহর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পারিবারিক সূত্রের দাবি, ঘুমন্ত অবস্থায়ই এ মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার জানান, জি এম রহিম উল্লাহর বিরুদ্ধে বেশ কটি নাশকতার মামলা রয়েছে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মহানগর ও কক্সবাজার জেলা শিবিরের সভাপতি ছিলেন।

সূত্র : কালের কন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!