ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | বিনা দোষে জেল খেটে বের হওয়া নারী দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে ঘিরে সন্দেহ

বিনা দোষে জেল খেটে বের হওয়া নারী দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে ঘিরে সন্দেহ

নিউজ ডেক্স : বিনা অপরাধে তিন বছর জেল খেটে বের হওয়ার মাত্র তের দিনের মাথায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন চট্টগ্রামের এক নারী। মিনু আক্তার নামে এই নারীর বিনা অপরাধে কারাভোগের ঘটনা বাংলাদেশে বেশ আলোচনার সৃষ্টি করেছিল।

গত ষোলই জুন আদালতের নির্দেশে তার মুক্তি হয়। আর আটাশে জুন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। কিন্তু ঘটনাটি নিছকই সড়ক দুর্ঘটনা কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নিহত নারীর পরিবারের সদস্য ও তার পক্ষের আইনজীবীরা।

পরিবারের পক্ষ থেকে তার আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, মাত্র ১৩ দিন আগে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। এতো দিন তো ভালই ছিলেন। হঠাৎ এমন কী হলো যে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন?

২০০৬ সালে এক গার্মেন্টস কর্মীকে হত্যার মামলায় বিনা দোষে তিন বছর কারাভোগ করেছিলেন মিনু আক্তার। এর পর চলতি বছর বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে তা স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়।

মি. মুরাদ বলেন, মিনু আক্তারের মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছেন তিনি। তারা জানিয়েছেন যে, মিনু আক্তারের ছেলে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। তাকে আনতেই ২৮শে জুন দিনের বেলা বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আর ফেরেননি তিনি।

মি. মুরাদ বলেন, “তার মৃত্যু রহস্যজনক। তার তো মেইনরোডে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। সে ওই খানে কিভাবে গেলো?” “তার পরিবারের লোকজন বলছে যে, ৫ দিন পরে গিয়ে পুলিশ তাদেরকে জানিয়েছে যে মিনু আক্তার মারা গেছে।”

তার অভিযোগ, মিনু আক্তারের মৃত্যুর পর দিনই তার লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে পুলিশ। কিন্তু তার বিনা অপরাধে জেল খাটা এবং স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রচারের কারণে বেশ পরিচিত মুখ ছিলেন মিনু আক্তার। তার লাশ কিভাবে বেওয়ারিশ হয় সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন এই আইনজীবী।

এদিকে পুলিশ বলছে, মিনু আক্তার সড়ক দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবেই মারা গেছেন। তার শরীরে দুর্ঘটনা ছাড়া অন্য কোন আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

চট্টগ্রামের বায়োজিদ বোস্তামী থানার এসআই খোরশেদ আলম জানান, গত ২৮শে জুন রাতের পেট্রোলে ছিলেন একই থানার আরেক এসআই মোহাম্মদ নূরনবী। তিনি প্রায় রাত সাড়ে চার টার দিকে খবর পান যে, ফৌজদারহাট সংযোগ সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় এক নারী নিহত হয়েছেন। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীর লাশ দেখতে পান।

তিনি বলেন, “গাড়ি ধাক্কা দিলে যে ধরণের আঘাত থাকে সেরকমের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া তার শরীরে অন্য কোন আঘাত নেই।” “আঘাতের চিহ্ন দেখে মনে হচ্ছে যে, গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়ার পর টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গেছে। সেরকমের চিহ্ন রয়েছে।” পরে তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।

পুলিশের দাবি, ২৯শে জুন পর্যন্ত তার কোন পরিচয় না পাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে তার লাশ দাফন করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন এসআই খোরশেদ আলম। পরে তদন্তের এক পর্যায়ে তারা জানতে পারেন যে, তার নাম মিনু আক্তার, যিনি একটি মামলায় আসামী না হয়েও তিন বছর জেল খেটেছেন।নিহত মিনুর ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেন তার ভাই।

এসআই মি. আলম জানান, মিনুর বাবা-মা কেউ নাই। তবে তার এক ভাই আছে। স্বামী না থাকলেও দুই ছেলে রয়েছে মিনুর। তিনি বলেন, মিনু আসলে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে জানতে পেরেছেন তারা। মিনু আক্তারের পরিবারের পক্ষের আইনজীবী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আসামী না হয়েও তিন বছর কারাগারে

গোলাম মাওলা মুরাদ জানান, ২০০৬ সালে এক গার্মেন্টসকর্মীকে হত্যার ঘটনায় ২০১৭ সালে কুলসুমী নামে এক নারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরে ওই মামলায় মিনু আক্তারকে থানায় আত্মসমর্পণ দেখানো হয়। এতে তিন বছর জেলও খেটেছেন তিনি।

এ ঘটনা জানতে পেরে আদালতে ঘটনাটি গত ২২শে মার্চ উত্থাপন করেন আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ। “আমরা মানবিক কারণে আদালতকে অবহিত করি যে, যে জেল খাটছেন তিনি কুলসুমী আক্তার নন।”

তিনি বলেন, ওই নারীর তিন সন্তান এতিমখানায় বড় হচ্ছে জানতে পেরে এই ঘটনা আদালতে উত্থাপন করি আমরা। ওই হত্যা মামলায় এর আগে কুলসুমীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং তিনি কিছুদিন জেলও খেটেছেন।

তার ছবি জেলখানার বন্দীদের তালিকায় আছে, যে ছবির সাথে মিনু আক্তারের চেহারার কোন মিল নেই, বলছিলেন মি. মুরাদ। পরে তদন্তের ভিত্তিতে গত ১৬ই জুন মিনু আক্তারকে নির্দোষ পেয়ে তাকে মুক্তি দেয়ার আদেশ দেন আদালত।

একই সাথে তাকে যে আইনজীবীরা থানায় আত্মসমর্পণ দেখিয়েছিলেন তাদেরকেও তলব করেন আদালত। ওই ঘটনায় এখনো তদন্ত চলছে বলে জানান মি. মুরাদ। “কী হইলো, কিভাবে সে মারা গেলো, এই বিষয়টাই অস্বাভাবিক লাগছে,” বলেন মি. মুরাদ। -বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!