Home | উন্মুক্ত পাতা | শিশু মৃত্যু – মানববন্ধন – ডাঃ তাহিয়াদ আহমেদ প্রসঙ্গ

শিশু মৃত্যু – মানববন্ধন – ডাঃ তাহিয়াদ আহমেদ প্রসঙ্গ

143

মারুফ খান : প্রাইভেট হাসপাতালে শিশু মৃত্যু, মানববন্ধন ও ডাঃ তাহিয়াদ আহমেদ প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কয়েকদিন যাবত পক্ষে-বিপক্ষে বহু আলোচনা-সমালোচনা দেখে আসছি। শিশু মৃত্যু, মানববন্ধন ও ডাঃ তাহিয়াদ আহমেদ প্রসঙ্গ এবং আমার ব্যক্তিগত কিছু মতামত প্রকাশ করলাম।

সাউন্ড হেলথ হাসপাতাল : গত ১ এপ্রিল রাতে ডাক্তার ও নার্সের অবহেলার কারণে লোহাগাড়া সদরের সাউন্ড হেলথ হাসপাতালে এক শিশুর মৃতু হয়েছে বলে দাবী করেন শিশুর স্বজনরা। এ সংবাদটি লোহাগাড়ার প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল লোহাগাড়ানিউজ২৪ডটকম প্রকাশ করে। অন্য কোন প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় সংবাদটি প্রকাশিত হয়নি। সংবাদে ডাক্তার তাহিয়াদ আহমেদ এর বক্তব্য ছিল, শিশুর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলা হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আমার বক্তব্য : হাসপাতালে রোগী সুস্থও হবে, আবার মারাও যাবে। এটা স্বাভাবিক। তবে ভুল বা অবহেলার কারণে কারো মৃত্যু কখনো কাম্য নয়। যদি ডাক্তার-নার্সের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে কারো মৃত্যু হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া জরুরী বলে মনে করি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আমার প্রশ্ন- আপনারা যদি অপরাধ/অন্যায় বা অবহেলা/ভুল চিকিৎসা না করেন তাহলে কোন একটি পক্ষকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন কেন ? প্রাইভেট হাসপাতাল মানে ব্যবসা + মানবসেবা। যে যাই বলুক না কেন, শুধু মানবসেবার জন্য প্রাইভেট হাসপাতাল না। কারণ, কোটি কোটি টাকা ইনভেষ্ট করেছে কিছু পায়দার জন্য। তবে শুধু ব্যবসার মনোভাব রাখাটাও কাম্য নয়। এ ব্যাপারে প্রাইভেট হাসপাতালের মালিকদের ব্যবসা + মানবসেবা সমন্বয় রাখার আবেদন জানাচ্ছি।

মানববন্ধন প্রসঙ্গ : লোহাগাড়ার তরুণ সমাজরা অন্যান্যদের বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার হয়েছে, সত্যিই তা গর্ব এবং আনন্দের বিষয়। স্যালুয়েট তাঁদেরকে। লোহাগাড়ার মানুষ প্রতিবাদ করতে শিখেছে। আর গা লাগিয়ে দিয়ে বসে থাকবে না লোহাগাড়াবাসী। লোহাগাড়ার কিছু কিছু প্রাইভেট হাসপাতাল মানবসেবা কাট করে শুধুই ব্যবসায়ী মনোভাব লালন করছে। যা সত্যিই দুঃখের বিষয়। প্রাইভেট হাসপাতাল শুধু মানবসেবা অথবা ব্যবসায়ী মনোভাব লালন করতে পারে না। প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মানবসেবা + ব্যবসা দুটিই লালন করতে হবে। তাহলে প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নীতি নৈতিকতার মধ্যে থাকবে বলে মনে করছি। প্রাইভেট হাসপাতালের সেবা আরো উন্নত করার জন্য প্রতিবাদ করা জরুরী বলেও মনে করছি।

মানববন্ধন আয়োজনকারীদের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে শুধু মানবসেবা পাওয়ার দাবীটা অযোগ্য বলে মনে করছি। শুধু মানবসেবার জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকারী হাসপাতাল নির্মাণ করেছে। বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য। সরকারী হাসপাতালে যদি রোগীরা যথাযথ চিকিৎসাসেবা পেতো তাহলে প্রাইভেট হাসপাতালের দিকে ঝুঁকে পড়তো না। ফলে প্রাইভেট হাসপাতালের মালিকরাও ব্যবসার চেয়ে সেবার দিকে বেশী তৎপর থাকতো। তাই মানববন্ধকারী স্বজ্জনরা আপনারা যদি সরকারী হাসপাতালে রোগীরা যথাযথ চিকিৎসাসেবা পেতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এতে মানববন্ধন ফলপ্রসু হবে। শুধু সরকারী হাসপাতাল না, লোহাগাড়ার মানুষ সরকারী যতো ডিপার্টমেন্ট আছে, তাদের কাছ থেকে যথাযথ সেবা পাবার নিশ্চয়তার দাবীতে প্রতিবাদ করবেন। সকলের কাছে সাধুবাদ পাবেন। আশা করি শুধু আবেগ না বিবেক দিয়েও কাজ করবেন।

