Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | সীমান্তে ৭১ ভরি ওজনের স্বর্ণের বারসহ রোহিঙ্গা আটক

সীমান্তে ৭১ ভরি ওজনের স্বর্ণের বারসহ রোহিঙ্গা আটক

নিউজ ডেক্স : ইয়াবার সঙ্গে এবার স্বর্ণের বারের চালানও আসছে মিয়ানমার থেকে। মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা চিংড়ি মাছের চালানের আড়ালেই সবচেয়ে বেশি পাচার হচ্ছে স্বর্ণের বার। সীমান্তে বিজিবি আটক করেছে ৭১ ভরি ওজনের স্বর্ণের বারসহ একজন রোহিঙ্গাকে। অপর দিকে সীমান্তে প্রায় সোয়া চার কোটি টাকা মূল্যের ৭০০ ভরি ওজনের স্বর্ণের বার লুটপাটের ঘটনা নিয়ে সীমান্ত এলাকাজুড়ে তোলপাড় চলছে।

মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কয়েকটি চোরাই পয়েন্ট দিয়েই সাম্প্রতিক সময়ে ইয়াবার সাথে স্বর্ণ পাচারের ঘটনাগুলো ঘটছে। স্বর্ণ এবং ইয়াবার চালান পাচারের চোরাই পয়েন্ট হিসাবে গত কিছুদিন ধরে উখিয়ার বালুখালী ও নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত এলাকাটি রমরমা হয়ে উঠেছে।

সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, মিয়ানমারের একটি কালোবাজারি চক্রের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেই বাংলাদেশের চোরাকারবারি চক্র পাচার করছে স্বর্ণের বারের চালান। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি লোকজন মিলে স্বর্ণ পাচারের সিন্ডিকেটও গড়েছে। নাফনদের মিয়ানমার তীরবর্তী এলাকায় ঘেরে উৎপাদিত চিংড়ি মাছের আড়ালে সবচেয়ে বেশী স্বর্ণের বার পাচার হয়ে থাকে।

মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা ইয়াবা ও স্বর্ণের চালান লুটপাটেও সক্রিয় রয়েছে সীমান্তের বেশ কিছু সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের লোকজন প্রথমে পাচারকারিদের সাথে সখ্য গড়ে কমিশন দাবি করে। তাদের আশানুরূপ কমিশন না পেলে তারা সীমান্তের আইন শৃংখলায় নিয়োজিত সদস্যদের তথ্য দিয়ে চালান ধরিয়ে দেয়। নতুবা সুযোগ বুঝে সীমান্তের লুটপাটকারী সিন্ডিকেট ইয়াবা হোক অথবা স্বর্ণ হোক পুরো চালানটাই গায়েব করে ফেলে। এসব অভিযোগ সীমান্তবর্তী এলাকার ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী লোকজনের।

কক্সবাজারের উখিয়ার নিকটবর্তী সীমান্ত এলাকা ঘুমধুমের ৪নম্বর ওয়ার্ডের কোনারপাড়ার বাসিন্দা মো. আমিন জানান, ছদ্মবেশী একটি প্রভাবশালীচক্র সীমান্তে অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন কায়দায় পাচার হয়ে আসা মিয়ানমারের স্বর্ণের বার এসব লোকজন লুটপাট করে নিচ্ছে। ঘুমধুম এলাকার ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকা এক ব্যক্তির নেতৃত্বে গড়ে উঠা এরকম একটি সিন্ডিকেট গত ৮ জুলাই ভোর ৪টার দিকে পাচার করে আনা ৫০টি মিয়ানমারের স্বর্ণের বার লুট করে নেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। 

লুট হওয়া স্বর্ণের চালানটির অনুমান মূল্যও সোয়া ৪ কোটি টাকা। পাচারকারি গ্রুপের সাথে বনিবনা না হওয়ায় লুটপাটকারী সিন্ডিকেট চালানের পুরো স্বর্ণ হাতিয়ে নেয়। পুরো চক্রের সাথে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তির সুসম্পর্ক রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে সীমান্তবর্তী এলাকার চোরাচালানসহ অপরাধ বাড়ছে। স্থানীয় সরকার দলীয় শীর্ষনেতারাও এসব অপরাধে জড়িত বলে দাবি করেন তিনি।

এ সব বিষয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘুংধুম পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইদানিং সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার সাথে স্বর্ণ পাচারের কথাও শোনা যাচ্ছে। গত ৮ জুলাই এ ধরণের একটি ঘটনার বিষয় আমি শুনেছি। তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে থানায় জিজ্ঞাসাবাদেও জন্য বেশ কয়েকজনকে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজনকে আদালতেও চালান করা হয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের কোনারপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আমিন নামের একজন বাসিন্দা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশৈসিং, র‌্যাব মহাপরিচালক, র‌্যাব অধিনায়ক বান্দরবান, পুলিশের আইজিপি, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগও প্রেরণ করেছেন বলে জানিয়েছেন। লিখিত অভিযোগ তিনি উল্লেখ করেন, স্বর্ণের বার লুটপাটের ঘটনায় স্থানীয় সরকার দলীয় এক নেতা এবং আইন শৃংখলা রক্ষাকারী একজন কর্মকর্তাসহ অনেকেই জড়িত রয়েছেন। এমনকি সীমান্তের লুটকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরাই মিলেমিশে স্বর্ণ চালানটি ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। অথচ উল্টো একটি মামলা সাজিয়ে ঘটনাটি ভিন্নদিকে প্রবাহের চেষ্টা করার অভিযোগ করেন। এমনকি সাধারণ লোকজনকে মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। আবার চার্জসীট থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলে দাবি করা হচ্ছে লাখ টাকা। সীমান্ত এলাকায় এরকম অপরাধ নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অপরদিকে গত ১০ জুলাই টেকনাফ-কক্সবাজার মহাসড়কের হোয়াইক্যং বিজিবি চেক পোস্টে অভিযান চালিয়ে বিজিবি সদস্যরা এক রোহিঙ্গাকে আটকের পর তাঁর শরীর তল্লাশীর মাধ্যমে ৫টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছে। প্রায় ৭১ ভরি ওজনের স্বর্ণের মূল্য ৪৩ লাখ টাকা। স্বর্ণের বার নিয়ে আটক রোহিঙ্গা শফিউল্লাহ (৪৩) উখিয়ার বালুখারী রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে বিজিবি। এ ব্যাপারে টেকনাফ থানায় মামলা হয়েছে। কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!