Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | সেনা মোতায়েন পেছানোর সিদ্ধান্ত দুঃখজনক : হাফিজ

সেনা মোতায়েন পেছানোর সিদ্ধান্ত দুঃখজনক : হাফিজ

1c519_169977

নিউজ ডেক্স : নির্বাচন কমিশনের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে সাড়া পাননি অভিযোগ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে ১৫ তারিখ (১৫ ডিসেম্বর) এটাই আমরা জানতাম, পত্রিকায়ও তাই এসেছে। আজকে শুনলাম ১০ দিন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ কী? কারণ হলো-বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের পিটিয়ে সাইজ করা। এলাকায় আতঙ্ক ছড়ানো, যাতে করে তারা এলাকা ত্যাগ করে।’

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই নেতারা আগাম জামিন চাইতে এসে ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গত কয়েকমাস ধরে। অনেক নেতাকর্মী প্রাণভয়ে একবছর ধরে এলাকায় যেতে পারে না। যেখানে নেতাকর্মী থেকে শুরু করে নির্বাচনের প্রার্থীদের ওপর এত অত্যাচার নির্যাতন, সেখানে সেনা মোতায়েন ১০ দিন পিছিয়ে দেয়ার মাজেজা কী? এটা অত্যন্ত দুঃখ জনক।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেশের মানবাধিকার গণতন্ত্র নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষের প্রতিটি অধিকার প্রতিদিনই পদদলিত হচ্ছে।’

৬ বছর এলাকায় যেতে পারেন না বলে জানান বিএনপির এই নেতা। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ভোলা-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। অতীতে ছয়বার এই এলাকা থেকে জনগণ আমাকে নির্বাচিত করে জাতীয় সংসদে পাঠিয়েছে। ৯১-এর নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করে জাতীয় সংসদে পাঠিয়েছে। কিন্তু গত ছয় বছর এলাকায় যেতে পারিনি। পত্র-পত্রিকায় নানা কথা লেখা হয়। কেন যেতে পারিনি, আজকে যে কথা বলবো, সেটা শুনলে আপনারা বুঝতে পারবেন।’

হাফিজ বলেন, ‘আমার সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এলাকার মানুষের সঙ্গে সম্পূর্ণ অপরিচিত এক ব্যক্তি। তিনি ইব্রাহিম, মালিবাগ মার্ডারে অভিযুক্ত আসামি। যেহেতু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তাই হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয় না, হবেও না। আমার নির্বাচনী এলাকার ৪০০ জন নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। গত ১৫ দিন ধরে হাইকোর্টে চক্কর খাচ্ছি। কখনও ৫০, কখনও ২০ এইভাবে আগাম জামিন মঞ্জুর হয়। অবশেষে গতকাল আমার নির্বাচনী এলাকায় যাবার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।’

‘আমাদেরকে লঞ্চে করে যেতে হয়। চার লঞ্চে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আমার সফরসঙ্গীরা লঞ্চে উঠে গিয়েছেন। আমি বাসা থেকে আগেই বেরিয়ে এসেছি। ৮টায় লঞ্চ ছাড়বে। ৬টা ২০ মিনিটে আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ লঞ্চ টার্মিনালটি দখল করে নেয়। লঞ্চে প্রবেশ করে আমার প্রায় ৫০ জন কর্মীকে মারাত্মকভাবে আহত করে। তারা এই এলাকাতেই আশাপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।’

‘টার্মিনালের প্রবেশে পথে তারা ২০০ জন মাস্তান, কারও হাতে অস্ত্র, কারও হাতে হকিস্টিক, কারও হাতে পিস্তল-এগুলো নিয়ে তারা গোটা টার্মিনাল ঘিরে রেখেছে যাতে আমি লঞ্চে উঠতে না পারি। স্লোগান দিচ্ছে, যে স্লোগান প্রতিদিনই আপনার শুনতে পারেন। আমার বিরুদ্ধে স্লোগান হচ্ছে। টার্মিনালটি সম্পূর্ণ জনশূন্য হয়ে পড়ে তাদের অত্যাচারে। যাত্রীরা দিগ্বিদিক ছুটে পড়ে এবং লঞ্চটিকে তারা বাধ্য করে সারেংকে নদীর মধ্যে নিয়ে যেতে। এ কারণে আমি লঞ্চে উঠতে পারিনি, আমার নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারিনি’-যোগ করেন হাফিজ।

ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এলাকায় আমাকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য ৪০ হাজার লোক সমবেত হয়েছিল, তারা জানতে পেরেছে-আমি লঞ্চে উঠতে পারিনি, তারা কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেছে। এই হলো বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চিত্র। এখানে একজন প্রার্থী হয়ে আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারছি না। আমি একজন সিনিয়র সিটিজেন, ৭৪ বছর বয়স। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে, একজন গণতান্ত্রিক দলের কর্মী হিসেবে সন্ত্রাসীদের কাছে আমার কোনো মূল্য নেই।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমি চিঠি দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানিয়েছিলাম, নিরাপত্তা প্রদানের জন্য, কিন্তু তাদের তরফ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। আমরা নির্বাচনী এলাকায় এই মুহূর্তে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার ৪০০ সন্ত্রাসী সেখানে অবস্থান করছে। প্রকাশ্যে তারা মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাতে তাদের অস্ত্র। বিএনপি সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা হুমকি দিচ্ছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!