ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | নগরের বিলুপ্ত ২১ খাল পুনরুদ্ধারের ঘোষণা

নগরের বিলুপ্ত ২১ খাল পুনরুদ্ধারের ঘোষণা

নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ওয়ার্ড অফিসে সরবরাহকৃত আসবাবপত্র নিম্নমানের অভিযোগ ওঠার পর তা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল অনুষ্ঠিত চসিকের বর্তমান পর্ষদের ১১তম সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। আন্দরকিল্লা নগর ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি নগরের বিলুপ্ত হওয়া ২১টি খাল পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দেন।

সভায় গৃহীত অন্য সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, নগরের বর্জ্য অপসারণ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চসিকের খসড়া চুক্তিপত্র প্রস্তুত করবে আইন শাখা। এক্ষেত্রে আইনগত দিকও খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া মোড়ক ও প্লাস্টিকের খালি বোতল বিষয়ে রিটার্ন পলিসি প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ, ঠিকাদার কর্তৃক সরবরাহকৃত মশার কীটনাশক আইইডিসিআর কর্তৃক পরীক্ষা করে ব্যবহার, সন্ধ্যার পর চসিকের সিএনজি না চালানো এবং যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে পরিবহন কেনার জন্য ঋণ দেয়া হয়েছে তাদের জ্বালানি সরবরাহ না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ১৮টি ওয়ার্ড অফিসে চেয়ার, টেবিল, আলমারি, কম্পিউটার, প্রিন্টারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরবরাহ করছে প্রকৌশল বিভাগ। গতকাল সাধারণ সভায় সরবরাহকৃত আসবাবপত্র নিম্নমানের বলে অভিযোগ করেন ১৩ নং পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী। এর প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত দেন মেয়র।

কাউন্সিলর মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পরপর ওয়ার্ড অফিসের জন্য বিভিন্ন আসবাবপত্রের রিকুইজেশন দিয়েছিলাম। কয়েকদিন আগে সেগুলো ডেলিভারি দিয়েছে। সেখানে ফার্নিচার বিশেষ করে চেয়ার নিম্নমানের ছিল। মেয়র মহোদয়কে সে অভিযোগ দিয়েছি।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেয়র কোনো সিদ্ধান্ত দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করতে বলেছেন। কমিটি যেগুলো নিম্নমানের সেগুলো ফেরত পাঠাবে। এছাড়া যেসব আসবাব সরবরাহ করার অপেক্ষায় ছিল তদন্ত কমিটির রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত সেগুলোর ডেলিভারি স্থগিত থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, দুই ধরনের চেয়ার আছে। একটি হাতওয়ালা, আরেকটি হাত ছাড়া। পাহাড়তলী ওয়ার্ডে হাত ছাড়া দেয়া হয়েছিল। সেটা নিয়ে আপত্তি করার পর আবার হাতওয়ালা চেয়ার সরবরাহ করা হয়।

৭ নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবরক আলী বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে বাসা-বাড়ির বর্জ্য অপসারণের বিষয়টি উপস্থাপনের পর মেয়র মহোদয় আইনগত দিক খতিয়ে দেখে খসড়া চুক্তি প্রণয়নে আইন শাখাকে দায়িত্ব দেন।

এদিকে সভায় ৩৩ নং ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব অভিযোগ করেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় সিডিএ অনেক খালে রিটেইনিং ওয়াল করছে। ওসব খালে আগে থেকে ব্রিজ-কালভার্ট রয়েছে। কিন্ত রিটেইনিং ওয়ালগুলো উঁচু করার কারণে ব্রিজগুলো নিচু হয়ে যাচ্ছে, যা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সিডিএর সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান মেয়র।

তেল চুরির ঘটনায় সম্প্রতি চসিকের দুই কর্মচারীকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বিষয়টি উল্লেখ করে তেল চুরির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র। তিনি বলেন, জ্বালানি অপচয় রোধ করতে হবে। সন্ধ্যার পর চসিকের কোনো টেঙি চলবে না। যে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে পরিবহন কেনার জন্য ঋণ দেয়া হয়েছে চসিক তার জ্বালানি সরবরাহ দেবে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কাউন্সিলর বলেন, চসিকের ট্যাঙ কালেক্টরদের মোটরসাইকেল দেয়া হয়েছে। তাদের জ্বালানিও সরবরাহ করা হয়। তাদের আর জ্বালানি সরবরাহ না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

মেয়র যা বললেন : সভায় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৫টি খাল খনন ও সম্প্রসারণ করলেও ২১টি খাল বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। সিএস খতিয়ানে এগুলোর অস্তিত্ব থাকলেও এখানে বহুতল ভবনসহ নানা ধরনের স্থাপনা রয়েছে। দখলকৃত এই খালগুলো চিহ্নিত করে এগুলো অবশ্যই পুনরুদ্ধার করা হবে এবং কাউন্সিলররা এই খালগুলো চিহ্নিত করবেন। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে খালগুলোর যেখানে বাঁধ বা দেয়াল আছে সেগুলো সিডিএর সাথে সমন্বয় করে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিরাপত্তা বলয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে প্রাণঘাতী কোনো বিপর্যয় না ঘটে।

তিনি বলেন, মশক নিধনে আলাদা ফোর্স করা হবে। এদের আলাদা পোশাক হবে। মশক নিধনে যে ওষুধ ছিটানো হয় তার কার্যকারিতা যাচাই করা হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় নগরীকে ৬টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো অবহেলা ও অবজ্ঞা গ্রাহ্য হবে না। দায়িত্ব পালনে কেউ ব্যর্থ হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আলোকায়নের ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না। যে সকল সড়কবাতি খারাপ বা অচল হয়েছে সেগুলো জরুরি ভিত্তিতে সারিয়ে তুলতে হবে।

রাজস্ব আয়ের পরিধি বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে মেয়র বলেন, শুধুমাত্র গৃহকরের মধ্যে রাজস্ব আয়ের পরিধি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। অনেকেই ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করছে। তাদেরকে লাইসেন্সের আওতায় আনতে হবে। গৃহকরের ক্ষেত্রেও ফাঁকিবাজি আছে, অনেক বাড়ির মালিক বাড়ির কর দিতে অনীহা প্রকাশ করে এবং কর আদায়কারীর সাথেও দুর্ব্যবহার করে। এ সমস্ত বাড়ির মালিকদের সাথে টিও বা রাজস্ব কর্মকর্তা আলোচনা করে কর আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে। রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে যে ২৬টি খাত রয়েছে সেই খাতগুলোর আয় নিশ্চিত করতে হবে। এই খাতগুলো থেকে কর আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো ঢিলেমি চলবে না।

মেয়র সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানসহ সকলকে নগরীর সৌন্দর্য রক্ষার্থে নগরীর দেয়ালে পোস্টার না লাগানোর আহ্বান জানান। তিনি ঘোষণা করেন, মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০টি গৃহহীন পরিবারকে চসিক গৃহ নির্মাণ করে দেবে।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, মো. গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী। -আজাদী প্রতিবেদন 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!