Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ডুলাহাজারায় প্রাণী থাকবে উন্মুক্ত, দর্শনার্থী খাঁচায়

ডুলাহাজারায় প্রাণী থাকবে উন্মুক্ত, দর্শনার্থী খাঁচায়

নিউজ ডেক্স : কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ার মালুমঘাট এলাকায় ১৯৯৯ সালে পথচলা শুরু ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের। ভেতর-বাইরে ৯০০ হেক্টর আয়তন নিয়ে যাত্রা করা পার্কে বিপুল পরিমাণ মাদার ট্রিসহ (গর্জন) রয়েছে নানা প্রজাতির বনজ গাছ।

শুরু থেকেই সবুজের সমাহারে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশের পার্কটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের সহায়ক হওয়ার পাশাপাশি আশপাশ এবং বিভিন্ন এলাকার মানুষের বিনোদনের অনুষঙ্গ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সপ্তাহের মঙ্গলবার ছাড়া বাকি ৬ দিন দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস মিশে যায় প্রাণীকূলের কোলাহলের সঙ্গে।

ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ১৯টি বেষ্টনীর মধ্যে সংরক্ষিত আছে বিচিত্র সব প্রাণী। পার্কের ভেতরে নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তায় উন্মুক্ত ও আবদ্ধভাবে পালিত হচ্ছে হাতি, বাঘ, সিংহ, জলহস্তি, গয়াল, আফ্রিকান জেব্রা, ওয়াইল্ডবিস্ট, ভাল্লুক, বন্য শুকর, হনুমান, ময়ূর, স্বাদু ও লোনা পানির কুমির, সাপ, বনগরুসহ দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির প্রাণী। পার্কজুড়ে রয়েছে চিত্রা, মায়া, সম্বর ও প্যারা হরিণ। রয়েছে নাম জানা-অজানা বিচিত্র ধরনের কয়েকশ পাখি।

এর পাশাপাশি পার্কে দেখা মেলে কালের সাক্ষী বিশালাকার দুর্লভ ও মূল্যবান বৃক্ষরাজি। সেসব গাছেই বানরের লাফালাফি নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের। বিশেষ করে পুলকিত করে শিশুদের।

jagonews24

খাঁচার কাছে গেলেই শোনা যায় বাঘ ও সিংহের গর্জন। দু’পাশে সবুজের সমারোহ চিরে চলে যাওয়া পিচঢালা পথ মাড়াতে গিয়ে মাঝে মাঝে সামনে পড়ে যায় শাবকসহ মা হরিণ। এক বেষ্টনী থেকে অপর বেষ্টনী যাওয়ার পথে গাছের ডাল বেয়ে এসে ছুঁ মেরে হাতে থাকা চিপস, বিস্কুট বা অন্য খাবার নিয়ে গাছের মগঢালে চড়ে বসে বানরের পাল। এসব বিষয় স্মৃতিতে ধরতে অনেকেই ভিডিও কিংবা স্থিরচিত্র ধারণ করে রাখেন।

প্রতিষ্ঠার দু’যুগে এসে অত্যাধুনিক রূপে অবয়ব দেওয়া হচ্ছে পার্কটির। মহাসড়ক থেকে পার্কে প্রবেশের মূল গেট পর্যন্ত এলাকায় আশপাশে দখলে থাকা বনভূমি উদ্ধারের পর তৈরি করা হচ্ছে বাস, মাইক্রো এবং মোটরসাইকেলের আলাদা পার্কিং। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় ‘প্রবেশ-বাহির’ নির্দেশনায় পার্কিংয়ে থাকছে নতুনত্ব। পার্ক লাগোয়া পূর্বপাশেই গড়া হচ্ছে সাদা পায়রা ওড়ানোর ভঙ্গিমায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। বসানো হচ্ছে ফুলবাগান। পার্কের দক্ষিণে পিকনিক স্পট লাগোয়া পাহাড়ের পাদদেশে গড়া হচ্ছে কৃত্রিম লেক।

