Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ২ দিনে ৮০ হাজার রোহিঙ্গার প্রবেশ

২ দিনে ৮০ হাজার রোহিঙ্গার প্রবেশ

KH Manik Pic 17.10.2017.-1

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণে ভয়ে পালিয়ে আসছে এখনও রোহিঙ্গারা। নাফ নদী পাড়ি দিয়ে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা আসতে এখন আর বাধা নেই। ওপারে সৃষ্ট ভীতিকর পরিস্থিতির বিপরীতে সীমান্তে কঠোরতা না থাকায় তাদের নিরাপদ গন্তব্য পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। একসঙ্গে এত বেশি রোহিঙ্গার ¯্রােতে এর আগে আর ঘটেনি। রবিবার ভোর থেকে মঙ্গলবার  বিকাল ৪টা পর্যন্ত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে স্থানীয় ও সরজমিনে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আশা রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে এতথ্য জানাযায়। ঐতিহাসিকভাবে রোহিঙ্গাদের আবাস ভূমি রাখাইন রাজ্য হলেও তাদের অধিকাংশই এখন বাংলাদেশে। মিয়ানমারে আর বড়জোর লাখ দু’য়েক রোহিঙ্গা থাকতে পারে বলে ধারণা দিচ্ছে এপারে অনুপ্রবেশকারীরা। এর মধ্যে ত্রিশ হাজারের মতো দালাল বাদ দিলে বাকিরাও তল্পিতল্পা গুটিয়ে এদিকে যাত্রা করতে প্রস্তুত। নির্যাতন বন্ধ হওয়ার পরও রোহিঙ্গারা যেভাবে প্রতিদিনিই হাজারে হাজারে ধেয়ে আসছে তার নেপথ্যে কোন ধরনের পরিকল্পনার ছক রয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কৌশলে সকল রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে এনে পূর্ণবাসনের নিল নকশা নয় কি?

আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মিকে (আরসা) নিয়ে এখন আর ভাবছেনা মিয়ানমার সরকার। অস্ত্র বিরতির মেয়াদ শেষে আলোচনার প্রস্তাব থাকলেও সংগঠনটির শক্তি-সামর্থ্য এবং ভিত্তি এমন নয় যে, সরকার তাদের সংঙ্গে আলোচনার বসার প্রয়োজন অনুভব করবে। এদিকে মিয়ানমার নেত্রীক অংসাং সুচি এবং সেনা প্রধান মিন অং লাইং এর পরস্পর বিরোধী যে বক্তব্য, তাতে রোহিঙ্গা নিয়ে সেদেশের সরকার অভ্যন্তরে পাল্টাপাল্টি অবস্থান রয়েছে বলে প্রতীয়মান। সুচি তাঁর বক্তব্যে কিছু আশার আলো দেখাবার চেষ্টা করলে ও পরক্ষণেই তা ভন্ডুল হয়ে যাচ্ছে সেনাপ্রধানের অফিসিয়াল পেজে দেয়া ভাষ্যে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ইউনিয়ন, এবং দ্বিপাক্ষিক নানা তৎপরতার বিপরীতে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে আসা বক্তব্য প্রকৃত অথেই আন্তরিক নাকি কালক্ষেপনের কৌশল তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সেই বিপদগ্রস্ত নিরীহভাবে কেটে যেতে শুরু করেছে। তাদরে প্রতি আগে যেমন একতরফা সহনুভুতি দেখা গিয়েছিল তা ক্রমেই কমছে। এখন বরং তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে শেষ পর্যন্ত এরা থেকে যায় কিনা তা ভেবে শংকিত স্থানীয়রা। জাতিয়সংঘের মানবধিকার বিষয়ক অফিসের র্যাপিট রেসপন্স মিশনের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী গত ২৫ আগস্টের পর থেকে ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছে ৬ লাখ ৪৮ হাজার রোহিঙ্গা। এ অনুপ্রবেশ এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই দলে দলে এবং বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্টি পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধের পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারীদের যথাযথ অধিকার দিয়ে প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক অগ্রগতি দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত এ ¯্রােত অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশে আসা অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে এখন আর বড় জোর আড়াই থেকে তিন লাখ রোহিঙ্গা থাকতে পারে। এর মধ্যে ত্রিশ হাজারেরও মতো রয়েছে সেদেশের সরকারের দালাল, যারা সীমান্তর পাড়ি দেবে না। সরকারই বরং তাদের আদর যতœ করে রেখেছে আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবং পর্যবেক্ষক দলের কাছে শেখানো বক্তব্য উপস্থাপন করাতে পারে। বাকিরা পাহাড় পরর্বতে আশ্রয় নিয়ে কোন রকমে বেঁচে আছে অনাহারে-অর্ধাহারে। তারাও রয়েছে বাংলাদেশে চলে আসার পরিকল্পনায়। সূত্র জানায়, মিয়ানমারে মুল ভুখন্ড থেকে রাখাইন রাজ্যকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা ময়ু পর্বতমালার বিভিন্ন পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে আছে অর্ধ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। তারা চরম দুর্দশার মধ্যে আছে বলে খবর রয়েছে এপারের রোহিঙ্গাদের কাছে। সুযোগ পেলে তারাও সীমান্ত অতিক্রম করবে। রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ হলেও তা আছড়ে পড়েছে বাংলাদেশে। দফায় দফায় সহিংসতার কবলে পড়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১০ থেকে ১১ লাখ। এ ছাড়া সৌদি আরবে ৫ লক্ষাধিক, পাকিস্তানে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক, মালয়েশিয়ায় প্রায় দেড় লাখ, থাইল্যান্ডে ৫০ হাজার, ভারতে ৫০ হাজারের কাছাকাছি এবং বিভিন্ন দেশে আরও ২০ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। বাকিরা হয়তো রাখাইন প্রদেশে থাকতে পারবে না, এমনই আশংকা তাদের। এদিকে এর আগেও দফায় দফায় রোহিঙ্গা বিতাড়ন ঘটলেও তা নিয়ে এত বেশি সমালোচনা এবং চাপের মুখে পড়েনি মিয়ানমার সরকার। এখনও কার্যকর পদক্ষেপ গৃহিত না হলেও জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং যুক্তরাজ্য সহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার চাপের মুখে পড়েছে দেশটির সরকার। সে কারণে সেদেশের সেনাবাহিনী প্রধানের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের পাশাপাশি আসছে অংসান সুচির আশাজাগানিয়া বক্তব্য ও । তবে সুচির ক্ষমতা কতটুকু তা সকলের জানা। অনেকেই মনে করছেন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের যে অভিযোগ আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে উঠেছে তা থেকে নিজকে নিরাপদ রাখতে সুচি এই বক্তব্য গুলো দিয়ে যাচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি চাইলে ও তার কিছু করার ক্ষমতা নেই। কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারাও বিশ্বাস করেন না যে, সুচি তাদের কল্যাণকর কিছু করতে সমর্থ হবেন। সুচির সমালোচনার করলেও তিনি যে, ক্ষমতাহীন তা মানছে না রোহিঙ্গারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!