ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | পাইকারি-খুচরা বিক্রেতাদের কারসাজিতে সয়াবিন তেল সংকট!

পাইকারি-খুচরা বিক্রেতাদের কারসাজিতে সয়াবিন তেল সংকট!

*দাম ঠেকেছে ২০০ টাকায়
*কোম্পানি তেল দিচ্ছে না—অভিযোগ পাইকারদের
*পাইকারি-খুচরা বিক্রেতাদের কারসাজি, বলছে কোম্পানি
*সরকারি নজরদারি বাড়ানোর দাবি ভোক্তাদের

নিউজ ডেক্স : রাজধানীর অনেক মুদি দোকানে মিলছে না সয়াবিন তেল। যেসব দোকানে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে, তা বাড়তি দামে নিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সুযোগ বুঝে ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন বিক্রেতারা। শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারেও সয়াবিন তেলের সংকটের খবর পাওয়া গেছে। কদিন ধরে এ সংকট শুরু হয়েছে, যা এখন প্রকট। ফলে অনেক দোকানে এখন প্রতি লিটার তেলের দাম হাঁকা হচ্ছে ২০০ টাকা পর্যন্ত।

ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি তেলের বাজার মৌলভীবাজারেও সংকট। সেখানে তেল কিনতে গিয়ে ফিরে আসছেন খুচরা ক্রেতারা। কারও কাছে সয়াবিন থাকলেও সেটা গোপনে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

পাইকারি বিক্রেতাদের অভিযোগ, সয়াবিন সরবরাহকারী কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের তেল দিচ্ছে না। ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) ওঠাতে পারছেন না তারা। কোম্পানিগুলো তেল সরবরাহ বন্ধ রাখায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

তবে দেশে সয়াবিন তেল সরবরাহকারী বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা আগের মতো প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল সরবরাহ করছে। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা রমজান সামনে রেখে সয়াবিন মজুত করছেন। এজন্য বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে।

রাজধানীর মৌলভীবাজারের বড় তেল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ভুট্টো। তিনি বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি।

মোহাম্মদ আলী ভুট্টো বলেন, ‘এই বাজারে (মৌলভীবাজার) সয়াবিন তেল নেই। সব কোম্পানি মিল থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। নিজস্ব ডিস্ট্রিবিউশন সেল থেকেও তেল দিচ্ছে না। এ কারণে বাজারে খুচরা ও বোতলজাত উভয় তেলের সংকট।’

কোম্পানি সয়াবিন তেল সরবরাহ না করার কারণে সম্পর্কে তিনি বলেন বলেন, ‘তারা (কোম্পানি) বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছে। মেঘনা গ্রুপ বলছে, জাহাজ বন্দরে পৌঁছেনি। সিটি গ্রুপ বাড়তি চাপের কথা বলছে। টিকে গ্রুপসহ অন্যরা তাদের কাছে সয়াবিন নেই বলে জানাচ্ছে।’

তবে মেঘনা ও সিটি গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন উল্টো কথা। তাদের দাবি, মিল থেকে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। আমাদের এখানে কোনো সংকট নেই। পাইকারি বিক্রেতারা রমজান সামনে রেখে সয়াবিন মজুত করছেন, এজন্য সংকট চলছে।

সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘আমাদের কাছে তো তেল রয়েছে। প্রতিদিন মিলগেট থেকে দুই হাজার টন তেল সরবরাহ করছি। আগেও একই পরিমাণ তেল ডেলিভারি দেওয়া হতো। এটা কন্টিনিউ (অব্যাহত) রয়েছে, সংকট তো এখানে না।’

ডিস্ট্রিবিউশন সেল থেকে তেল দেওয়া হচ্ছে না, পাইকারি ক্রেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোথাও তেলের কোনো সংকট নেই। সবকিছু আগের মতোই চলছে।’

jagonews24

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেঘনা গ্রুপের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ‘সয়াবিনের সংকট’ নেই বলে দাবি করছেন। তিনি বলেন, ‘পাইকারি ব্যবসায়ীরা রমজানের আগে সয়াবিন মজুত করছেন। সংকটটা আসলে সেই কারণে সৃষ্টি হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ কৃত্রিম সংকট। খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট এটা করছে। তারা রোজার আগে বাজার অস্থিতিশীল করতে চায়।’

এদিকে বুধবার (২ মার্চ) রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানি জানান, সয়াবিন তেল নেই। সেগুনবাগিচা বাজারের সিটি করপোরেশন কমপ্লেক্সের মধ্যে ৭-৮টি দোকানে তেল বিক্রি হয়। সেখানে আজ একটি দোকানে খোলা সুপার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে। এই সুপার সয়াবিন লিটারপ্রতি ১৮০ টাকা। অন্য দু-একটি দোকানে বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা লিটার।

সাদ্দাম জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন বলেন, ‘কোম্পানি মাল (তেল) দেয় না। বাজারে সয়াবিনের কোনো কোম্পানির গাড়ি আজ এখনো আসেনি। সকালে ফ্রেশ তেলের এক এসআর (বিক্রয় প্রতিনিধি) এসেছিলেন। তিনি জানিয়ে গেলেন, সয়াবিন নেই।’

মুহিন জেনারেল স্টোরে বিক্রি হচ্ছে সুপার সয়াবিন। দোকানের বিক্রেতা নীরব হোসেন বলেন, ‘এ তেল (সুপার সয়াবিন) ১৭০ টাকা লিটার কেনা পড়ছে। আমরা রাজধানীর মৌলভীবাজার থেকে এ দামে কিনেছি। সেটা ১৭৫-১৮০ টাকায় বিক্রি করছি।’

সেগুনবাগিচা বাজারের সিটি করপোরেশন কমপ্লেক্সের কিছুটা দূরে আগোরার সুপারশপ রয়েছে। সেখানে সয়াবিনের কোনো সংকট নেই। তবে ক্রেতারা বেশি বেশি কেনায় তারা চাপে পড়ছেন।

সুপারশপের ফ্লোর সুপারভাইজার উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘বাইরের দোকানে সয়াবিন না পেয়ে অনেকে সুপারশপে আসছেন। অধিকাংশ ক্রেতা কয়েক বোতল করে সয়াবিন কিনছেন। ফলে বাড়তি একটা চাপ পড়ছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও সয়াবিনের লিটার ছিল ১১০ টাকা। সেটা এখন দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। সয়াবিনের বাজারে এমন অস্থিরতায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।

মিল মালিক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে নিয়ে মাথাব্যথা নেই ভোক্তাদের। তাদের অভিযোগ, সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের পকেট কাটছেন।

সফিউজ্জামান নামের এক ক্রেতা বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের বাইরে কোম্পানি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছেন। দু-এক টাকা করে বাড়াতে বাড়াতে দামটা এখন অস্বাভাবিক করে ফেলেছেন। জনগণকে বোকা বানাতে মাঝে মধ্যে সরকারের মন্ত্রীরা হুমকি-ধামকি দেন। কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।’

ফারুক আহম্মেদ নামে আরেকজন বলেন, ‘কদিন আগে আন্তর্জাতিক বাজারের হিসাব-নিকাশ দেখিয়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। এবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাজার অস্থিতিশীল বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব আমাদের সয়ে গেছে। এখন সবচেয়ে ভালো হয়, না খেয়ে থাকার অভ্যাস করা।’ -জাগো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!