এলনিউজ২৪ডটকম : লোহাগাড়ার নেয়াজের পাড়ায় ১৯৯১ সালে জনতা শাহ্পীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার প্রায় এক বছরের মাথায় বিদ্যালয় ভবনের সামনের প্রায় দুই শতক জমি নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। ফলে ওই বিরোধের কারণেই দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি দীর্ঘ ২৮ বছর পর লোহাগাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদ্মাসন সিংহ’র মধ্যস্থতায় বিদ্যালয়টি ফিরে পেল তার জমি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে এলাকার ছয়জন ব্যক্তি ৩৩ শতক জমি দান করে জনতা শাহ্পীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অল্প দিনের মধ্যে বিদ্যালয়ের সামনের প্রায় দুই শতক জমি নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। ওই বিরোধ মীমাংসার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকার মুরব্বি, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তারপরও বিরোধ মিমাংসা করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে বিদ্যালয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা যায়নি। এতে বিদ্যলয়টি ছিল অরক্ষিত। তবে উপজেলা শিক্ষা অফিসের চেষ্টায় ও লোহাগাড়ার সহকারী কমিশানারের (ভূমি) মধ্যস্থতায় কয়েক দফা বৈঠকের মাধ্যমে দীর্ঘ ২৮ বছর পর বিদ্যালয়টি তার জমি ফিরে পেয়েছে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজল কান্তি শীল বলেন, স্থানীয় জান বকসু গং ও আবদুল বারীসহ কয়েকজনের সঙ্গে বিদ্যলয়ের জায়গা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ওই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালানো হয়েছে। তারপরও নিষ্পত্তি হয়নি। এতে বিদ্যালয়ের সীমানা নির্ধারণসহ দেয়াল নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এতে বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে গরু-ছাগলসহ যে কোনো ব্যক্তি অনায়াসে ঢুকে যেত। তাছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ অরক্ষিত ছিল। এখন বিরোধ মীমাংসা হওয়ায় বিদ্যালয় তার জমি ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি দেয়াল নির্মাণের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা করা যাবে।
আবদুল বারী বলেন, আমরা না বুঝেই এতদিন বিদ্যালয়ের জমিটি দখলে রাখার চেষ্টা করেছিলাম। এসি ল্যান্ড, শিক্ষা কর্মকর্তা সহ কয়েকজন আমাদের বুঝানোর পর জমিটি বিদ্যালয়কে ফেরত দিয়েছি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, জমি নিয়ে বিরোধের বিষয়টি মীমাংসার জন্য অনেক দেনদরবারসহ টাকা খরচ করা হয়েছে। এতে কোনো কাজ হয়নি। তবে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও এসি ল্যান্ড সাহেবের চেষ্টা ও মধ্যস্থতায় বিষয়টি দীর্ঘদিন পর আপোষ মীমাংসা হয়েছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকার লোকজন অত্যন্ত খুশি।
লোহাগাড়ার সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, বিদ্যালয়টি সড়কের পাশে হওয়ায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণের প্রয়োজন হয়। তবে জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় দীর্ঘ ২৮ বছর সীমানা প্রাচীন নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি সরকারি বরাদ্দে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করতে গেলে দাতা পক্ষের কয়েকজন বাঁধা দেন। বিষয়টি নিয়ে এসি ল্যান্ডের সহযোগিতা চাই। তিনি বিষয়টি নিয়ে বিরোধীয় জমির মালিক, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিসহ বিভিন্ন জনের সঙ্গে সমন্বয় করে কয়েক দফা বৈঠক করেন। এরপর তিনি বিদ্যালয়ের জমি ফিরে পাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
এ ব্যাপারে লোহাগাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদ্মাসন সিংহ বলেন, বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশের জন্য ওই জমিটুকু অবশ্যই দরকার ছিল। তাই বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে বিষয়টি আপোষ মীমাংসা করতে হয়েছে। এর ফলে বিদ্যালয়টি তার জমি ফিরে পেল। আর বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের পর এটি সুরক্ষিত হবে এবং শিক্ষার্থীরা একটি সুন্দর খেলার মাঠ পাবে।