Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | সংবিধানে থাকা বিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে : প্রধানমন্ত্রী

সংবিধানে থাকা বিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে : প্রধানমন্ত্রী

image-64758

নিউজ ডেক্স : সরকারের চার বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে কোনো চমক নেই। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আগের অবস্থান থেকে নড়ার কোনো ইঙ্গিতও দেননি তিনি।

চলতি ২০১৮ সালের শেষ দিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে জানিয়ে এই ভোটে সব দলকে পাওয়ার আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবিধানে থাকা বিধান অনুযায়ীই এই ভোট হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

চার বছর আগের মতো ভোট করে ধ্বংসাত্মক তৎপরতা জনগণ মেনে নেবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন সরকার প্রধান। সেই সঙ্গে আগের বিএনপি আমলের সঙ্গে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেছেন, জনগণকেই ঠিক করতে হবে তারা কী চায়।

বর্তমান সরকারের চার বছর পূর্তিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে ভোটের এক সপ্তাহ পর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভার শপথ পড়ান। নতুন সরকারের শপথ নেয়ার পর ভোটপূর্ব ও ভোটের পর পর সহিংসতার যে চিত্র দেখা যায়, তা পাল্টে যায়। আর ভোটের এক বছর পর আবারও সরকার পতন আন্দোলনকে কঠোর হাতে মোকাবেলা করে চার বছর পূর্ণ করে মেয়াদ পূর্তির পথে সরকার।

সরকারের বর্ষপূর্তিতে প্রতি বছর এভাবে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভির মাধ্যমে এই ভাষণ দেশের প্রতিটি বেসরকারি টেলিভিশনও সরাসরি সম্প্রচার করে। সেই সঙ্গে সম্প্রচার করা হয় রেডিও চ্যানেলে। এই ভাষণ শুনতে শীতের মধ্যেও মানুষের জটলা দেখা গেছে।

এর বাইরে সরকারের চার বছর পূর্তিতে আর্মি স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেখানের প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
সরকারের শেষ বছরের এই ভাষণে কোনো চমক ছিল না। তিনি মূলত তার আগের রাজনৈতিক সরকার বিএনপির আমলের সঙ্গে তার সরকারের আমলের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। এর পাশাপাশি ২০১৩ ও ১৪ সালে নির্বাচন বর্জনের আন্দোলনে নাশকতার চিত্র, যুদ্ধাপরাধের বিচার, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আলোচিত বিভিন্ন নির্বাচনের কথা তুলে ধরেন। পরোক্ষভাবে তিনি বিএনপির নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিও নাকচ করলেন।
ভোট কবে?

২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি বর্তমান দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল। সে অনুযায়ী আগামী ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর পুরো হবে। সংবিধান অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে হবে নির্বাচন। সে অনুযায়ী, ২৯ অক্টোবর থেকে যে কোনো দিন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে আগামী ডিসেম্বরে ভোটের বিষয়ে দলের আগ্রহের কথা বলে আসছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ বা মাসের কথা উল্লেখ করেননি। তবে ভোট যে ২০১৮ সালেই হবে সেটি জানিয়েছেন তিনি। আর সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচন পদ্ধতি পাল্টানোয় তার যে আগ্রহ নেই সেটিও জানিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের শেষদিকে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কীভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। সেই সরকার সর্বোতভাবে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা দিয়ে যাবে।’
এবার বর্জনের আশঙ্কা নেই প্রধানমন্ত্রীর

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচনে না আসলেও এবার বিএনপিকে ভোটের লড়াইয়ে পাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সকল দল আগামী সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে সহায়তা করবে।’

বর্তমান নির্বাচন কমিশন দুইটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের বেশ কিছু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

কোনো দল ভোটে না এসে চার বছর আগের পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করলে পরিণতি কী হবে, সেটিও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

‘কোন কোন মহল আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করতে পারে। আপনাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। জনগণ অশান্তি চান না। নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনের নামে জনগণের জানমালের ক্ষতি করবেন- এটা আর এদেশের জনগণ মেনে নেবেন না।’
লক্ষ্য ঠিক করতে হবে জনগণকেই

