ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চট্টগ্রামে বখাটেদের আড্ডাস্থল চিহ্নিতের কাজ শুরু

চট্টগ্রামে বখাটেদের আড্ডাস্থল চিহ্নিতের কাজ শুরু

ctg

নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রাম নগরে বখাটেদের আড্ডার স্থান চিহ্নিত করা শুরু করেছে আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে সিএমপির দক্ষিণ জোনের অন্তর্ভুক্ত কোতোয়ালী, চকবাজার, বাকলিয়া ও সদরঘাট থানা এলাকায় ৭৩টি স্পট চিহ্নিত করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. ইকবাল বাহারের নির্দেশে নগরীর ১৬ থানা এলাকায় স্কুল–কলেজগামী ছেলেমেয়েদের আড্ডাস্থল চিহ্নিত করা, আড্ডার কারণ ও সময় বিবেচনা করে তালিকা তৈরি ও অভিযান শুরু হয়েছে। এসব আড্ডাস্থল থেকে কী ধরনের অপরাধ হয়, তাও চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব আড্ডা থেকে ইভটিজিং, চাঁদাবাজি, ছিনতাই হয়। এমনকি খুনের পরিকল্পনাও হয়। গত ১৬ জানায়ারি নগরীর জামালখান মোড়ে কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র আদনান ইসফার খুন হয়। এই খুনের ঘটনাকে গুরুত্বের সাথে নেয় পুলিশ। এরপরই তারা বখাটেদের আড্ডার স্থান চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে।

সিএমপির উপ কমিশনার (গোয়েন্দা, বন্দর) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, সিএমপির থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা শাখা যৌথভাবে বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। নগরীতে বিশেষ করে অল্পবয়সীদের এ ধরনের আড্ডার স্পটগুলো চিহ্নিত করছি। কয়েকটি থানার তালিকা আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। আমরা ওইসব স্থানে মূলত স্কুল–কলেজের ছেলেমেয়েরা কোন সময়, কেন আড্ডা দেয়, আড্ডার বিষয়বন্তু কী, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আড্ডা চলছে কি না, আড্ডায় নিষিদ্ধ কিছু ব্যবহার করছে কি না, তা মনিটরিং করব। সারপ্রাইজ চেকিংয়ের মতো হবে।

তিনি বলেন, অভিযান চলাকালীন অভিযুক্তদের অপরাধ কতটা তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রথম অবস্থায় তাদের মা–বাবাকে ডেকে সন্তানকে তাদের হাতে দেওয়া হতে পারে। সাথে মুচলেকা দেবে, ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ তার দ্বারা হবে না। আবার তাদের পকেটে যদি মাদক বা অস্ত্র পাওয়া যায়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

এখনকার তরুণ আড্ডাকে ঘিরে গড়ে উঠছে ইয়াবা সার্কেল। এতে ‘বড় ভাই’দের আধিপত্য। অসচতেনতা বশত পাড়া–মহল্লার উঠতি বয়সীদের একটি বড় অংশ বন্ধুদের সাথে বাজে আড্ডায় জড়িয়ে সময় পার করছে। অসৎ সঙ্গের আড্ডা থেকেই কিশোর বয়সীরা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। কেউ কেউ নেশার ফাঁদে পা দিচ্ছে। মাদকাসক্ত সন্তানকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হিমসিম খেতে হচ্ছে পরিবারকে।

সিএমপির অতিরিক্ত উপ–কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আবদুর রউফ বলেন, মা–বাবা সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকেন। ভাবেন সন্তান মানুষ হচ্ছে। কিন্তু মা–বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা সময় কাটায় বিভিন্ন পার্কে কিংবা রাস্তার মোড়ে। সিআরবি যেন স্কুল–কলেজ ফাঁকির উৎকৃষ্ট স্থানে পরিণত হয়েছে। স্কুল বা কলেজের ক্লাস চলাকালীন এই সময়টায় সিআরবি গিয়ে দেখা যায়, কোথাও জোড়ায় জোড়ায়, আবার কোথাও দল বেঁধে আড্ডা দিচ্ছে স্কুল–কলেজে পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা। গায়ে স্কুলের ইউনিফর্ম, সাথে বইয়ের ব্যাগ। নিত্য দিন স্কুল–কলেজ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখছে না। ঝুঁকে পড়ছে নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছে সাধারণ দর্শনার্থীরাও। এই বিষয়ে অভিভাবক, মা–বাবাদের আরো সচেতন হতে হবে। শিক্ষক–অভিভাবকদের সমন্বয়ে ছেলেমেয়েদেরকে সচেতন করতে হবে।

