ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চট্টগ্রামে লাইসেন্স করা অস্ত্রের সংখ্যা কমেছে

চট্টগ্রামে লাইসেন্স করা অস্ত্রের সংখ্যা কমেছে

(ফাইল ছবি)

(ফাইল ছবি)

নিউজ ডেক্স : স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় ১৮ হাজারের অধিক অস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে। বর্তমানে এসব লাইসেন্সের মধ্যে বহাল আছে মাত্র ৪ হাজার ২৬২টি। এর মধ্যে গত চার বছরে নতুন করে ইস্যু হয়েছে ৫৩৮টি লাইসেন্স। জবাবদিহিতা বেশি থাকায় বর্তমানে অনেকেই বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র সাথে রাখাকে বড় ধরনের ঝামেলা মনে করছেন। এতে কমে যাচ্ছে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারীর সংখ্যাও। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত রাইফেল, বন্দুক ও শর্টগানের ক্ষেত্রে লাইসেন্স দেওয়ার পাশাপাশি বাতিলের ক্ষমতা রাখে জেলা প্রশাসন। অন্যদিকে পিস্তল ও রিভালবারের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন লাইসেন্স ইস্যু করে থাকে। তবে সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স তদারকি করে জেলা প্রশাসন।

সম্প্রতি তথ্য অধিকার আইনে আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি তথ্য জেলা প্রশাসনের দপ্তর থেকে চাওয়া হয়েছিল। এসব তথ্যে থেকে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া শুরু করে। যা এখনও পর্যন্ত বলবৎ আছে। শুরু থেকে (১৯৭১) চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা পর্যায়ে মোট ১৮ হাজার ২৮১টি লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ইস্যুকৃত এসব লাইসেন্সের মধ্যে বহাল আছে মাত্র ৪ হাজার ২৬২টি। যা মোট ইস্যু করা লাইসেন্সের চারভাগের একভাগ। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (আগ্নেয়াস্ত্র শাখা) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী বলেন, যারা অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছিলেন, কিন্তু এক সময় তাদের আর অস্ত্রের প্রয়োজন পড়ছে না। ফলে তারা লাইসেন্স বাতিল করেন।

জেলা প্রশাসনের সূত্রগুলো বলছে, অনেকেই লাইসেন্স নিয়ে রেখেছেন, কিন্তু অস্ত্র ক্রয় করেননি। আবার অনেকে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়ার পর একসময় অস্ত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। এছাড়া লাইসেন্স নেওয়ার পর দীর্ঘসময় ধরে অনেকে নবায়ন করেননি। ফলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। সাধারণত নবায়নের সর্বোচ্চ সময়সীমা পাঁচ বছর পর্যন্ত থাকে। এ সময়ের মধ্যে লাইসেন্সধারীরা নবায়ন না করলে জেলা প্রশাসন ওই অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে দেয়। এভাবে গত কয়েকদশকে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের পরিমাণ কমে গেছে। এর পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে হদিস না থাকা কয়েক’শ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সও বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের অভিযোগ উঠায় প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে সেসব অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

তবে সামষ্টিক হিসেবে লাইসেন্সধারীদের সংখ্যা কমলেও গত চার বছরে নতুন করে আরও ৫৩৮টি লাইসেন্স ইস্যু করেছে জেলা প্রশাসন। এরমধ্যে চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি থানায় ২৪৭টি এবং মহানগরীর ১৬টি থানায় ২৯১টি আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে।

জেলা পর্যায়ে ইস্যু করা লাইসেন্সের মধ্যে ১৯৬টি বন্দুক, ১৩টি রাইফেল, ৩৩টি পিস্তল এবং ৫টি রিভলবার রয়েছে। এ সময় সর্বাধিক লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে বাঁশখালী উপজেলায়। সেখানে ইস্যু করা ৩৭টি লাইসেন্সের মধ্যে ৩৫টি বন্দুক, ১টি রাইফেল এবং ১টি পিস্তল রয়েছে। এরপরেই আছে হাটহাজারীতে ২৫টি, লোহাগাড়ায় ২৪টি, ফটিকছড়িতে ২০টি, রাঙ্গুনিয়াতে ১৮টি, রাউজানে ১৭টি, আনোয়ারায় ১৪টি। এছাড়া চন্দনাইশ, মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডে পৃথকভাবে ১৩টি করে এবং জোরারগঞ্জ ৯টি, বোয়ালখালী ৭টি, ভূজপুর ৪টি এবং সন্দ্বীপে ৭টি করে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।

