Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | সাতকানিয়ায় ফসলি জমিতে বন্য হাতির তান্ডব

সাতকানিয়ায় ফসলি জমিতে বন্য হাতির তান্ডব

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

নিউজ ডেক্স : সাতকানিয়ায় পাহাড়ি অঞ্চলের চাষিদের দুঃখ কোনো অবস্থাতে লাঘব হচ্ছে না। চাষিরা জমিতে আবাদ করে ফসল তুলার সময় আসলে বন্য হাতির দল এসে ফসল মাঠে তা-ব চালিয়ে সব নষ্ট করে দেয়। গত কয়েক বছর ধরে চলে আসছে এ অবস্থা। এতে প্রায় ৭শ হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। উপজেলার মাদর্শা, বাজালিয়ার মাহালিয়া, ছাদাহা বনামুড়া, সন্দিপ্পা পাড়া সোনাকানিয়া, এওচিয়া ও চরতী কয়েকটি এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত কয়েক বছর ধরে বন্য হাতির দল লোকালয়ে এসে ফসল মাঠে হানা দিচ্ছে। আমন ধান কাটার সময় হলে প্রতিদিন সকাল বিকাল পাহাড় থেকে নিচে নেমে ধান ও সবজি খেয়ে ফেলে। ফসল খাওয়ার চেয়ে বেশি নষ্ট করে হাতির দল। কৃষকরা হাতি তাড়াতে গেলেই লোকজনের উপর হামলা চালায়। এতে হাতির আক্রমণে প্রাণ হারাচ্ছে কৃষক ও স্থানীয় লোকজন। ৯ জানুয়ারী সন্ধ্যায় উপজেলার ছনখোলা বড় ঘোনা এলাকায় হাতির আক্রমণে জন্নাত আরা বেগম (৪১) এক কৃষানি মারা যায় ।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, পাহাড় ঘেঁসা ইউনিয়নগুলোর বেশ কিছু গ্রামে হাতির তা-ব কৃষকের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়েছে। কৃষকের ফসল ঘরে তুলার আগে পাহাড় থেকে হাতির দল নেমে এসে জমির ফসল প্রথমে খাওয়া শুরু করে । পরে ফসলগুলো তছনছ করে চলে যায় পাহাড়ে। এতে হাতির আক্রমণের ভয়ে ওই এলাকাগুলোতে অনাবাদি জমির পরিমাণ বাড়ছে।

ছদাহার খুর্দ্দে কেঁওচিয়া বনামুড়ার সাবেক ইউপি সদস্য মো. নুরুল হক বলেন, গত ৩ বছর ধরে সারাষিয়া বিলে বন্য হাতির তা-বের কারণে ১৫ কানি জমিতে চাষাবাদ বন্ধ রেখেছি। ধান যখন পাকা শুরু করে, হাতির দল ক্ষেতে এসে সব জমির ধান খেয়ে ফেলে। লাখ টাকা খরচ করে ধান চাষ করে বাড়িতে ফসল তুলতে পারি নাই অনেক বার। এখন ওই বিলে জমিগুলোতে চাষাবাদ বন্ধ রেখেছি। আমার মতো উত্তর আমিরাবাদের বাসিন্দা নরুল আলমের সারাষিয়া বিলে প্রায় ৬০ কানি জমিতে হাতির কারণে আবাদি জমিতে চাষ বন্ধ রেখেছে। একই এলাকার কৃষক আবুল খায়ের বলেন, গত মৌসুমে বনামুড়ার পূর্বে বিলে ২০ শতক জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলাম। সেই আমনের পাকা ধান ঘরে তুলতে পারিনি। বন্য হাতির দল এসে সবই খেয়ে সাবাড় করে চলে যায়। এসময় তাড়াতে গেলে এলাকার কৃষকদের উপর আক্রমণ চালায় হাতির দল। গত কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় বেশ কিছু মানুষ হাতির আক্রমণে মারা যাওয়ায় খুবই আতঙ্কে গ্রামের বাসিন্দারা দিন-রাত কাটাচ্ছে।

মাদার্শার কৃষক এজাহার সিকদার বলেন, চুনতি অভয়ারণ্য ঘোষণার পর থেকে পাড়াড়ি এলাকায় হাতির উপদ্রব বেড়ে গেছে। তখন থেকে এই এলাকার কৃষকের দুঃখ পিছু ছাড়ছে না। হাতির তা-ব চলছে আমাদের গ্রামগুলোতে। এত কষ্ট করে মাঠে ফসল ফেলে ঘরে তুলতে পারছে না শত শত চাষিরা। ফসল তুলার আগেই ধান ক্ষেতে কিছু খেয়ে বেশির ভাগ তছনছ করে চলে যায় বন্য হাতির দল। এই কারণে এলাকায় চাষাবাদ কমে যাচ্ছে। হাতির তা-বে জান-মাল দু’ঠুই যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলেন, হাতি দল তা-ব চালালেও হাতি তাড়াতে বন বিভাগের লোকজনের নেই কোনো উদ্যেগ। হাতি লোকালয়ে না আসার ব্যবস্থা করা গেলে এখানকার উৎপাদিত ফসল দিয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষের খাদ্যের সংস্থান করা যেত।

ছদাহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ হরিণতোয়া মাহালিয়া গ্রামে আমার প্রচেষ্টায় উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে ২ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা ব্যয়ে এই প্রথম ছদাহায় হাতির উপদ্রব থেকে কৃষকের ফসল রক্ষার্থে ৪টি সোলার প্যানেল বসিয়ে রাতে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্ধকার থাকলে ওই সব গ্রামের ঘরবাড়িতে রাতে হাতির দল হানা দেয়। লোকজনের উপর আক্রমণ চালায় হাতির দল। রাতে পাহাড়ি এলাকাগুলোতে আলো দেখা গেলে হাতি আসে না। আগামীতে অন্যান্য কৃষি এলাকাগুলোতেও সোলার প্যানেল বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

সাতকানিয়া কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলের ইউনিয়নগুলোতে হাতির লাগাতার তা-বের কারণে ৭০০ হেক্টর জমির আবাদ ব্যাহত হয়েছে। এতে কৃষকরা বিপুল পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!