সিএমপি সূত্র মতে, সিএমপির কোতোয়ালী, চকবাজার, বাকলিয়া ও সদরঘাট থানা এলাকায় ৭৩টি আড্ডার স্পট চিহ্নিত করেছে পুলিশ। অন্যান্য থানার তালিকার কাজও দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তালিকায় কারা আড্ডা দেয়, কেন আড্ডা দেয়, আড্ডার নেতৃত্বে কারা থাকে, কোন সময়ে আড্ডা জমে ওঠে এবং ওই স্পটগুলোকে কেন্দ্র করে কী ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়, ইত্যাদি নানা বিষয় উঠে এসেছে।

তালিকা অনুযায়ী কোতোয়ালী থানা এলাকায় সবচেয়ে বেশি ৩২টি স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। সবচেয়ে কম স্পট আছে বাকলিয়া থানা এলাকায় ৫টি।

কোতোয়ালী থানার তালিকাভুক্ত স্পটগুলোর মধ্যে সিআরবির শিরীষতলায় সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আড্ডা চলে। একদিকে ছিনতাইকারীদের আড্ডাও যেমন চলে, একইভাবে চলে স্কুল–কলেজ ফাঁকি দেওয়া প্রেমিক যুগলদের আড্ডাও। মোবাইল ও স্বর্ণালংকার ছিনতাই ছাড়াও রাজনৈতিক গ্রুপকেন্দ্রিক সংঘর্ষ হয়ে থাকে এখানে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিকেল চারটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত আড্ডা দেয় উঠতি ছেলেমেয়ে ও প্রেমিক–প্রেমিকারা। অপরাধ সংঘটিত করে ছিনতাইকারী ও টানা পার্টির সদস্যরা। এছাড়া তালিকায় আরো আছে আউটার স্টেডিয়াম (উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে ও প্রেমিক–প্রেমিকা), রেলওয়ে হাসপাতাল ও হোটেল তাসফিয়ার সামনে, গোয়ালপাড়া শহীদ মিনারের সামনে, এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাবের সামনে, পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন হোটেল হাবিবের সম্মুখে, নিউ মার্কেট মোড় (উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে ও ছিনতাইকারী), ইস্পাহানি মোড়, এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের সামনে (ছাত্রীদের ইভটিজিং), ডিসি হিল প্রাঙ্গণ (সময় কাটানোর জন্য), বনরূপা নার্সারির সামনে ও ডিসি হিল (রাজনৈতিক আড্ডা), মুসলিম হল প্রাঙ্গণ (সময় কাটানোর জন্য), এনায়েতবাজার মোড় বৈশাখী হোটেলের সামনে, আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের মেইন গেটের ভেতরে ও হাসপাতালের উপরে খালি জায়গায়, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে, আন্দরকিল্লা আইন কলেজ মাঠ, হাজারি গলি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির সামনে, পরীর পাহাড়, উপ–পরিচালক স্বাস্থ্য কার্যালয়ের সামনে, সিনেমা প্যালেস, বিপুল বাস কাউন্টারের সামনে, আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে সিঁড়ির উপর, জেএমসেন হল সংলগ্ন রহমতগঞ্জ, চেরাগী মোড় সংলগ্ন আজাদী গলি (রাজনৈতিক আড্ডা, ফ্রি ওয়াই–ফাই জোনের জন্য), লিচু বাগান কুয়ার পাড়, জামালখান মোড়, কলাবাগিচা শুঁটকি পট্টি (ছিনতাই), ব্রিকফিল্ড রোড (ছিনতাই), আশরাফ আলী রোডে খালের পাশে নতুন রোড (ছিনতাই), নজুমিয়া লেইন মসজিদের সামনে, মা বিল্ডিং ও বশিরুজ্জামান বিল্ডিংয়ের সামনে (ইভটিজিং, আড্ডা) ও মেরিনার্স রোড (ছিনতাই)।

