নিউজ ডেক্স : প্রায় চার মাস পর আবারো শুরু হয়েছে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি। ইতোমধ্যে আমদানিকৃত পেঁয়াজ ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে প্রবেশ করেছে। এদিকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় কৃষকের কপালে ভাঁজ পড়েছে। তবে কৃষক বাঁচাতে সরকার ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের চিন্তা করছে।
অন্যদিকে হঠাৎ করে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বাজারে এখন পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। এছাড়া দেশীয় পেঁয়াজও উঠতে শুরু করেছে। আবার বন্দরে শত শত কন্টেনার পেঁয়াজ খালাসের অপেক্ষায় আছে। এই মুহূর্তে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। গতকাল চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায়। এছাড়া দেশীয় পেঁয়াজ ৩২-৩৫ টাকা, তুরস্কের পেঁয়াজ ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২৫ থেকে ২৭ টাকা এবং নেদারল্যান্ডের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি-১ (তাহেরপুরী), বারি-২ (রবি মৌসুম), বারি-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছরজুড়ে কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর বড় প্রভাব ফেলে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, দেশে চাহিদার চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এখনো ব্যবসায়ীরা লোকসান দিয়ে সেইসব বিক্রি করছেন। বন্দরে পড়ে আছে শত শত কন্টেনার পেঁয়াজ। এর মধ্যে সরকার ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি কেন দিল সেটি বুঝতে পারছি না। গত শুক্র-শনিবার তো বন্ধ ছিল। তাহলে এই ভারতীয় পেঁয়াজ তাড়াহুড়ো করে কেন আনা প্রয়োজন। ক্রেতা সংকটে চাক্তাই গুদামে অনেক পেঁয়াজই পচে যায়। আমরা এখনো সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ভারত সব সময় আমাদের দেশে কৃষকের ঘরে যখন পেঁয়াজ ওঠে, তখন আমদানি মূল্য কমিয়ে দেয়। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে তারা পেঁয়াজ চাষে আর উৎসাহী হয় না। আবার নিজেদের বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলে সুযোগ বুঝে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ফলে দেশে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়। তাই সরকারকে অবশ্যই দেশের পেঁয়াজ চাষিদের কথা ভাবতে হবে। তারা যেন ন্যায্য দাম পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কৃষক দাম পেলে তারা আরো বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন করবে। আমাদের আমদানি নির্ভরতাও কমবে।
এদিকে গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, পেঁয়াজ আমদানিতে আবারও ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের চিন্তা করা হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এ বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এর জেরে দেশের বাজারে বেড়ে যায় পেঁয়াজের বাজার। তবে সম্প্রতি ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। দৈনিক আজাদী