ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | মেজর সিনহার বোনের আবেদন খারিজ

মেজর সিনহার বোনের আবেদন খারিজ

নিউজ ডেক্স : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেনকে আসামি করার আবেদন খারিজ করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে এ আবেদন করেন সিনহার বড়বোন ও সিনহা হত্যা মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। আবেদনটি আমলে নিয়ে শুনানি শেষে না খারিজ করে দেন বিচারক। একই সঙ্গে আবেদনটি নামঞ্জুর করার একটি পর্যালোচনাও (অবজারভেশন) দিয়েছেন বিচারক তামান্না ফারাহ। এমনটি জানিয়েছেন জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, মেজর সিনহা হত্যা মামলার তদন্তকাজে ব্যাঘাত সৃৃষ্টি করেই চলেছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। তিনি সিনহা হত্যা মামলার আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকতকে কারাগারে ডিভিশন দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন। আসামিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তিনি। অর্থাৎ এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন তার দাফতরিক কার্যক্ষমতা আসামিদের পক্ষে কাজে লাগাচ্ছেন। তাকে মেজর সিনহার হত্যা মামলার আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি ফৌজদারি আবেদন করেছি। সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার স্বার্থে তাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছি আমরা।

মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন ঘটনার শুরু থেকেই আসামিদের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। মেজর সিনহার মানহানি করেছেন। ঘটনার পরদিন তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, মেজর সিনহার গাড়িতে তিনি ইয়াবা ও মাদকদ্রব্য পেয়েছিলেন। একজন পুলিশ সুপার হিসেবে তিনি এটি বলতে পারেন না। তিনি তদন্তকাজে প্রতিনিয়ত বাধা সৃষ্টি করে চলেছেন।

মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস আদালতে ১০টি অভিযোগ এনে নতুন করে আবেদন দেন। সেসব অভিযোগগুলো হলো

১. অবমাননাকর প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন।

২. গুরুত্বপূর্ণ অফিসে ক্ষমতাসমূহ অপব্যবহার।

৩. হত্যার পর পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতকে মামলার দায়ভার থেকে মুক্তি পাওয়ার পন্থাসমূহ শিখিয়ে দেয়া।

৪. আহত অবস্থায় মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে চিকিৎসা প্রদানে অনীহা ও কোনো ভূমিকা না রাখা।

৫. পুলিশের মামলার সাক্ষীদের আসামি করে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করার পর অজ্ঞাতনামা অপহরণ মামলা দায়ের করা।

৬. এই মামলার আসামি প্রদীপ কুমার দাশকে মেডিকেল ছুটি দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া।

৭. আসামি প্রদীপ দাশকে কারাগারে ডিভিশন দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া।

৮. আসামি প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে কারা ছিল, র‌্যাব তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে আসামি পাঠাতে গড়িমসি করে জটিলতা সৃষ্টি করা, সংশ্লিষ্ট অনেককে অন্যত্র বদলি করে দেয়া।

৯. এই মামলার ঘটনার পর পুলিশের করা মিথ্যা মামলা অনুযায়ী মিডিয়ায় আসামিদের পক্ষে বক্তব্য প্রদান করে নিহত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে একজন মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে বক্তব্য প্রচার করে মানহানি।

১০. ঘটনার পর পাশে লিখিত আসামি (এবিএম মাসুদ হোসেন) মিডিয়াকে মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে শামলাপুরের লোকজন গাড়ির আরোহীদের ডাকাত সন্দেহ করে খবর দেন। এই সময়ে তল্লাশি চেকপোস্টে গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু মিথ্যাভাবে বলেন যে, গাড়ির আরোহী পিস্তল বের করে পুলিশকে গুলি করার চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়। আরও জানান যে, গাড়িটি তল্লাশি করে ৫০টি ইয়াবা বড়ি, কিছু গাঁজা, দুটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করে, যা আদৌ সত্য নয়। এতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের অবমাননাকর বিধায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন।

পুলিশ সুপারকে আসামি করার কারণ সম্পর্কে শারমিন ফেরদৌস বলেন, কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে মামলার আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আদালতের কাছে আমার প্রত্যাশা, এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসপি মাসুদকে মামলার আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করবেন।

কক্সবাজার আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার মেজর সিনহা হত্যা মামলার কার্যদিন ছিল না। কিন্তু মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া কয়েকটি যুক্তি উপস্থাপন করে একটি আবেদন করেছেন, কক্সবাজারের এসপিকে সিনহা হত্যা মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার। শুনানির পর আবেদনটি খারিজ করে একটি অবজারভেশন দিয়েছেন বিচারক তামান্না ফারাহ। তা হলো- মামলা তদন্তকালে কেউ হস্তক্ষেপ কিংবা প্রভাব বিস্তার করলে ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার মামলার তদন্ত কর্মকর্তার রয়েছে। তাই আবেদনটি আমলে নেয়া হয়নি।

গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা। এ সময় সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আটক করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে আটক করা হয়। দুজনই বর্তমানে জামিনে মুক্ত।

এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষে টেকনাফ মডেল থানায় দুটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় সিনহাকে আসামি করা হয়। পরে সিনহার বোনের করা মামলায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতসহ নয় পুলিশকে আসামি করা হয়। এরপর ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। একজন এসআই ও একজন কনস্টেবল পলাতক।

এ পর্যন্ত মামলায় ১২ আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে অন্যতম অভিযুক্ত ওসি প্রদীপ সর্বোচ্চ ১৫ দিন রিমান্ডে থাকলেও জবানবন্দি দেননি। তারা সবাই কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছেন। জাগো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!