ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | বেপরোয়া গতিতে চলছে যাত্রীবাহী পিকআপ : অকালে ঝরছে তাজা প্রাণ

বেপরোয়া গতিতে চলছে যাত্রীবাহী পিকআপ : অকালে ঝরছে তাজা প্রাণ

302

নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দেড়শ’ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বেপরোয়া গতিতে চলছে যাত্রীবাহী পিকআপ। এ গতির কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। অকালে ঝরে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। বেঁচে যাওয়া হাজারো মানুষকে পঙ্গুত্ববরণ করতে হচ্ছে। নম্বরবিহীন যাত্রীবাহী এসব পিকআপের অধিকাংশ চালকই অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর। কথিত এসব চালকদের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। কিশোর ও অদক্ষ ব্যক্তিদের হাতে চালকের দায়িত্ব থাকায় যাত্রীরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। মহাসড়কে চলাচলের জন্য যাত্রীবাহী এসব পিকআপের বৈধ কোনো কাগজ না থাকলেও পুলিশ প্রশাসন ম্যানেজ করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যাত্রীবাহী পিকআপ চলাচলে কর্ণফুলী, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া ও রামু এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে একাধিক সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পরিবহন শ্রমিক ও সরকার দলীয় সমর্থকরা। সিন্ডিকেটের নামে মহাসড়কে চলাচলরত এসব পরিবহন থেকে প্রতি মাসে চাঁদার নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গাড়ির মালিকরা। এ ছাড়া মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াতে যাত্রীবাহী পিকআপগুলো পুলিশের মামলা থেকে রেহাই পেতে প্রতি মাসে স্থানীয় ট্রাফিক, থানা ও হাইওয়ে পুলিশকে মাসোহারা দিতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিকআপের এক মালিক বলেন, আমাদের যাত্রীবাহী পিকআপ মহাসড়কে চালাতে গেলে পুলিশ প্রশাসনকে একাধিক স্থানে মাসোহারা দিতে হয়। মাসোহারা না দিলে গাড়ি থানায় ঢুকিয়ে দেয়। এ ছাড়া সমিতির নামে প্রতিদিন চাঁদা তো আছেই। চাঁদার নামে এসব টাকাও হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। বেপরোয়া গতির কারণে মহাসড়কে সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কিছু মানুষ হতাহত হয়। গত ২৫ মে চন্দনাইশ উপজেলার পাঠানীপুল এলাকায় যাত্রীবাহী পিকআপ, হানিফ ও মালবাহী পিকআপের ত্রিমুখী সংঘর্ষে বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তাহমিনা আক্তারসহ ৯ জন নিহত হয়। আহতদের অনেকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গত ৩ জুন দুপুরে মহাসড়কের কেরানীহাট এলাকায় যাত্রীবাহী পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে লোহাগাড়া মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এক শিক্ষার্থীসহ ৭ জন আহত হন।

কেরানীহাটে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট গোলাম হোসেন সবুজ জানান, যাত্রীবাহী পিকআপের অধিকাংশ চালকেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তাদের অদক্ষতা ও বেপরোয়া গতি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। অবৈধ যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। তবে জনবল সংকট ও ডাম্পিং ব্যবস্থা না থাকায় তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় ২০১৫ সালের ১ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে দেশের ২২টি মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। মহাসড়কে ৩ চাকার গাড়ি চলাচল বন্ধ ঘোষণা হলে এ জায়গা দখল করে নেয়, পিকআপ ভ্যান। মহাসড়কে চলাচলরত এসব যানবাহন রাস্তায় মাঝখানে যাত্রী ওঠানামা করানোয় বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। মহসড়কের স্টপেজগুলোতে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় ধরে যাত্রী নেয়ায় প্রতিনিয়ত লেগে যাচ্ছে যানজট। দায়িত্বরত ট্রাফিকরা চালকদের কাছ থেকে ১০-২০ টাকা হারে আদায় করে থাকেন।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়ক সরু হয়ে যাওয়ায় একটি গাড়ি অন্য গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে মূল সড়ক থেকে নেমে যায়। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এ ছাড়া অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানো সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

-ভোরের কাগজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!