বাকলিয়া থানার পাঁচটি স্পট হলো, সিটি কর্পোরেশন স্টেডিয়ামের সামনে, নতুন ফিশারিঘাটের মুখে (ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে), রাহাত্তারপুল ফুলকলির সামনে (ছিনতাই), বাকরিয়া সরকারি স্কুলের সামনে (ছিনতাই) ও সূর্যের হাসি ক্লিনিকের পেছনে এবং স্টার হোটেলের পাশে খালি জায়গায়।

চকবাজার থানা এলাকার স্পটগুলো হলো চক মালঞ্চের সামনে (ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে), কেয়ারীর দক্ষিণ পাশে প্যারেড মাঠ সংলগ্ন ফুটপাত (নির্দিষ্ট নেই), দেব পাহাড়ের মুখ, গণি বেকারির মোড় (নির্দিষ্ট নেই), জামালখান মোড় (নির্দিষ্ট নেই), এম এম আলী রোড শিল্পকলার সামনে (মাদক সেবন করার জন্য), গোল পাহাড় মোড়, চট্টেশ্বরী রোড চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান হোস্টেলের সামনে (মাদক সেবন করার জন্য), কাপাসগোলা স্কুল ও আশপাশের এলাকা (ছিনতাই), সিরাজদ্দৌলা রোড, এমপিসি কলেজ স্কয়ারের সামনে, ভোজ রেস্টুরেন্টের সামনে, মেজ্জান হাইলে আইয়ু রেস্টুরেন্ট, শান্তি নগর বগারবিল হয়ে পোড়া কলোনি থেকে শফির খামার পর্যন্ত এবং প্যারেড কর্নার (নির্দিষ্ট নেই)।

সদরঘাট থানা এলাকার স্পটগুলো হলো ইসলামিয়া কলেজ মোড়, আজিম কমিউনিটি সেন্টারের নিচে, ইসলামিয়া কলেজ মোড় সাতকানিয়া হোটেলের সামনে, সদরঘাট হোটেল শাহজাহানের সামনে, সদরঘাট হোটেল ডি–লাইটের সামনে, সদরঘাট কালিবাড়ি মোড় ও মেমন হাসপাতালের নিচে, আইস ফ্যাক্টরি রোডের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পশ্চিম পাশে ট্রাক স্ট্যান্ডের সামনে, মরিচ্যাপাড়া মোড়, নিয়াজ হোটেলের পাশে, সেবক হোটেলের গলির মুখে, শুভপুর বালুর মাঠ, রাহাত সেন্টারের সামনে, কদমতলী মোড়, কমার্স কেেলজের সামনে, কমার্স কলেজ সংলগ্ন ইয়াছিন গলির মোড়, বাংলাবাজার জুট ফেরি ঘাট, গ্যাস ফেরি ঘাট, মাঝিরঘাট ট্রাক স্ট্যান্ড, মাঝিরঘাট স্কেলের সামনে, সদরঘাট বরিশাল ঘাট, সাহেবপাড়া তলাবাগান মাঠ, রেভাল–২, অভয়মিত্র ঘাট, দারোগাহাট বাই লেইন ও দারোগাহাট ইস্টার্ন গার্মেন্টের সামনে।

এদিকে সিএমপির অপর একটি সূত্র আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন এ উদ্যোগ নিয়ে। তিনি বলেন, তালিকার কয়েকটি ছাড়া সবগুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছে সরকার দলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তাই এখান থেকে কেউ ধরা পড়লে পুলিশের কাছে নেতাদের ফোন যাবেই। তখন পুলিশ কতটা নিজের অবস্থানে অটল থাকতে পারে তা দেখার বিষয়। -আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!