নিউজ ডেক্স : শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকরণে সরকার শিক্ষকদের দক্ষ ও যুগোপযোগী করে তোলার চেষ্ঠা করছেন। তবে কতিপয় শিক্ষক নৈতিকতা বিসর্জন, জঙ্গিবাদ, ছাত্রীদের যৌন হয়রানিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। অপরাধের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে জালিয়াতির মাধ্যমে সুবিধামত বদলি হতেও পিছপা হচ্ছেন না তারা। এসব কারণে ইমেজ সংকটে পড়েছে শিক্ষকতা।
জানা গেছে, নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে অভিনব জালিয়াতির মাধ্যমে সম্প্রতি রাজধানীতে বদলি হতে গিয়ে সরকারি প্রাথমিক স্কুলের বেশ কিছু শিক্ষক ধরা পড়েছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। একই সঙ্গে সতর্কবার্তা জারি করেছে।
তবে জালিয়াতির সঙ্গে ডিপিইর কিছু ঘুষখোর কর্মকর্তাও জড়িত বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এ ব্যাপারে ডিপিই মহাপরিচালক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘প্রতারক চক্রটি ধাপে ধাপে ভুল করেছে। কারণ ঢাকা মহানগর বা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বদলির অর্ডার আমরা করি না। অথচ ওই বদলির আদেশে আমার পক্ষে একজন সহকারি পরিচালকের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। মানুষ কত বোকা হলে এ ধরনের প্রতারণা করতে পারে?
তিনি আরো বলেন, নতুন কিসিমের প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি বিভাগীয় আদালতে বিচারধীন। রায়ের প্রেক্ষিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জালিয়াতির সঙ্গে কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিপিইর কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডিপিই সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার উপজেলার ৩৮নং পাঁচরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাহবুবা আক্তার গত ১৩ নভেম্বর ডিডিইর নামে এক ভুয়া বদলির আদেশ তৈরি করেন। আদেশে তাকে উত্তর যাত্রাবাড়ির ব্রাক্ষণচিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি দেখানো হয়। ওই ভুয়া বদলির আদেশ নিয়ে তিনি যোগদান করতে গেলে তা দেখে জেলা শিক্ষা অফিসার সন্দেহ করেন। তাৎক্ষণিক তিনি ডিপিইতে জানান। ডিপিইর অনুসন্ধানে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। অভিযুক্ত শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
একই জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার ৮২ নং তারাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফারজানা আক্তার ভুয়া বদলির আদেশ জারি করে ঢাকা মহাগনর ডিএন্ডটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করতে গিয়ে ধরা পরেন। শুধু মাহবুবা আক্তার ও ফারজানা আক্তারই নয়, সম্প্রতি আরো বেশ কিছু শিক্ষক জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকা মহানগর ও সিটি কর্পোরেশন এলাকার স্কুলে বদলি হতে গিয়ে ধরা পড়েছেন।
প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা অনুযায়ী, ঢাকা মহানগর, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বদলি মন্ত্রণালয় করে থাকে। আর জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিভাগীয় অফিস করে। এছাড়া একই জেলার এক উপজেলা/থানা থেকে অন্য উপজেলা/থানায় বদলি ওই জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিস করে থাকে। সব বদলিই জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে হয়।
তবে ওই শিক্ষকের ভুয়া বদলির আদেশ নভেম্বর মাস উল্লেখ করায় এবং মহাপরিচালকের স্বাক্ষরের জায়গা ফাঁকা থাকায় বিষয়টি ধরা পড়ে। শুধু তাই নয়, বদলির আদেশে মহাপরিচালকের পক্ষে সহকারি পরিচালক (বিদ্যালয়-২) সুলতান মিয়ার স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ এ ধরনের কোন কর্মকর্তা ডিপিইতেই নেই। অর্ডারে যে টেলিফোন নাম্বার দেয়া হয়েছে সেটিও বর্তমানে সচল নয়।
ডিপিই সহকারি পরিচালক (বিদ্যালয়) মো. সুলতান মিয়া বলেন, আমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বদলির আদেশ তৈরি করা হয়। বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসের সন্দেহ হলে তারা আমাকে জানায়। জালিয়াতি ধরা পড়ায় মহাপরিচালক অভিযুক্তদের সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে বিষয়টি বিভাগীয় আদালতে বিচারধীন আছে।
জালিয়াতির মাধ্যমে একাধিক বদলির বিষয় ধরা পড়ার পর সতকর্তা জারি করে গত ১ ডিসেম্বর ডিপিই একটি পরিপত্র জারি করে।