Home | উন্মুক্ত পাতা | করোনাকালে প্রাথমিক শিক্ষা

করোনাকালে প্রাথমিক শিক্ষা

সুমন মজুমদার : “শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড” সুশিক্ষিত জাতি মাত্রই স্বশিক্ষিত। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সেই জাতি তত বেশি উন্নত। এ উক্তিগুলো সম্পর্কে আমরা সবাই মোটামুটি ওয়াকিবহাল। মেরুদন্ডহীন প্রাণী যেমন সোজা হয়ে দাড়াতে পারেনা, ঠিক তেমনি সুশিক্ষাবিহীন কোন জাতি তথা দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধশালী হতে পারেনা।

তাই একটা দেশ বা জাতির সামগ্রিক উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষার প্রথম ধাপ হল প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সরকার দেশের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন যা সত্যিই প্রশংসীয় বলে মনে করেন সর্বমহল তথা সুশীল সমাজ।

প্রাথমিক শিক্ষা যেহেতু দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রথম স্তর তাই হয়তো সরকার প্রাথমিক শিক্ষার উপর বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন বলে মনে করেন সুশীল সমাজ তথা গবেষকরা।ছোট ছোট কোমলমতি শিশুরা হল নরম মাটির মত, নরম মাটিকে যেমন বিভিন্ন আকৃতি দিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় ও সৌন্দর্যমন্ডিত বস্তুতে রূপান্তরিত করা যায়, ঠিক তেমনি প্রত্যেক কোমলমতি শিশুকেও তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের মাধ্যমে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলা সম্ভব।

কেননা “আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ”। আর এ কোমলমতি শিশুদেরকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হলে দরকার একজন অভিভাবক ও শিক্ষকের বিশেষ যতœ ও সচেতনতা। প্রতি বছরের শুরুতে একটা শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের উপর অভিভাবকদের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। নিয়মিত বিদ্যালয়মুখী করার প্রয়াসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে বছরের শুরু থেকেই শ্রেণি কার্যক্রমের পাশাপাশি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক হোম ভিজিট থেকে শুরু করে মা সমাবেশের ব্যবস্থা করতে হয়। যা খুবই ফলপ্রসূ বলে ধারণা করছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু সারাবিশ্ব যখন ঘাতক করোনা ভাইরাসের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত তখন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয় চিন্তা করে এখনও সরকারের পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জুম মিটিং এর মাধ্যমে যথাসম্ভব মা সমাবেশের ব্যবস্থা করলেও হোমভিজিটে স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে ধারনা করছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা, ফলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারনা করছেন সর্বমহল তথা সুশীল সমাজ। ঘাতক করোনা ভাইরাসের কারনে ২০২০ পুরো বছরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। অন্যদিকে ২০২১ সালের আগমনী বার্তা আমাদের দরজায় নাড়া দিচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদেরকে বিদ্যালয়মুখী রাখতে হলে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাসম্ভব হোমভিজিট করা উচিত এবং ঝরে পড়ার হার হ্রাস পেতে পারে বলে মনে করেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

বিজয়ের এ মাসে আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যদি যথাসম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোমভিজিটের পরিমান বাড়াতে পারি তাহলে হয়তো শিক্ষার্থীদের ঝবে পড়া অনেকাংশেই কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আসুন করোনা কালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা সবাই সুস্থ থাকি ও সুশিক্ষিত জাতি গঠনে ব্রতী হই।

লেখক : সহকারি শিক্ষক, উত্তর আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!