এদিকে জেলা প্রশাসন নগরীতে ১৯৬টি বন্দুক, ২০টি রাইফেল, ৬৪টি পিস্তল এবং ১১টি রিভলবার বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনকূলে দিয়েছে। এরমধ্যে কোতোয়ালী থানাধীন এলাকায় সর্বাধিক ৬৩টি লাইসেন্সের মধ্যে ৫০টি বন্দুক, ১০টি পিস্তল, ২টি রাইফেল এবং ১টি রিভলবার ইস্যু করা হয়েছে।

এরপরেই সর্বাধিক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে পাঁচলাইশে ৫২টি, চান্দগাঁও ও খুলশীতে পৃথকভাবে ৩২টি, হালিশহরে ২৭টি এবং ডবলমুরিং থানা এলাকায় ২৫টি।

সূত্র বলছে, এগুলোর অধিকাংশই ব্যক্তি মালিকানাধীন লাইসেন্স। যার মধ্যে বেশিরভাগই রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব। এছাড়া একই সময় ১০৫টি বন্দুক, ৪৫টি রাইফেল, ১৭টি পিস্তল এবং ২১টি রিভলবারের লাইসেন্স বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন।

সামষ্টিক দিক দিয়ে মোট লাইসেন্সের মধ্যে এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন মোট ১৪ হাজার ১৯টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছে। এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার মারুফা বেগম নেলী বলেন, অস্ত্রের লাইসেন্স এখন যাচাই বাছাই করে দেয়া হচ্ছে। খুব বেশি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্টসহ অন্যান্য তথ্যাদি যাচাই-বাছাই করে সন্তোষজনক মনে হলে শুধু তাদেরকেই অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে পুলিশ রিপোর্ট ও প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসনের আগ্নেয়াস্ত্র শাখার দায়িত্বে থাকা এ কমিশনার।

এর আগে গত বছর ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নবায়নের জন্য আহ্বান করে জেলা প্রশাসনের আগ্নেয়াস্ত্র শাখা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নবায়ন না করায় পরবর্তীতে আরও এক মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়। বর্ধিত ওই সময়েও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে লাইসেন্স নবায়ন করা যায়নি বলে জানা গেছে।

প্রতিবছর নবায়ন ফি বাবদ বন্দুক, শর্টগান ও রাইফেলের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ফি ৫ হাজার টাকা, পিস্তল ও রিভলবারের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা ধার্য্য আছে। এর সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করতে হয়।

এদিকে যারা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন আগের তুলনায় তাদের অনেক বেশি জবাবদিহি করতে হয় বলে অভিযোগ করেন। সম্প্রতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে লাইসেন্সধারীদের কয়েকজন জানান, একটা লাইসেন্স ভেরিফিকেশনের জন্য পুলিশের কাছে যে কতবার জবাবদিহি করতে হচ্ছে তার কোনো হিসাব নেই। বাসায় পুলিশ ঘনঘন এসে চেক করে যাচ্ছে। কোনো কার্তুজ হারিয়ে গেলে তো কথাই নেই। এজন্য থানায় জিডিসহ কার্তুজের হিসাব দেওয়া থেকে শুরু করে নানা কাণ্ড! এমন বিড়ম্বনার প্রেক্ষিতে বর্তমানে অস্ত্রের লাইসেন্স রাখার চেয়ে না রাখাটাই শ্রেয় মনে করছেন তারা। পাশাপাশি এ ধরনের জবাবদিহিতা আগে ছিল না বলেও জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তাদের তুলনায় কম জবাবদিহি করতে হয় বলেও অভিযোগ করেন তারা।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসিন বলেন, আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে বৈধ অস্ত্র যাচাই বাছাইয়ের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। যাদের কাছে বৈধ অস্ত্র আছে, তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ লাইসেন্স যাচাই করছে।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!