মহাসড়কেই গড়া হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন প্রবেশ ফটক। চলছে সড়ক প্রসস্তকরণের কাজ। দু’লেনের সড়কে গড়া হচ্ছে টাইলস সমৃদ্ধ ফুটপাতও। রাস্তার ধারের বিদ্যমান পুরোনো টিকিট কাউন্টার সরিয়ে তৈরি হচ্ছে সুপরিসর টিকিট ঘর। ঘুরতে আসা পর্যটকদের লাগেজ ও প্রয়োজনীয় মালামাল রাখতে যুক্ত হচ্ছে নতুন ভাবে ল’কার রুম। সঙ্গে থাকছে দর্শনার্থী অপেক্ষা কক্ষও। সংস্কার হচ্ছে ডরমেটরি ও ব্যারাক। করা হচ্ছে মানসম্পন্ন ওয়াশরুমও।

jagonews24

পার্কের যাত্রার শুরু থেকে প্রধান ফটক দিয়েই দর্শনার্থীদের প্রবেশ ও বাহির করা হতো। এখন আলাদাভাবে করা হচ্ছে প্রবেশ পথ। বের হতে ব্যবহার হবে মূল ফটকটি। বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য করা হচ্ছে এমিউজিং পার্ক নির্মাণ। নতুন করে সাজানো হয়েছে পার্কের মাঝখানে তৈরি শতাধিক ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ার।

পার্কের মূল প্রাণী বাঘ, সিংহ ও অন্য তৃণভোজী প্রাণীদের জন্য তৈরি হচ্ছে সাফারি। বাঘ-সিংহের জন্য শত একর করে আলাদা সাফারি ও জেব্রা, গয়াল, হরিণসহ অন্য প্রাণীদের জন্য রাখা হয়েছে কয়েকশ একর এলাকা। বেষ্টনী অনুসারে সাফারি চারপাশে তৈরি হচ্ছে নিরাপদ পরিদর্শন পথ। গড়া হচ্ছে প্রবেশ ও বাহিরের জন্য সয়ংক্রিয় ফটক। তৈরি হচ্ছে যান চলাচলে উপযুক্ত পাকা সড়কও।

বাঘ-সিংহসহ হিংস্র প্রাণী বনে মুক্ত করে দেওয়া হলে খাঁচা সদৃশ্য গাড়িতে দর্শনার্থীরা সংশ্লিষ্ট বেষ্টনীতে ঢুকে বিচরণরত বাঘ-সিংহ অবলোকন করবে।

jagonews24

আবদ্ধ ও উন্মুক্ত প্রাণীকূলের এক বেষ্টনী হতে অন্য বেষ্টনীর দূরত্ব কমাতে তৈরি হচ্ছে বনের ভেতর দিয়ে সংযোগ সড়ক। এসব সড়ক নির্মাণ হলে কমবে যাতায়াত দূরত্ব। জলাশয়ের পাড়ে কিন্তু অতিরোদে তৈরি বেষ্টনীগুলো সরিয়ে স্থানান্তরের চেষ্টা চলছে ছায়াঘেরা পরিবেশে। চলছে অনেক অবকাঠামো তৈরীর কর্মযজ্ঞ।

সাফারি পার্কের ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রথম সাফারি পার্ক ডুলাহাজারা। মূলত সাফারি পার্ক শিক্ষার্থী ও প্রকৃতি গবেষকদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে সহায়ক। সাফারি বলতে বুঝায় পার্কে থাকা প্রাণীগুলো উন্মুক্ত থাকবে, আর দর্শনার্থী থাকবে খাঁচায় আবদ্ধ। চলন্ত গাড়িতে ঘুরে তারা বন্যপ্রাণী দেখে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ করবে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো সেভাবে সাফারি পার্ক গড়ে তোলা যায়নি।

তিনি আরো বলেন, আমরা দক্ষিণ এশীয় পদ্ধতিতে পার্ক চালিয়ে আসছি। পার্কে থাকা প্রতিটি প্রাণীর জন্য আলাদা বেষ্টনী রয়েছে। রয়েছে আলাদা খাবার সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও পরিচর্যা এবং নিরাপত্তা কর্মী। প্রতিষ্ঠার দু’যুগে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কটি এতদঞ্চলের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার বেড়ানো এবং বিনোদনের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে বার্ষিক পিকনিক ও পারিবারিক মিলন মেলা করতে আসছে অনেক শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান। তাই পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হচ্ছে নতুন করে।

jagonews24

পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মাজহার আরো বলেন, অনেক বছর বাঘ-সিংহকে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আমরা সত্যিকারের সাফারি পার্ক করার উদ্যোগ নিয়েছি। বাঘ-সিংহ ও অন্য প্রাণীগুলো সম্পূর্ণ মুক্ত করে বিচরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সব কর্মকাণ্ড সম্পন্নের কাজ দ্রুত গতিতে এগুচ্ছে। আগামী বছরের শেষের দিকে আমরা সে লক্ষ্য ছুঁতে পারবো বলে আশা করছি। -জাগো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!