এলনিউজ২৪ডটকম: লোহাগাড়াকে মডেল উপজেলায় রূপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইনামুল হাছান। গত ১৪ নভেম্বর তিনি লোহাগাড়ায় ইউএনও হিসেবে যোগদানের এক বছর পূর্ণ হয়েছে।
তাঁর কর্মকালীন সময়ে সরকারি কোষাগারে ১ কোটি সাড়ে ৯৪ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে পাহাড় ও কৃষি জমির টপসয়েল কাটার দায়ে ৫৩টি মামলায় সাড়ে ৪৪ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় এবং অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু জব্ধ করে নিলামে বিক্রি করে দেড় কোটি টাকা।

জানা যায়, যোগদানের এক বছরেই ইউএনও মুহাম্মদ ইনামুল হাছানের কর্মদক্ষতায় উপজেলার সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি দপ্তরের কর্মকান্ডে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা ফিরে আসতে শুরু করে। ফলে জনভোগান্তি কমে গিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে জনসেবার মান। প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি উপজেলার একমাত্র সরকারি বিদ্যালয় দক্ষিণ সাতকানিয়া গোলামবারী সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ডিও লেটার তথা তদবীর ছাড়া ভর্তি কাযর্ক্রম চালু করা, লম্বাশিয়ায় ১৭৮.৪৮ একর পাহাড় দখলমুক্ত এবং অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ, ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক নেতাদের অনৈতিক তদবির গ্রহণ না করে নিরপেক্ষ এবং সচ্ছতার সাথে দায়িত্বপলান করেন। ট্রাকবাহী অবৈধ সিএনজি গ্যাস বিক্রয় বন্ধ ও উপজেলা সদর বটতলী অবৈধ দখলমুক্ত করেন। প্রত্যেক ইউনিয়নে খেলার মাঠ নির্মাণসহ উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য তাঁর পরিকল্পনায় নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন গেইট, মিনি পার্ক, সুমিংপুল, উপজেলা প্রবেশমুখে পরিত্যাক্ত স্থানে ফুলের বাগান। এছাড়াও যৌতুক-বাল্যবিবাহ রোধ, বাজার মনিটরিং, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, পাহাড় কাটা, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ ও ইভটিজিং প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যনের স্থলে প্রশাসকের দায়িত্বভার গ্রহণ এবং উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসা-কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ইউএনও মুহাম্মদ ইনামুল হাছান। উপজেলায় শান্তি-শৃংখলা সুরক্ষায় ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় মান্যগণ্য ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা ও ছাত্র প্রতিনিধির সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবী কমিটি, শিক্ষা কমিটি, বাজার মনিটিরিং কমিটি গঠনপূর্বক স্থানীয়দের মাঝে সম্প্রীতি সুদৃঢ়করণের অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে কাজ করছেন। ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য, সমাজসেবা বিভাগ, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার মাধ্যমে নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ও উন্নয়ন, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ সরকারের সেবামূলক বিষয়গুলো নিবিড় তদারকি করছেন এই ইউএনও। সফলতার সাথে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও নিয়মিত বাজার মনিটরিং এবং স্বচ্ছতা ও প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে সরকারি বরাদ্দ দেওয়ার ফলে উপজেলাবাসীর কাছে প্রশংসিত হন। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে তার সরব উপস্থিতি জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। লোহাগাড়াকে একটি মডেল উপজেলায় উন্নীতকরণে নিরলসভাবে কাজ করছেন তিনি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী লোহাগাড়া উপজেলার আমীর অধ্যাপক আসাদুল্লাহ ইসলামাবাদী বলেন, বিগত ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের শাসনামলে তাঁর সম্পর্কে জানার আমাদের তেমন কোন সুযোগ ছিল না। ৫ আগস্ট পরবর্তী তাঁর সাথে সরাসরি যোগাযোগ ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রম দেখার সুযোগ হয়েছে। স্বল্প এই সময়ে যতটুকু অবলোকন করেছি তিনি একজন দক্ষ, চৌকস ও কর্মঠ প্রশাসক।
লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাজ্জাদুর রহমান বলেন, সরকারের একজন দায়িত্বশীল প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে ইউএনও মুহাম্মদ ইনামুল হাছান অসাধারণ একজন মানুষ। সরকারের অর্পিত প্রতিটি দায়িত্ব পেশাদারিত্বের সাথে সঠিকভাবে পালন করছেন। তাঁর সততা কর্মদক্ষতায় উপজেলা পরিষদের সরকারি-বেসরকারি কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা ফিরে আসতে শুরু করেছে। ফলে জনভোগান্তি কমে গিয়ে বেড়েছে জনসেবার মান।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইনামুল হাছান বলেন, যোগদানের পর থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি লোহাগাড়া উপজেলাকে একটি মডেল উপজেলায় রূপান্তর করতে। জেলা প্রশাসকের তত্বাবধানে সরকারের সকল কর্মকান্ড সুন্দরভাবে পালন করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি, যেন সরকারের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন থাকে। এছাড়াও উপজেলার সকল দপ্তরে সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে সচ্ছতার সাথে নাগরিকসেবা নিশ্চিত করার চেষ্ঠা করছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর সকলের জন্য উন্মুক্ত রেখেছি। উপজেলাবাসীর আন্তরিক সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে লোহাগাড়ার উন্নয়নে আমার কর্মধারা অব্যাহত রাখতে পারব।