নিউজ ডেক্স : সাতকানিয়া উপজেলার চরখাগরিয়া গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জনসমাদৃত দিবসকে ঘিরে এখান থেকে সারাদেশে অর্ধকোটি টাকার ফুল রপ্তানি হয়ে থাকে বলে চাষিরা জানান। গত একযুগ ধরে এই গ্রামে ফুল চাষের আবাদ হয়ে আসছে। ফুল চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে স্থানীয় অর্ধশতাধিক পরিবার। ফুল চাষে একদিকে চাষিদের ভাগ্যের পরিবর্তন যেমন হচ্ছে, তেমনি ফুল তোলা ও মালা গাঁথার কাজ করে শত শত শিশু, নারী ও পুরুষ বাড়তি অর্থ উপার্জন করছে।
গত বুধবার উপজেলার চরখাগরিয়া গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, চাষির বাড়ির আশেপাশে কোথাও এক ইঞ্চি জায়গাও খালি নাই। বাড়ির আঙিনাসহ বিশাল বিলজুড়ে ফুল চাষ করা হয়েছে গ্লাডিয়াস, বিভিন্ন রকম গোলাপ, গাঁদা, ইন্ডিয়ান খাঁসি গাঁদা, চায়না বেলি, জবা, বোতাম, জিপসি, গোলাচী, ডালিয়াসহ নানান প্রজাতের ফুল। প্রস্ফূটিত ফুল দেখে ও ফুলের সুগন্ধে মনটা ভরে উঠে। যত দূর চোখ যায়, শুধুই নানা রকমের ফুল আর ফুল। সড়কের দুই পাশে লাগানো স্টার ফুল যেন পথচারীদের পথচলার ক্লান্তি যেন দূর করে দেয়। ফুল বাগানের ফুল তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা। দল বেঁধে একঝাঁক শিশু গাঁদা ফুল তুলে বস্তাভর্তি করে যাচ্ছে। এসময় কথা হয় খাগরিয়া খাদিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ইয়াছমিন আক্তার ও রসুলপুর মাদ্রাসার ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী জুমু আক্তারের সঙ্গে । তারা জানান, স্কুল ও মাদ্রাসা শেষ করে এসে পরিবারকে একটু সহযোগিতা করতে প্রতিদিন তারা কয়েক জন দল বেঁধে বস্তা নিয়ে ফুল তুলতে আসে। প্রতি বস্তায় ফুল ভরে ১০০ মালা তৈরি করে দিলে মজুরি হিসাবে পায় ৬০ টাকা। এভাবে শিশুগুলোর দৈনিক আয় ১২০-১৮০ টাকা। এই সামান্য টাকাই বড় জোগান হয়ে উঠে দরিদ্র পরিবারে। ফুলসহ সবকিছুর দাম বাড়লেও বাড়েনি এসব ফুল তোলা কাজের শিশুদের মজুরি।
গাঁদা ফুল চাষি মোহাম্মদ রিদুয়ান জানান, আমি এক সময় সবজি চাষ করতাম। সবজিতে লাভের মুখ না দেখে ঝুঁকে পড়েছি ফুল চাষে। ৪০ শতক জমিতে ফুল চাষ করেছি। ফুল চাষ করে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাভ থাকবে। গ্রামের কয়েক জন ফুল চাষি জানালেন, এই গ্রামে অনেকে ফুল চাষ করে চট্টগ্রাম শহরে ফুলের দোকানও গড়ে তুলেছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে ফুল চাষিদের উত্পাদিত ফুল ক্রয় করে প্রতিদিন নিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ ফুল সরবরাহ করে হাজার হাজার টাকা আয় করছে। এখানে গ্ল্যাডিয়াস ফুল সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে। গ্ল্যাডিয়াস প্রতি পিস পাইকারি দরে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।
ফুল চাষি কামাল উদ্দিন জানান, বিগত দিনে এখানে প্রচুর সবজি চাষ হতো। এখন সবাই ঝুঁকে পড়েছেন ফুল চাষের দিকে। তিনি ৬০ শতক জমিতে গ্ল্যাডিয়াস ফুল ও ২০ শতক জমিতে গাঁদা ফুল চাষ করেছেন। দুই বাগান করতে তার খরচ হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। বাগানের সব ফুল বিক্রি করতে পারলে তার আয় হবে ৩ লক্ষ টাকা।
দেশে সারা বছরই ফুলের চাহিদা রয়েছে। তবে বছরের বিভিন্ন দিবসের মধ্যে ১৪ ফেব্রুয়ারি ও ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষকে ঘিরে ফুলের চাহিদা অনেক গুণ বেড়েছে। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রামে প্রচুর পরিমাণ ফুল চাষ হয়ে আসলেও উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে ফুল চাষিদের প্রতি কোনো নির্দেশনা প্রদান করা হয় না। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে উত্পাদিত ফুল বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব বলে অনেক ফুল চাষি জানিয়েছেন।
সাতকানিয়া উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন ও এস. এম. জহির বলেন, ফুল চাষ করে চরখাগরিয়ার কৃষকরা প্রচুর সফলতা পেয়েছেন। ওই গ্রামে জনপ্রিয় উঠেছে ফুল চাষ। -ইত্তেফাক