আমার বক্তব্য : লোহাগাড়নিউজ২৪ডটকম লোহাগাড়ার উন্নয়নে যুক্তিসংঘত যেই কারো উদ্যোগে আয়োজিত আন্দোলন/প্রতিবাদ, অন্যায় ও অপরাধ প্রতিরোধে সবসময় পাশে আছে, ছিলো, থাকবে। ইনশাল্লাহ। দুঃখের বিষয় শিশু মৃত্যুর ব্যাপারে লোহাগাড়ানিউজ২৪ডটকম শুধুমাত্র নিউজটি প্রকাশ করেছে। তার জন্য লোহাগাড়ানিউ২৪ডটকম সাধুবাদ পাবার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু আপনারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করেছেন। একটা কথা মনে রাখবেন, লোহাগাড়ানিউজ২৪ডটকম কোন নিউজ না করার জন্য উৎকোচ নেয় না। যদি কেউ নিউজ করার জন্য সম্মান করে শুধুমাত্র তা সানন্দে গ্রহণ করি।

ডাক্তার তাহিয়াদ আহমেদ : জনাব আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা সবই আছে। আপনি একজন দেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক। অসুস্থ মানুষ সুস্থতার জন্য জন্য ডাক্তারদের কাছে শরানপন্ন হয়। অসুস্থ ব্যক্তিরা ডাক্তারের উপর পুরো আস্থা রাখে। আপনি একজন ডাক্তার। সম্মানীয় ব্যক্তি। আপনার জন্মস্থান কোথায় সেটা আমার ঠিক জানা নেই। তবে নিশ্চিত আপনি একজন বাঙ্গালী। বাঙ্গালী জাতি বীরের জাতি। সুতরাং ফেসবুকে বাঙ্গালী জাতিকে কটাক্য করে কথা বলাটা মোটেও শালীনতায় পড়ে না। লোহাগাড়ার মানুষকে হেয় করার কোন অধিকার আপনার নাই। আর নিজেকে বড় যে বলে বড় সেই নয়, লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়। “এর একটা সমাধান আছে….যেই উত্তাল জনতারা ফুঁসে উঠেছেন তারা ডাক্তার হয়ে দেখান, আমি ডাক্তারি ছেড়ে দিবো”- তার মানে আপনি ডাক্তার হয়ে গেছেন তার জন্য নিজেকে বড়োত্ব দাবী করছেন বুঝি ? আপনি যেমন মান-সম্মান নিয়ে একটি অবস্থানে আছেন, ঠিক তেমনি মানববন্ধন আয়োজনকারী ও অংশগ্রহণকারীরাও যে যাঁর যাঁর অবস্থানে আছেন। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, জজ, ব্যারিষ্টার ইত্যাদি হওয়া বড়ো কথা না, আলোকিত মানুষ হওয়ায় বড়ো কথা। আশা করি আলোকিত মানুষ হবেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীর মধ্যে অনেক ছাত্রও ছিল। নিশ্চিত এদের মধ্যে কেউ ডাক্তার হবার যোগ্যতা রাখে। আপনার চ্যালেঞ্জটা মোটেও মার্জিত বা যুক্তিসংঘত না।

আমার বক্তব্য : ডাক্তার সাহেব আপনি নিঃসন্দেহে একজন জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি। আমার জানা মতে, জ্ঞানীরা তর্ক করে না। নিশ্চুপ থাকাটায় তাদের প্রতিবাদ। অপ্রচারকেও প্রচার মনে করে। আপনি পাবলিক প্লেস ফেসবুকে এ ধরণের কটুক্তিমূলক বাক্য ছুঁড়ে না দেয়ায় শ্রেয় মনে করি। ডাক্তারী পেশা একটি মহান পেশা। এ পেশার প্রতি সকল মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আছে। আশা করি লোহাগাড়াবাসীকে যেমন ভালোবাসা দিবেন, দ্বিগুণ ভালোবাসা আপনি পাবেন। কারণ লোহাগাড়াবাসী ভালোবাসা বিলিয়ে দিতে কিপটামী করে না।

লেখক : প্রকাশক, লোহাগাড়ানিউজ২৪ডটকম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!