ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | নীরব কেন সু চি?

নীরব কেন সু চি?

e85689e5a920bae0abf6dd78365ba658

নিউজ ডেক্স : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর যে অত্যাচার, নিপীড়ন চালানো হচ্ছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে সারা বিশ্বের মানুষ। রোহিঙ্গা সংকটে একটি নামই বার বার চলে আসছে, তিনি হলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সাং সু চি।

একটা সময় অনেকেই তাকে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বর্ণনা করতেন। তিনি যখন দীর্ঘসময় গৃহবন্দি ছিলেন তখন তার মুক্তির জন্য বিশ্বের মানুষ সরব ভূমিকা নিয়েছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে তিনি ছিলেন সম্মানীয় এবং পূজনীয় একজন ব্যক্তিত্ব। অনেকেই ভেবেছিলেন, সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে তার দল ক্ষমতায় আসলে দেশের পরিস্থিতি আমূল বদলে যাবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র জাতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারবে।

কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই উল্টো দিকে মোড় নেবে সেটা অনেকে ভাবতেই পারেননি। পশ্চিমা দেশ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে অং সান সু চি ছিলেন একবিংশ শতাব্দীর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক। সু চিকে তারা এমন একটি আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন, যেখানে খুব কম মানুষই স্থান পায়।

কিন্তু অং সান সু চির সমালোচনা এবং নিন্দায় এখন সরব হয়ে উঠেছে বিশ্ব। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের পর হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিজেদের বাড়ি-ঘর থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গত আট মাসে প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে গত ১০ দিনে এসেছে প্রায় ৯০ হাজার রোহিঙ্গা। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছেন সু চি।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে আছেন তিনি। তবে ঘরে এক ধরনের এবং বাইরে অন্য ধরনের চাপের মধ্যে আছেন তিনি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে অং সান সু চি এবং তার দল দু’দিক থেকেই সমস্যায় পড়েছে। এদিকে পশ্চিমা দুনিয়া, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনসহ সবাই অং সান সুচিকে লক্ষ্য করে সমালোচনায় মুখর হচ্ছে।

মিয়ানমারের ভেতরে রোহিঙ্গা বিরোধী তীব্র মনোভাব রয়েছে। তারা মনে করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে রাখাইনরা। তাদের একটা চাপ রয়েছে। কোনভাবেই রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথাবার্তা, আলোচনা বা এমন কিছু করা যাবে না যাতে রোহিঙ্গাদের সুবিধা হয়। সেখানে স্বার্থ দেখতে হলে রাখাইনদের স্বার্থই দেখতে হবে।

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জাতিগত ভাবে নির্মূল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে অং সান সু চিকে সরব হওয়ার আহবান জানিয়েছেন পাকিস্তানের নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজায়ী এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মিয়ানমার বিষয়ক দূত ইয়াংহি লি। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হবে বলে মনে হয় না।

রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে সু চির সরব না হওয়ার কারণ কী? এটা কী তার রাজনৈতিক দুর্বলতা নাকি রাজনৈতিক কৌশল? অনেকেই মনে করেন এটা তার রাজনৈতিক দুর্বলতা। বর্তমান সরকারে অং সান সু চির অবস্থান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্টেট কাউন্সিলর।

তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডি সরকার গঠন করলেও তার হাতে কর্তৃত্ব কম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সীমান্ত সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব সেনাবাহিনীর হাতে।

এমন অবস্থায় সু চির পক্ষে চাইলেও কিছু করা সম্ভব নয়। দেশের সংবিধান এমনভাবে করা হয়েছে যে, পার্লামেন্টে এক চতুর্থাংশ তাদের সদস্য থাকবে। এটা মেনেই অং সান সু চি নির্বাচন করতে হয়েছে এবং এটা পরিবর্তন করার কোন সম্ভাবনা নেই।

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সু চির দলের একটি অংশ মনে করে, তার উচিত সেনাবাহিনীর কাছে বিষয়গুলো জোরালো ভাবে তুলে ধরা।

রাখাইন রাজ্যের ভাগ্য নিয়ন্তা সেনাবাহিনী। তারা তাদের মতো করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে চাইছে। এখানে সু চির কথা কতটা গুরুত্ব পাবে তা নিয়ে সংশয় আছে।

নির্বাচনের আগে সু চির প্রতিশ্রুতি ছিল, তিনি গণতন্ত্রের পাশাপাশি সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করবেন। কিন্তু সু চি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি।

অন্যদিকে সেনাবাহিনীর একটি অংশ মনে করে, মিয়ানমারে নির্বাচন হলেও রাখাইন রাজ্যে তাদের কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে। তা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের সে অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!