Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহর কর্মচারী কামালকে খুঁজে পাচ্ছেন না তার স্বজনরা

‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহর কর্মচারী কামালকে খুঁজে পাচ্ছেন না তার স্বজনরা

kamal-20170907142708

নিউজ ডেক্স : ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহর কর্মচারী কামালকে খুঁজে পাচ্ছেন না তার স্বজনরা। সোমবার থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন বলে পরিবারের দাবি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরের মাজার রোডে বাঁধন সড়কের বর্ধনবাড়ি এলাকার ভাঙ্গাওয়াল গলির ছয়তলা বিশিষ্ট ‘জঙ্গি আস্তানা’র পাশে কামালের পরিবারের সদস্যরা তার নিখোঁজের বিষয়টি জাগো নিউজ’কে জানান। এ সময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

প্রসঙ্গত, ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে সোমবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা ঘিরে ফেলে মিরপুরের মাজার রোডের ভাঙ্গাওয়াল গলির ছয়তলাবিশিষ্ট ‘কমল প্রভা’ বাড়িটি। ওই বাড়িতে দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগীসহ দুর্ধর্ষ ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ অবস্থান করছিলেন।

গত মঙ্গলবার সারাদিন র‌্যাব সদস্যরা তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। রাত ৮টার মধ্যে তারা আত্মসমর্পণ করবেন বলেও জানান। কিন্তু রাত ১০টার দিকে তারা আত্মঘাতী হন বলে র‌্যাব জানায়।

ওই সময় ভবনটির পঞ্চমতলা থেকে পরপর কয়েকটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যায়। পরে ওই ‘জঙ্গি আস্তানা’য় থাকা কেমিক্যালে আগুন লেগে জীবন্ত দগ্ধ হন ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহসহ সাতজন।

বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ বলেন, জঙ্গি আস্তানায় ইনোসেন্ট (নিরপরাধ) দুই শিশুসহ নারীরা ছিল। তাদের আমরা জীবিত উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। তবে জঙ্গিদের খুনি যে মানসিকতা সেটাই আবার দেখতে পেলাম। তাদের খুনি মানসিকতার কারণে পরিবার ও শিশুসন্তানও রক্ষা পেল না। সবাই পুড়ে ছাই হয়ে গেল।

নিখোঁজ কামালের বাবা আব্দুল মালেক জাগো নিউজ’কে বলেন, গত ছয় মাস ধরে আব্দুল্লাহর বাসায় কবুতর পালনের কাজ করত কামাল। ঈদে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু যায়নি। ঈদের পরদিন থেকে কামালের ফোন বন্ধ ছিল। টেলিভিশনে আব্দুল্লাহর বাসায় অভিযানের খবর শুনে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় চলে আসি।

কামালের গ্রামের বাড়ি ভোলার ইলিশা এলাকায়। প্রাইমারি পর্যন্ত পড়াশোনা করে গ্রামেই চায়ের দোকানে কাজ শুরু করে কামাল। ছয় মাস আগে মিরপুরের হরিরামপুরে বোনের বাসায় চলে আসে সে। এরপর নিজ থেকে আব্দুল্লাহর বাসায় মাসিক ছয় হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেয়।

আব্দুল মালেক জানান, গত রোজার ঈদে শেষ বাড়ি গিয়েছিল কামাল। এবার ঈদে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু মালিক টাকা দেয়নি বলে সে বাড়ি যেতে পারেনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কামালের মা নূরজাহান বলেন, আমার বাবা এই ধরনের না। সে তার বোনের বাসায় থাকত আর আব্দুল্লাহর বাসায় কাজ করত। ঈদের পরদিন থেকে আমার বাবারে কল দেই, বাবারে তো আর পাই না।

তারা জানান, কামাল গত বছরের নভেম্বরে বিয়ে করেন। স্ত্রী বাবা-মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি থাকেন। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে কামাল দ্বিতীয়।

কামালের জেঠাতো ভাই হানিফ বলেন, ঈদে বাড়ি যাওয়ার কথা থাকলেও সে বলে, মালিক টাকা দেয়নি, ঈদের পর টাকা ও মাংস নিয়ে বাড়ি আসবে। কিন্তু ঈদের পরদিন থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। টিভিতে ওই বাসার অবস্থা দেখার পর আমি সবাইরে জানাই। এরপর লঞ্চে করে আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে সবাই ঢাকায় চলে আসি।

গতকাল বুধবার বাড়িটির ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন শেষে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, ‘জঙ্গি আস্তানার ভেতরে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মানুষের সাতটি মাথার খুলি আর কিছু হাড়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহসহ সাতজনের।

র‌্যাব আরও জানায়, ওই আস্তানায় দুই স্ত্রী নাসরিন ও ফাতেমা, দু্ই শিশুসন্তান ওসামা (১০) ও ওমর (৩) এবং দুই সহযোগীসহ পুড়ে মারা যান ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ। তবে আব্দুল্লাহর দুই সহযোগীর পরিচয় জানাতে পারেননি র‌্যাব কর্মকর্তারা।

বুধবার বিকেল সোয়া ৩টায় ‘জঙ্গি আস্তানা’ পরিদর্শন শেষে র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ওই বাসায় ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ নিজেই বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে সে’সহ তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগী মারা যায়। যেহেতু ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ ইউপিএস, আইপিএস, কবুতরসহ নানা ধরনের ব্যবসা করত। ব্যবসার কারণে তার কর্মচারীও ছিল। নিহত ওই দুই সহযোগী তার কর্মচারী হতে পারে। তবে তাদের পরিচয় আমরা এখনও নিশ্চিত করতে পারিনি।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টায় অ্যাসিড, পেট্রল, বোমা তৈরির বিস্ফোরকসহ কেমিক্যালে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। পরপর তিনটি বিস্ফোরণ হয়। এরপর আরও বিস্ফোরণের শব্দ আমরা পাই। প্রধান বিস্ফোরণটির কারণে ভবনটির পঞ্চমতলায় আগুন লেগে যায়।

জঙ্গিদের আস্তানাটির মেঝেতে দুই ফুট বাই দুই ফুট গর্ত তৈরি হয়। গর্ত তৈরির কারণে চতুর্থতলায়ও বিস্ফোরক ও কেমিক্যাল বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়।

বিস্ফোরণের ভয়াবহতা ছিল পাঁচশ’ মিটার দূরত্বব্যাপী। এতে আশপাশের থাইগ্লাসগুলো ভেঙে পড়ে। কাচের টুকরা একেকটা স্প্লিন্টারে পরিণত হয়।

জঙ্গি আব্দুল্লাহর কাছে বিস্ফোরক ও আইইডি ছিল। দুই ব্যারেল পেট্রল এখনও মজুদ আছে। বিস্ফোরণে বেশক’টি কবুতর মারা গেছে। তবে বাকি কবুতরগুলো বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। -জাগোনিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!