নিউজ ডেক্স : জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী পরিবার থেকে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমে পরিবারে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তারপর যানবাহনের নিরাপত্তার বিষয়টি আসবে। এরপর নারীর কর্মক্ষেত্রে তার সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কাজ করতে হবে। তবেই একজন নারী সমাজে তার সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।’ নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন হলেই, তার অধিকার সম্পর্কেও সে নিশ্চিত হতে পারবে উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, এসব বিষয় সুনিশ্চিত হলেই নারী তার প্রতি যেকোন ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারবে।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইউএন উইমেন’র সহযোগিতায় বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) উদ্যোগে আয়োজিত ‘ন্যাশনাল কনসালটেশন মিটিং অন উইমেন, পিস এন্ড সিকিউরিটি’ বিষয়ক এক পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। স্পিকার বলেন, নারীর অর্থনৈতিক সক্ষমতার পাশাপাশি তার ক্ষমতায়নে সরকার কাজ করছে। এরই ধাবাবাহিকতায় তাদের নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, প্রত্যেক সংসদ সদস্য তার নিজ নির্বাচনী এলাকায় বাল্যবিয়ে রোধ, নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে স্থানীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে পরামর্শসভাসহ নানা সামাজিক কাজ করে যাচ্ছে।
যৌন নির্যাতন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে সুরক্ষা,শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি,সহিংসতা প্রতিরোধে শান্তিরক্ষা কর্মী হিসেবে নারীর ভূমিকার গুরুত্ব,সমর্থন ও সহায়তাদান এবং সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও শিশুর উপশম ও পুনবার্সনের বিষয়ে পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরার লক্ষ্যে এ পরামর্শ সভার আয়োজন করা হয়। সভায়, জাতিসংঘের ২০১০ সালে গৃহীত নারী,শান্তি ও নিরাপত্তা ফ্রেমওয়ার্ক’র, চারটি বিষয়কে মূল স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে উগ্র সহিংসতা,বাস্তুচ্যুতি, দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনসর্ম্পকিত বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থানসমাজ তৈরীর লক্ষ্যে জেলা ও বিভাগীয় কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত সুপারিমমালার সংকলিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন,বিএনপিএস’র প্রকল্প পরিচালক এ্যলিসন সুব্রত বাড়–ই।
উল্লেখ্য, দেশের ৭ বিভাগের একুশ জেলার ১ হাজার ১৪৬ অংশগ্রহণকারীর সুপারিশমালার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মশালা থেকে পাওয়া সুপারিশমালায় প্রশাসনসহ নীতিÑনির্ধারণী পর্যায়ে এবং সংসদে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি; বিচার বিভাগ, মিডিয়া, বাণিজ্য খাত, নিরাপত্তা বাহিনী ও শান্তিরক্ষা মিশনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো, নির্বাচন কমিশনের আরপিও অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের সকল পর্যায়ের কমিটিতে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা প্রভৃতি বিষয় তলে ধরা হয়েছে।
এছাড়া, নারী অধিকার বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সনদ বা নীতিমালাসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়ন, হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা,নারী নির্যাতন বিষয়ে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে একটি হটলাইন নম্বর চালু করা, সকল যানবাহনে নারীর জন্য ৩০ শতাংশ সংরক্ষিত আসন রাখা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি এবং বিচার-সালিশের বিভিন্ন কমিটিতে নারী সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি,প্রশাসনের চাকুরী ও শিক্ষা ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী কোটা বৃদ্ধি; ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নারীবান্ধব আইনসমূহ প্রচার করা প্রভৃতি বিষয় প্রতিবেদনে স্থান পেয়েছে।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সংসদ সদস্য সানজিদা খানম, বাংলাদেশে ইউএন উইমেন’র পিস্ এন্ড সিকিউরিটি প্রোগ্রামের বিশেষজ্ঞ সিয়োবান হবস্, বিএনপিএস’র পরিচালক মাহফুজুল বারী চৌধুরী, ইউএন উইমেন’র কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ শোকো ইসিকাওয়া ও বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য প্রফেসর মেঘনা গুহঠাকুরতা বক্তৃতা করেন। -বাসস