Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | বড় জাহাজ ভিড়বে চট্টগ্রাম বন্দরে

বড় জাহাজ ভিড়বে চট্টগ্রাম বন্দরে

নিউজ ডেক্স : অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে বড় জাহাজ ভিড়ানোর কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। বিদেশি একটি সংস্থার প্রণীত সমীক্ষা রিপোর্টের পর ২০০ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে ট্রায়াল রান সম্পন্ন করা হবে। ট্রায়াল রানের পর বন্দরে বড় জাহাজ বার্থিং দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি পণ্য পরিবহন খাতে সাশ্রয় হবে কোটি কোটি ডলার।

সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে বর্তমানে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফট এবং ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়তে পারে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে বন্দরে উপরোক্ত ড্রাফট ও লেংথের জাহাজ নোঙর করে। এর আগে বন্দরে আরো ছোট জাহাজ ভিড়ত। অপেক্ষাকৃত ছোট জাহাজ ভিড়লে পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে যায়।

আবার বিশ্বের শিপিং সেক্টরের অনেক জাহাজই বন্দরে আসতে পারে না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে শিপিং ব্যবসা এবং আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে জড়িতরা দীর্ঘদিন ধরে বন্দরের লেংথ ও ড্রাফট বাড়ানোর ব্যাপারে দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ সুনিশ্চিত না হয়ে হুট করে ড্রাফট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞ একটি সংস্থার মাধ্যমে সমীক্ষা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের আলোকে লন্ডনের এইচআর ওয়েলিং পোর্ট নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে কর্ণফুলী নদী এবং বন্দর চ্যানেলে গবেষণার দায়িত্ব দেয়। তারা তিনটি বিষয় নিয়ে গবেষণা চালায়। বর্তমানে চ্যানেলের যে অবস্থা এবং জেটি যেভাবে রয়েছে তাতে বন্দরে ঠিক কত ড্রাফট এবং লেংথের জাহাজ ভিড়ানো যায়, বন্দরের দুই তীরের কী পরিমাণ জায়গা জেটি বা ইয়ার্ড সম্প্রসারণ কাজে ব্যবহার করা যায় এবং কোন বিশেষ পদক্ষেপ নিলে বন্দরে সর্বোচ্চ কত ড্রাফট এবং লেংথের জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হবে।

এক বছরের বেশি সময় ধরে উক্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দরে সমীক্ষা পরিচালনা করে। গত এপ্রিল মাসে তারা প্রাথমিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেছিল। সম্প্রতি তারা চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছে। রিপোর্টে সংস্থাটি বন্দর চ্যানেল, কর্ণফুলী নদী এবং বন্দর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য- উপাত্ত উপস্থাপন করে। এতে বলা হয়, বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দরে এখনই ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার লেংথের জাহাজ ভিড়ানো যাবে।

তবে বহির্নোঙর ও গুপ্তাখালের সন্নিকটের বাঁকে কিছুটা কাজ করে নদীর দুয়েকটি পয়েন্টে ড্রেজিং করলে বন্দর চ্যানেলে ২২৫ মিটার লেংথের ১১ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো যাবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান যে রিপোর্ট প্রদান করেছে তার প্রেক্ষিতে আমরা সপ্তাহখানেকের মধ্যে ট্রায়াল রান চালাব। এই রানে সফল হলে আমরা বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলোকে বড় জাহাজ পাঠানোর জন্য বলব। তখন বড় জাহাজ এলে বার্থিং দেব।

একটি সূত্র জানায়, বন্দরের ১৮টি জেটিতে একই ড্রাফট থাকবে না। নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালে (সিসিটি) ১০ মিটার ড্রাফট দেয়া সম্ভব হবে। এছাড়া জেনারেল কার্গো বার্থের (জিসিবি) কয়েকটিতে ড্রাফট বাড়ানো যাবে। বন্দরের জিসিবির ২ থেকে ৮ নম্বর জেটিতে বর্তমানে সাড়ে আট মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়ানো যায়। সেখানে ড্রাফট কিছুটা বাড়ানো গেলেও ১০ মিটার করা যাবে বলে মনে হয় না। তবে ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটিতে ড্রাফট ১০ মিটার করা সম্ভব হবে। বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, জিসিবির ৬টি জেটিতে কন্টেনার জাহাজ ভিড়ে। সেখানে ১০ মিটার ড্রাফট করা সম্ভব হবে।

২০০ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ বন্দরে ভিড়ানো সম্ভব হলে কন্টেনার পরিবহনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে সক্ষম ১৯০ মিটার লম্বা এবং সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের একটি কন্টেনার জাহাজ সর্বোচ্চ ১৬শ থেকে ১৭শ টিইইউএস কন্টেনার পরিবহন করতে পারে। ২০০ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজে ২৭শ-২৮শ টিইইউএস কন্টেনার পরিবহন করা সম্ভব হবে। এতে প্রায় একই খরচে অনেক বেশি কন্টেনার পরিবহন করা হবে, যা বন্দরের কন্টেনার পরিবহন এবং হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু ইতিবাচক প্রভাব নয়, আর্থিকভাবেও কোটি কোটি ডলার সাশ্রয় হবে।

রিপোর্ট পাওয়ার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার আরিফুর রহমান বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ট্রায়াল রানের পর বড় জাহাজ ভিড়ানোর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। -আজাদী প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!