ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চট্টগ্রামের মাদক ব্যবসায়ীরা গা ঢাকা দিচ্ছে

চট্টগ্রামের মাদক ব্যবসায়ীরা গা ঢাকা দিচ্ছে

Photo-3

নিউজ ডেক্স : মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানে সরকার। এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গত দু’দিনে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক ব্যবসা ও পাচারের সঙ্গে জড়িত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গত কয়েকদিনে সারাদেশে কয়েকশ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এমন অভিযানে ‘গা ঢাকা’ দিতে শুরু করেছেন চট্টগ্রামের মাদক ব্যবসায়ীরা।

বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে মাদক চোরাচালানের অন্যতম রুট হিসেবে ধরা হয়। নগরীর বরিশাল কলোনির মালিপাড়ায় গত বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই মাদক বিক্রেতা নিহত হন। দু’দিন পর সেখানে আবারও অভিযান চালিয়ে তিন মাদক বিক্রেতাকে আটক করে পুলিশ।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ বলেন, ‘আগে বরিশাল কলোনির মাদক বিক্রেতারা সাধারণত ছোরা-চাপাতি জাতীয় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করত। কিন্তু এবার তাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেছে। এটা আমরা অ্যালার্মিং বলে মনে করছি।’

বৃহস্পতিবার র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হাবিবুর রহমান ও মো. মোশারফ নিহত হওয়ার পর বরিশাল কলোনির মালিপাড়া থেকে শনিবার রাতে মো. হানিফ ওরফে খোকন (৩৫), কাজী মো. আব্দুল্লাহ (২৮) ও খোকন কুমার দাশকে (৩২) আটক করেছে পুলিশ।

মাদকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার বলেছেন, ‘আমরা যেমন জঙ্গিবাদ দূর করেছি তেমনি এবার উদ্যোগ নিয়েছি মাদক থেকে দেশকে মুক্ত করব। ইতোমধ্যে আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়ে গেছে। আমি বলে দিয়েছি, আমরা আমাদের সমস্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং র‌্যাবকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছি। মাদক যেখানে পাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা সেই কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

গতকাল র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘মাদকের খুচরা বিক্রেতা থেকে শুরু করে ডিলার, যেই হোক, তাকে এ ব্যবসা ছাড়তে হবে। হাউ এভার, হোয়াট এভার, হয়ার এভার কেউ আমাদের অপারেশনের বাইরে নয়। মাদকের শিকড়-বাকড়সহ তুলে নিয়ে আসব।’

এদিকে সারাদেশে মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের বিশেষ অভিযানে আতঙ্কগ্রস্ত মাদক ব্যবসায়ীরা। গত দু’দিনে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একাধিক নিহতের ঘটনায় বন্দর নগরী চট্টগ্রামের মাদক ব্যবসায়ীরা এখন ‘গা ঢাকা’ দিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র  জানায়, সারাদেশে গত দু’দিনে অন্তত ১৩ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রামেও নিহত হয়েছেন দু’জন। আটক হয়েছেন আরও ছয় মাদক ব্যবসায়ী। এ অবস্থায় আতঙ্কে মাদক সিন্ডিকেটের অধিকাংশ সদস্য ‘গা ঢাকা’ দিয়ে অন্যত্র সরে পরার চেষ্টায় আছেন।

সূত্রটি আরও জানায়, তবে এ গা ঢাকা ক্ষণিকের। অভিযানের পর মাদকের আখড়া বরিশাল কলোনি থেকেই অনেকেই সরে পড়েছেন। তবে এ চলে যাওয়া আপাতত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শেষ হলেই তারা আবারও ফিরে আসবেন।

নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকার এক মাদক ব্যবসায়ী জানান, ঝাউতলা থেকে ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকার রেললাইনের পাশে সব ধরনের মাদকের চালান তার হাত দিয়ে হয়। তবে পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানের পর ব্যবসায় মন্দা নেমেছে। নিজেও আতঙ্কে রয়েছেন।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরীতে মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় ৬শ’। তাদের মধ্যে ৫০ থেকে ৮০ জনের মতো নারী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি তালিকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও রয়েছে। তালিকায় সমাজের প্রভাশালীদের নামও রয়েছে।

র‌্যাবের সহকারী পরিচালক মিনতানুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছেন। আমরা তার নির্দেশ পালন করছি। মাদক আমাদের সমাজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের হাতেও সহজে পৌঁছে যাচ্ছে মাদক।

কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হার্ড লাইনে রয়েছে সরকার। মাদক ব্যবসায়ী সে যত বড় মাপেরই হোক না কেন, তাকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

তিনি বলেন, গত কয়েকদিনের অভিযানে চট্টগ্রামের মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে পিঠ বাঁচানোর তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। আমাদের কাছে খবর আছে, ইতোমধ্যে অনেকে নিজ জায়গা থেকে সরে পড়ছে। আবার অনেকে সেই শূন্যস্থান দখলে তৎপর হচ্ছে। তবে তারা যাই করুক, কোনো ছাড়া নয়। চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবার চালান বন্ধ করা গেলে সারাদেশে এর প্রভাব পড়বে। তাই আমরা এ বিষয়ে খুব সিরিয়াস।

মোহাম্মদ মহসিন আরও বলেন, কক্সবাজার থেকে যেন কোনো ইয়াবার চালান আসতে না পারে সে জন্য শাহ আমানত সেতুর দু’পাশে কর্ণফুলী থানা এবং বাকলিয়া থানার চেকপোস্ট আছে। সেই চেকপোস্টে নিয়মিত তল্লাশি হয়। আমার (কোতোয়ালি) থানা এলাকাতে নিয়মিত টহল দিচ্ছি।’

জানা গেছে, দেশে ছড়িয়ে পড়া ক্ষতিকর ইয়াবার সিংহভাগ আসে প্রতিবেশি মিয়ানমার থেকে। দেশে প্রবেশের পর কক্সবাজার ও চট্টগ্রামকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে তা ছড়িয়ে দেয়া হয় পুরো দেশে। লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় মিয়ানমার সীমান্তে একের পর এক গড়ে উঠছে ইয়াবার কারখানা। আর মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সহায়তায় এ ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন দুই দেশেরই মাদক ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় চট্টগ্রামের অন্তত ৬শ’ মাদক ব্যবসায়ীদের নাম রয়েছে। যারা কয়েক বছরের ব্যবধানে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ির মালিক বনে গেছেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকে নগরীর প্রতিটি থানায় মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম চলছে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও একটি তালিকা আমরা হাতে পেয়েছি। সে তালিকা অনুসরণ করে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। মাদকের সঙ্গে যারই যোগসাজশ, ছাড় দেয়া হবে না।’

সূত্র : জাগো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!