বিএনপি সরকারের আমলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের চিত্রের তুলনা করে কারা ভালো এ বিষয়ে জনগণকে সিদ্ধান্ত নেয়ার আজ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘আপনারাই সকল ক্ষমতার মালিক। কাজেই লক্ষ্য আপনাদেরই ঠিক করতে হবে- আপনারা কী চান। আপনারা কি দেশকে সামনে এগিয়ে যাওয়া দেখতে চান, না বাংলাদেশ আবার পেছনের দিকে চলুক তাই দেখতে চান। একবার ভাবুন তো মাত্র ১০ বছর আগে দেশের অবস্থানটা কোথায় ছিল?’
‘আপনারা কি চান না আপনার সন্তান সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্বাবলম্বী হোক? আপনারা কি চান না প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে যাক! আপনারা কি চান না প্রতিটি গ্রামের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হোক! মানুষ দু বেলা পেট পুরে খেতে পাক! শান্তিতে জীবনযাপন করুক!’

‘আমরা অতীতকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই না; তবে অতীতকে ভুলেও যাব না। অতীতের সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন করে, ভুল-ত্রুটি শুধরে নিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাব।’

‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেন ব্যাহত না হয়, এ বিষয়ে সচেতন হয়ে দেশবাসীকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবার আহ্বান জানাচ্ছি।’
উন্নয়নের বর্ণনা

বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা পেয়েছে জানিয়ে বিএনপি সরকারের শেষ বছরে পাথাপিছু আয়, জিডিপি, জিডিপির প্রবৃদ্ধি, দারিদ্রের হারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের তৃতীয় বছর শেষের চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

‘সারাবিশ্ব আজ বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে। যে বাংলাদেশকে একসময় করুণার চোখে দেখত, সাহায্যের জন্য হাত বাড়ানোয় করুণার পাত্র মনে করত; আজ সে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বসভায় সম্মানিত।’

পদ্মাসেতুর অগ্রগতি, ঢাকায় মেট্টোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলা, সারা বাংলাদেশকে রেল সংযোগের আওতায় নিয়ে আসা, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নির্মাণ কাজ চলা, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের উদ্যোগ, পটুয়াখালীতে পায়রা বন্দর নির্মাণের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কেউ বেকার এবং দরিদ্র থাকবে না।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা, চন্দ্রা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার-লেনে উন্নয়নের কাজ চালু থাকার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।

সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হতদরিদ্র ৩৫ লাখ মানুষকে বয়স্কভাতা, ১২ লাখ ৬৫ হাজার মানুষকে বিধবা, স্বামী পরিতক্তা, দুস্থ্য নারী ভাতা এবং ৮ লাখ ২৫ হাজার জন প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেয়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রায় ৯৮ লাখ কৃষক ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খুলে ভর্তুকির টাকা দেয়া, ২ কোটি ৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপবৃত্তি দেয়ার কথাও তুলে ধরা হয় ভাষণে।

এর বাইরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ, স্বাক্ষরতার হার ৭২.৩ শতাংশে উন্নীত হওয়া, সাড়ে ১৮ হাজার কম্যুনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন, ৩০ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণের কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।

বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াটে উন্নীত হওয়া, ৮৩ শতাংশ মানুষের এই সুবিধার আওতায় আসার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা, ইন্টারনেট সেবা প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া, গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সম্প্রসারণের কথা তুলে ধরা হয় ভাষণে।

বিএনপি আমলের সঙ্গে তুলনা

বিএনপি আমলের শেষ বছর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে দারিদ্র্যের হার ৪১. ৫ শতাংশ থেকে সেটি ২০১৭ সালের শেষে ২২ শতাংশে নেমে এসেছে বলেও জানানো হয় ভাষণে।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বিএনপি আমলের তুলনায় বাজেট প্রায় সাত গুণ বৃদ্ধি পাওয়া, রপ্তানি আয় সাড়ে তিন গুণ, রিজার্ভ প্রায় ১০ গুণ হওয়া, বিদেশে কর্মসংস্থার প্রায় চার গুণ, রেমিটেন্স প্রায় আড়াই গুণ হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী জানান, গত ৯ বছরে ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩৬৫টি কলেজ সরকারি করা হয়েছে। ৫০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম করা হয়েছে। নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়েছে ১ হাজার ৪৫৮টি গ্রামে। -ঢাকাটাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!