নিউজ ডেক্স : রাত পেরুলেই নির্বাচন। চেয়ারম্যান পদে লড়বেন তিন চৌধুরী। লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল ৩১ মার্চ রোববার। এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না বিএনপি-জামায়াত জোট। যদিও ভোট ও জনসমর্থনের হিসেবে লোহাগাড়া উপজেলায় সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি জামায়াত।
চলতি মেয়াদে এখানকার উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আবচার ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান গুলশান আরা তিনজনই জামায়াত সমর্থিত। এবার দলটি সাংগঠনিক সিদ্ধান্তেই নির্বাচনে যাচ্ছে না তাই তাদের প্রার্থীও নেই। ভোটগ্রহণের মুহুর্ত যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জামায়াত কর্মীদের কদর বাড়ছে প্রার্থীদের নিকট।
জনশ্রুতি আছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানকার এমপি থেকে শুরু করে ইউপি সদস্য পর্যন্ত প্রায় সবাই জামায়াতের সমর্থনের দিতে তাকিয়ে থাকে। ২০০৮ সালে সারা দেশে জামায়াতের পাওয়া মাত্র দুটি আসনের মধ্যে লোহাগাড়া-সাতকানিয়া একটি। সেসময় এখানে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন জামায়াতের বর্তমান কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আ ন ম শামশুল ইসলাম। এর আগে দুইবার এমপি হয়েছিলেন জামায়াতের শাহজাহান চৌধুরী।
দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌকার প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হবার খবর আসলেও লোহাগাড়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম। এখানে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই মাঠ গরম করে ফেলেছেন প্রার্থীরা। সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে নৌকার প্রার্থী খোরশেদ আলম চৌধুরী ও নৌকা প্রতীক পাবার লড়াইয়ে হেরে যাওয়া আওয়ামী লীগে সদ্য যোগদানকারী সাবেক এলডিপি নেতা জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল।
বাবুল একদা লোহাগাড়ায় বেশ জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তবে কালের পরিক্রমায় তিনি যেন কিছুটা ক্লান্ত। ভাটা পড়েছে জনপ্রিয়তায়ও। গত ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর পক্ষে কাজ করেন। নির্বাচনী সভায় ২০ দলীয় প্রার্থী মাওলানা আ ন ম শামশুল ইসলাম, শীর্ষনেতা বেগম খালেদা জিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করায় সাধারণ জনগণের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
সেসময় বক্তব্যে তিনি সকাল ১০টার মধ্যে নৌকায় ভোটের কার্যক্রম শেষ করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যেও নির্মম পরিহাস, ‘সেই বাবুলই এখন গনসংযোগে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে সবাই ভোটকেন্দ্র যাবেন’ বলে ঘরে ঘরে গিয়ে আহ্বান জানাচ্ছেন।
আনারস প্রতীকের প্রার্থী জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব প্রশাসনকে বলে দিয়েছেন, লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন। জালিম অত্যাচারী গোষ্ঠীর হাত থেকে লোহাগাড়াবাসীকে রক্ষা করতে তিনি প্রার্থী হয়েছেন।’
অন্যদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খোরশেদ আলম চৌধুরী এলাকায় ব্যাপক নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সভায় জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলের নানান বক্তব্যের জবাব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল চোরাকারবারী ছিলেন। তিনি সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি হয়ে বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষের উপর ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করেছেন। এমন কোনো দল নেই যা বাবুল করেনি। তার কাছে সম্মানী মানুষ সম্মান পায় না। এবারের নির্বাচনে লোহাগাড়াবাসী তার এসব কর্মকাণ্ডের জবাব দেবে।’
সাবেক বিএনপি নেতা খোকন চৌধুরীও প্রার্থী হয়েছেন। তার প্রতীক দোয়াত কলম। শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে তাকে বহিস্কার করেছে বিএনপি। তিনি জনগণকে অন্যায় অবিচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
এদিকে গতকাল শুক্রবার বিকালে স্থানীয় একটি কমিউনিটি হলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী খোরশেদ আলম চৌধুরী।
এতে তিনি অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া) আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি (এমপি) স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলের পক্ষে কাজ করছেন।
এ ব্যাপারে তিনি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন সচিব বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আগামীকাল অনুষ্ঠেয় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে লিখিত বক্তব্যে জানান। তিনি আশঙ্কা করছেন, এমপির প্রভাবে এখানে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পিপি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি জান মোহাম্মদ সিকদার, যুগ্ম সম্পাদক ফরিদ আহমদ, দপ্তর সম্পাদক তৈয়বুল হক বেদার ও কার্যনির্বাহী সদস্য মামুনুর রশিদ চৌধুরী।
লোহাগাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। এরা চারজনই সরকার সমর্থক। এরা হলেন এম ইব্রাহীম কবির (টিউবওয়েল), আরমান বাবু (তালা), মিজানুর রহমান মিজান (মাইক) ও এস এম মামুন (চশমা)।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন চারজন। তারা হলেন, লোহাগাড়ার জেসমিন আক্তার (কলসি), কলাউজানের জেসমিন আক্তার (ফুটবল), পারভিন আক্তার (প্রজাপতি) ও শাহিন আক্তার সানা (হাঁস)।
এখন দেখার বিষয় ভোটকেন্দ্রে ভোটারা যাচ্ছেন কি না। আর ভোটার গেলেও ভোট সুষ্ঠু হবে কি না। চূড়ান্তভাবে কারা নির্বাচিত হচ্ছেন তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে ভোটের ফল পর্যন্ত।
সূত্র : নয়াদিগন্ত