Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চাক্তাই খালে মাটির স্তূপ, পানি প্রবাহে বাধা

চাক্তাই খালে মাটির স্তূপ, পানি প্রবাহে বাধা

P-1-1-2

নিউজ ডেক্স : চকবাজার, দেওয়ান বাজার, জামাল খান, স্টেডিয়াম এলাকা ও চাক্তাই খাতুনগঞ্জসহ নগরীর সিংহভাগ এলাকার পনি নিষ্কাশন হয়ে থাকে চাক্তাই খাল দিয়ে। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, তাদেরকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে খালটি পরিষ্কার রাখা অপরিহার্য। কিন্তু বর্ষা ঘনিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত এ খালের খনন কাজ শুরুই হয় নি। অবশ্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গৃহীত মেগাপ্রকল্পের আওতায় চলতি অর্থ বছরেই খালটি খনন করার কথা রয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, মাস দুয়েক আগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন চাক্তাই খালের বিভিন্ন অংশ থেকে ময়লা–আবর্জনা ও মাটি উত্তোলন করেছিল। উত্তোলনকৃত মাটিগুলো খালের ভেতর একপাশে স্তূপ করে রাখা হয়। পরবর্তীতে কিছু মাটি অন্যত্র সরিয়ে নিলেও বেশিরভাগ মাটি এখনো রয়ে গেছে। যা পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে। ওই মাটিগুলো সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে খালটি খননের দাবি জানান তারা।

স্থানীয়রা বলছেন, গত বছরের ১২ ও ১৩ জুন নগরীতে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছিল। এর আগে গত বছরের ৩০ ও ৩১ মে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে নগরীতে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। এছাড়া গত ৪ ও ২১ এপ্রিলও নগরীতে জলাবদ্ধতাজনিত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছিল। ওই সময় চাক্তাই খাল সন্নিহিত এলাকাগুলোর অবস্থা ছিল করুণ। দ্রুতসময়ের মধ্যে খনন করা না হলে এবারও ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করেছেন তারা। এদিকে গতকাল সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, চাক্তাই খালের বিভিন্ন জায়গা মাটির স্তূপ হয়ে আছে। ডিসি রোড কপিল উদ্দিন সড়কে ব্রিজের দুই পাশেই দেখা গেছে ময়লার স্তূপ। ব্রিজটির ডান পাশে চকবাজার ধোনিরপুল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার অংশজুড়েই ছিল ময়লা ও বিভিন্ন গৃহস্থলী বর্জ্য। নগরীর চকবাজার চক সুপার মার্কেট থেকে উত্তর দিকে সামান্য এগুলেই ধোনিরপুল। চাক্তাই খালের উপর নির্মাণ করা হয়েছে এ ব্রিজটি। উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, ব্রিজের দুইপাশেই খালের উপর রয়েছে ময়লার স্তূপ। বেশিরভাগই চিপস, পলিথিনের প্যাকেট। রয়েছে প্ল্যাস্টিকের বোতলও।

এছাড়া দেওয়ান বাজার পুলের দক্ষিণে বাসির মায়ের টেক পর্যন্ত প্রায় ১৭ ফুট এলাকায় দেখা গেছে ছোট ছোট মাটির স্তূপ। স্থানীয় বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ঠিকাদার মো. ইদ্রিস দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত দুই বছর খালটির ওই অংশে খনন করা হয় নি। বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিয়েও শঙ্কিত তিনি। অন্যদিকে চাক্তাই চামড়া গুদাম ব্রিজ পার হয়ে কয়েকশ গজ যেতেই মধ্যম চাক্তাই ব্রিজ। ব্রিজ সংলগ্ন একটি শাখা খাল পূর্ব দিকে ফখরুদ্দিন সড়কের পাশ দিয়ে চলে গেছে। ওই খালটিও প্রায় ভরাট হয়ে আছে। দেওয়ান বাজার ব্রিজটির পশ্চিম পাশে দেখা গেছে, ইট ও ময়লার স্তূপ। পলিথিন মোড়ানো বিভিন্ন বাসা–বাড়ির গৃহস্থলি বর্জ্যও এখানে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। যা আবার গড়িয়ে পড়ছে চাক্তাই খালে।

দেওয়ান বাজার ব্রিজের পশ্চিম পাশে ভ্যান নিয়ে তরকারি বিক্রি করছিলেন পরিমল। তিনি  বলেন, এক মাস আগে এখানে সামান্য পরিষ্কার করা হয়েছিল’।

খালের মিয়াখান পুলের গোড়ায়ও ভরাট দেখা গেছে। এখানে জমাট হয়ে আছে ঝুট কাপড়ের বস্তা। ছিল পলিথিনসহ অন্যান্য গৃহাস্থলি বর্জ্য। রয়েছে মাটির স্তূপও। এখানেও অবৈধ দখলদারদের কারণে খালের প্রশস্থতা কমে গেছে বহুগুণ। মিয়াখান নগর থেকে ফুলতলা পর্যন্ত এলাকায়ও বিভিন্ন স্থানে মাটির স্তূপ দেখা গেছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এক্স কাউন্সিলর ফোরামের সদস্য সচিব জামাল হোসেন বলেন, ‘চাক্তাই খালে কোনো কাজ শুরুই হয় নি। চাক্তাই খালের শাখা খালগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। দীর্ঘদিন ধরেই বর্জ্য–আবর্জনায় ভরাট হয়ে আছে সেগুলো। খালের বিভিন্ন অংশ যেখানে মাটির স্তূপ আছে সেখানে ঘাস উঠে গেছে। দেওয়ান বাজার, পশ্চিম বাকলিয়া, মিয়াখান নগর, মাস্টারপুল এলাকায় চাক্তাই খালের অবস্থা বেশি খারাপ। খনন না করায় এবারের বর্ষায় মানুষ অনেক কষ্ট পাবে।’

