নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রামে নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী যেভাবে ছড়াচ্ছে তাতে ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’বা সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা।
রোববার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত পাঁচ জনের মধ্যে চার জনের কোনো বিদেশফেরত বা আক্রান্ত কারোর সংস্পর্শে আসার তথ্য পাওয়া যায়নি। অপরজন আক্রান্ত এক ব্যক্তির বাড়িওয়ালা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, “চট্টগ্রামে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের বিষয়টি এখন নিশ্চিত। আর কোনো সন্দেহ নেই।”
রোববার চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) ল্যাবে ৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
তাদের মধ্যে চট্টগ্রামে পাঁচ জন ও লক্ষ্মীপুরে একজন- মোট ছয় জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামে নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছে একজন ৫৫ বছর বয়সী পুলিশ সদস্য, একজন ছয় বছর বয়সী প্রতিবন্ধী শিশু, ১৯ বছর ও ৩২ বছর বয়সী দুজন ও অপর জন্য ৪৫ বছর বয়সী।
তাদের মধ্যে ছয় বছর বয়সী শিশুটি রাতেই চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। শিশুটির বাড়ি পটিয়ার হাইদগাঁও ইউনিয়নে।
পটিয়া থানার ওসি বোরহান উদ্দিন জানান, “প্রাথমিক ভাবে জেনেছি, চার মাস আগে ওই শিশুর বাবা ওমান থেকে দেশে এসেছেন। “তার এক চাচা নারায়ণগঞ্জে একটি ব্যাংকে কাজ করেন। প্রায় সময়ে তিনি বাড়িতে আসা যাওয়া করেন। ১৫ দিন আগেও তিনি বাড়ি আসেন। তবে শিশুটির বাবা ও চাচা সুস্থ আছেন।”
ওই পরিবারের সদস্যরা অন্য কোনো বিদেশফেরত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান ওসি। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ৫৫ বছর বয়সী ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবলের বিদেশ যাওয়ার কোনো ইতিহাস নেই বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
নগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগে কর্মরত ওই কনস্টেবল অসুস্থ হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত ডিউটি করেছিলেন বলে জানান ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ।
তিনি বলেন, গত ৭ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি ডিউটি করেছিলেন। ৮ এপ্রিল তার ছুটি ছিল এবং ৯ এপ্রিল থেকে তিনি অসুস্থ হন। পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হওয়ার পর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের ট্রাফিক পুলিশের উত্তর বিভাগের ব্যারাক লকডাউন করা হয়েছে।
পাশাপাশি কনস্টেবলের রুমে থাকা ১২ জনসহকর্মী, তাকে চিকিৎসা দেওয়া পুলিশ হাসপাতালের তিনজন চিকিৎসক, তিনজন নার্স এবং সাতজন চিকিৎসা সহকারীসহ ২৫ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরে আলম জানান, সাতকানিয়ায় আক্রান্ত দুই জনের মধ্যে একজনের বয়স ৩২ আর অপর জনের বয়স ১৯। ৩২ বছর বয়েসী ওই যুবক সাতকানিয়ায় ব্যবসা করেন। আর ১৯ বছরের ওই যুবক চাকরিসূত্রে নারায়ণগঞ্জে থাকেন। সেখান থেকে তিনি এসেছেন বলে জানান ইউএনও।
এদিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজারহাটে আক্রান্ত ব্যক্তি নগরীর সাগরিকা এলাকা থেকে নিজ বাড়ি ফৌজদার হাটে গিয়েছিলেন বলে জানান ইউএনও মিল্টন রায়। তিনি বলেন,আক্রান্ত ব্যক্তি নগরীর সাগরিকা এলাকায় একটি ভবনের মালিক। তার একজন ভাড়াটিয়া গার্মেন্ট কর্মকর্তা কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
“শনিবার তিনি জ্বর নিয়েই ফৌজদারহাটের বাড়িতে এসেছিলেন। স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বাররা তাকে বিআইটিআইডতে নিয়ে পরীক্ষা করান। রোববার তার তার নভেল করোনাভাইরাস পজেটিভ পাওয়া যায়।”
এর পর ফৌজদারহাটের ওই আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ির আশেপাশে ৪৪টি বাড়ি লকড ডাউন করে দেয়া হয়েছে বলে জানান ইউএনও।
গত ৮ এপ্রিল চট্টগ্রামে কভিড-১৯ আক্রান্ত তিনজের মধ্যে এক জন ছিলেন গার্মেন্ট কর্মকর্তা। তার বাসা পাহাড়তলী সাগরিকা এলাকায়। সেই ভবনের মালিক ফৌজদারহাটের আক্রান্ত ব্যক্তি। বিডিনিউজ