Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | তাশফিয়া হত্যা : আগের বক্তব্যে অনড় আদনান

তাশফিয়া হত্যা : আগের বক্তব্যে অনড় আদনান

image-48877-1525287468

নিউজ ডেক্স : নানা কৌশল অবলম্বন করেছে পুলিশ। তবে তাসফিয়া হত্যা মামলার মূল আসামি কথিত প্রেমিক আদনান মির্জার বক্তব্যে এক চুল নড়চড় হয়নি। প্রথম দিন আটকের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে যা বলেছিল, আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে যা উচ্চারণ করেছিল, গত বুধবার পুলিশের তদন্ত টিমের জিজ্ঞাসাবাদেও তার উত্তর ছিল অভিন্ন। তবে কিছুটা বিমর্ষ দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন তাকে জেরা করা টিমের সদস্যরা। গতকাল শুক্রবার সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (বন্দর) আরেফীন জুয়েল বিষয়টি আজাদীকে জানান। এদিকে তাসফিয়ার পরিবার অভিযোগ করেছে, আসামিকে জামাই আদরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নতুন কিছু বের হবে কীভাবে? তাকে তো সেখানে আসামি হিসেবে ট্রিট করা হয়নি। প্রয়োজনে তারা আবার রিমান্ড চাইবে। এদিকে আদনানকে গাজীপুর সংশোধনাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করা তদন্ত টিমের সদস্যরা জানিয়েছেন, আমরা যেভাবে একটানা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, তাতে এই বয়সী একটি ছেলে ভেঙে পড়তে বাধ্য। এর ক্ষেত্রে দেখলাম ব্যতিক্রম। মনোবিজ্ঞানীরা তাকে পরীক্ষা করেছেন। তাতেও তার মধ্যে কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়েনি।

আরেফীন জুয়েল আজাদীকে জানান, গত বৃহস্পতিবার আদনানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে, তাসফিয়ার ফেসবুক তার বাবা বন্ধ করে দেওয়ায় সে তার (আদনান) সাথে যোগাযোগ করত ইনস্টাগ্রামে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর গোলপাহাড় মোড়ে চায়না গ্রিল নামে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে তাসফিয়াকে নিয়ে প্রেমের এক মাস পূর্তি উৎসব করে আদনান। এরপর তাসফিয়াকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে দেয় সে। যাওয়ার সময় আদনানকে জানিয়ে যায়, সে ও আর নিজাম রোডের ৫ নং সড়কে তার এক বান্ধবীর বাসায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাবে। এরপর থেকে আদনান আর কিছু জানে না বলে পুলিশকে জানিয়েছে। আদনান আটক হওয়ার পর কিংবা আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও সে একই কথা বলেছিল।

তবে তাসফিয়ার চাচা নূরুল আমীন অভিযোগ করেন, আদনানকে যেভাবে জামাই আদরে রাখা হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাতে সে যে আসামি তা মনে হচ্ছে না। তাই জিজ্ঞাসাবাদের রেজাল্ট কী হতে পারে তা আমরা আগেই আন্দাজ করছি। আমরা প্রয়োজনে আবারো আদনানের রিমান্ডের আবেদন করব।

সিএমপির তাসফিয়া মার্ডার মামলার তদন্ত টিমের ইনচার্জ এডিসি আরেফীন জুয়েল বলেন, তাসফিয়ার জন্য ভাড়া করা অটোরিকশাটি গোলপাহাড় মোড়ে এসেছে শিল্পকলা একাডেমির দিক থেকে। পুলিশ তাসফিয়াকে বহনকারী অটোরিকশা চিহ্নিত করলেও সেটির নম্বর শনাক্ত করা যায়নি। তবে ওই অটোরিকশার স্ক্রিনশট ঢাকার সিআইডি ল্যাবে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

আদনান বক্তব্যের সূত্র ধরে তিনি বলেন, তাসফিয়া কীভাবে পতেঙ্গা গেল তা সে জানে না। শুধু বলেছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় গোলপাহাড় মোড়ের চায়না গ্রিল থেকে নেমে বাসায় যেতে একটি অটোরিকশায় তাসফিয়াকে তুলে দিয়েছে সে। এরপর আরেকটি অটোরিকশা নিয়ে প্রথমে ফুফুর বাসায়, সেখান থেকে একই অটোরিকশায় খুলশী জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটির বাসায় চলে যায়। বাসায় চলে যাওয়ার পর তাসফিয়ার মায়ের ফোন পেয়ে একটি লাল টি–শার্ট পরে তাদের ও আর নিজাম রোডের বাসায় যায় আদনান। এরপর তাসফিয়ার মা, বাবা ও বন্ধু সোহেলকে নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত তাসফিয়ার খোঁজে শহরে ঘুরেছে।

তদন্ত টিমের ইনচার্জ বলেন, ময়নাতদন্ত শেষ। এখন ঢাকা সিআইডিতে পাঠানো ভিসেরা রিপোর্টের জন্য অপে া। এছাড়া তাসফিয়াকে বহনকারী সিএনজি অটোরিকশাটির সন্ধান এখনো মিলেনি। তবে আদনানকে বহনকারী সিএনজি শনাক্ত করা হয়েছে। গাড়ি দুটির চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যাবে বিষয়টি। তিনি আরো জানান, অটোরিকশার নম্বর শনাক্ত করতে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী চীনে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে আগামী রোববার বা সোমবার রিপোর্ট আসবে। প্রায় একই সময়ে তাসফিয়ার ভিসেরা রিপোর্টও পাব। মৃত্যু রহস্য জানতে ভিসেরা রিপোর্টের অপেক্ষা করছে পুলিশ।

সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, সিএমপির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা তাসফিয়া হত্যা মামলা তদন্তে জড়িত অফিসারদের ডেকে নির্দেশ দিয়েছেন, মিডিয়ার কাছে কোনো আপডেট জানাতে হলে নিশ্চিত হয়েই জানাতে হবে।

গত ২ মে পতেঙ্গায় সানসাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসফিয়া আমিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!