চাক্তাই খাল পাড়ের বসিন্দা ও সংগীতশিল্পী শাহরিয়ার খালেদ বলেন, ‘চাক্তাই খালের বিভিন্ন অংশে মাটির স্তূপ হয়ে আছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, মিয়াখান ব্রিজ ফেলে চাক্তাই প্রথম ব্রিজ দিয়ে বের হওয়ার অংশজুড়ে, মাস্টারপুল হয়ে খেজুরতলী এলাকা, মাস্টারপুলের ডান দিকে ৫০ ফিট মত গেলেও মাটির স্তূপ দেখা যাবে। শিল্পী শাহরিয়ার খালেদ দাবি করেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন স্কেভেটর দিয়ে মাটি উত্তোলন করেছিল। ওই সময় কিছু মাটি সরিয়ে নেয় এবং কিছু মাটি স্তূপ করে রেখে দেয়। ব্রিজগুলোর নিচে কোনোদিন খনন করেনি। আসলে সিডিএ’র মেগাপ্রকল্পের আওতায় খনন শুরু হবে বলাতে সিটি কর্পোরেশন কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপর ওই মাটিগুলো সরিয়ে নেয়নি।’

শাহরিয়ার খালেদ বলেন, ‘বলা হচ্ছে, মেগাপ্রকল্পের আওতায় এবছর ১৮ লাখ ঘনফুট মাটি উত্তোলন করবে ১৬টি খাল থেকে। কিন্তু কোন খাল থেকে তুলবে সেটা আমরা জানি না। এদিকে আগামী ১১ জুন অমাবস্যা। অমাবস্যা হলে পানি বাড়বে। গতবছরও ১১ জুন মাত্রাতিরিক্ত জলাবদ্ধতা হয়েছিল। শুধু ১১ জুন না, জুন থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত খুব খারাপ সময়। এসময়ে যদি ভারী বৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে জলাবদ্ধতা প্রকট হবে। তাই এর আগে মাটির স্তূপগুলো সরিয়ে নিলে বা খাল থেকে মাটি উত্তোলন করা হলে কিছুটা হলে দুর্ভোগ কমবে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক বলেন, ‘নাগরিকদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আমরা খাল খনন করেছিলাম। চাক্তাইসহ গুরুত্বপূর্ণ খালগুলো থেকে মাটি উত্তোলন করেছিলাম। পরবর্তীতে সিডিএ মেগাপ্রকল্পের কাজ শুরু করবে বলাতে আমরা খনন কাজ বন্ধ করে দিই। কিন্তু তার আগে প্রায় আড়াই কোটি টাকার কাজ করেছি।’

‘কিন্তু খনন করার সময় যেসব মাটি উত্তোলন করেছিলেন তা খালপাড়েই স্তূপ করে রেখেছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ আছে। বিশেষ করে চাক্তাই খালে, এটা কতটুকু সত্য?’ এমন প্রশ্নে চসিকের এ প্রকৌশলী বলেন, ‘খাল পাড়ের কোথাও মাটি রেখে দিয়েছি তা কেউ বলতে পারবে না। আমরা যখন খনন কাজ করেছিলাম তখন সাথে সাথেই মাটিগুলো সরিয়ে নিয়েছিলাম।’

জানতে চাইলে সিডিএ’র গৃহীত মেগাপ্রকল্পের উপ–পরিচালক প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘চলতি অর্থ বছরে যে ১৩টি প্রাইমারি খাল থেকে আমাদের মাটি উত্তোলনের টার্গেট আছে তার মধ্যে চাক্তাই খালও অন্তর্ভুক্ত। খুব শীগ্রই চাক্তই খালে খনন শুরু হবে। চাক্তাই খাল খননে ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালের মাস্টার প্ল্যানে চকবাজার, দেওয়ান বাজার, জামাল খান, স্টেডিয়াম এলাকা, চাক্তাই খাতুনগঞ্জ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে চাক্তাই খালকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়। এখানকার জলাবদ্ধতা নিরসনে চাক্তাই খালের ৫ মিটার হতে ২৫ মিটার পর্যন্ত প্রশস্থ করে সংস্কার করার সুপারিশও রয়েছে মাস্টার প্ল্যানে। এর বাইরে নগরীতে কর্পোরেশনের মালিকানাধীন ছোট বড় মোট ১৭টি খাল আছে। এই খালগুলোর দৈর্ঘ্য ১৪৪ কিলোমিটার। তবে নগরীর সিংহভাগ এলাকার পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে চাক্তাই খাল দিয়ে।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!