ব্রেকিং নিউজ
Home | ব্রেকিং নিউজ | লোহাগাড়ায় খুন-অপহরণসহ নানা অপকর্মে জড়িত রোহিঙ্গারা

লোহাগাড়ায় খুন-অপহরণসহ নানা অপকর্মে জড়িত রোহিঙ্গারা

এলনিউজ২৪ডটকম : লোহাগাড়ার বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশে চাকুরি ও বসবাস করে আসছে অনেক রোহিঙ্গা। সুযোগ বুঝে তারা খুন-অপহরণসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এই সমস্যা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এতে আতংকের মধ্যে আছেন স্থানীয়রা। রোহিঙ্গাদের চাকুরী কিংবা বসবাসের স্থান না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।

জানা যায়, ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর উপজেলা সদরের দরবেশহাট সওদাগর পাড়ায় নিজ গরুর খামারে দুই রোহিঙ্গা কর্মচারী টাকার লোভে মাথায় কোদালের আঘাত ও গলা কেটে হত্যা করে জাতীয় পার্টির নেতা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে। এরপর খামারের পেছনে গর্ত করে তাকে মাটি চাপা দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। ঘটনার এক মাস পর ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মো. আসিফ (২৭) ও আনছার উল্লাহ (২৮) নামে দুই রোহিঙ্গা কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে আনোয়ার হোসেনের গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।

অপরদিকে, চলতি সনের ১৬ ফেব্রুয়ারি চরম্বা ইউনিয়নের বাইয়ার পাড়ার ফকিরের বাপের খিল এলাকায় দূর্গম পাহাড়ে আহম্মেদ কবির (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের মরদেহ পাওয়া যায়। তার বাড়িতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করা দুই রোহিঙ্গা যুবক ওই বৃদ্ধকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যকান্ডের সাথে জড়িত মো. আমিন নামে এক রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে। তার দেয়া তথ্য মতে জানা যায়, দৈনিক মজুরী কাঙ্খিত পরিমাণে না দেয়া ও ঘটনারদিন বৃদ্ধ আহম্মেদ কবিরের কাছ নগদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা থাকায় ক্ষোভ-লোভে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

এছাড়া, গত ৮ ডিসেম্বর উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের বাগান পাড়া থেকে আবদুল্লাহ আল মিনহাজ (৭) নামে এক শিশুকে অপহরণ করে তার পিতার মুরগির খামারের কর্মচারী রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ নুর। শিশু মিনহাজ ওই এলাকার মোহাম্মদ ফরিদুল আলমের পুত্র। রোহিঙ্গা কর্মচারী তাদের খামারে কাজ করার সুবাধে শিশুটির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে। ঘটনারদিন সম্প্রতি চালু হওয়া রেললাইনে ট্রেন দেখতে নিয়ে যাবার কথা বলে শিশুটিকে নিয়ে যায় রোহিঙ্গা নুর। পরে ওই শিশুকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরানোর পর মুঠোফোনে পরিবারের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। অন্যথায় শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। দুই ধাপে শিশুর পরিবার ৪০ হাজার টাকা অপরহণকারী রোহিঙ্গার কাছে পাঠান। তারপরও শিশুটিকে ছেড়ে দেয়া হয়নি। এই ঘটনায় শিশুর পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তারই প্রেক্ষিতে রোববার (১০ ডিসেম্বর) জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অভিযান চালিয়ে কক্সবাজারের একটি রিসোর্ট থেকে অপহৃত শিশু ও অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে।
স্থানীয়রা জানান, কম পারিশ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর যায় রোহিঙ্গাদের। এতে অনেকে অর্থ সাশ্রয়ের জন্য ক্ষেত-খামার, দোকানসহ বিভিন্ন কাজে রোহিঙ্গাদের দিনমজুরের কাজ করাচ্ছেন। আবার অনেক রোহিঙ্গা ছন্দবেশে বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছে। এই সুযোগে রোহিঙ্গারা খুন ও অপহরণসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় একটি কুচক্রি মহলের সহযোগিতায় বসতঘর নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে। এভাবে রোহিঙ্গা বিচরণ বাড়তে থাকলে অনিরাপদ হয়ে উঠবে পুরো উপজেলা। রোহিঙ্গাদের তাদের ক্যাম্পের বাইরে যাতে কেউ আশ্রয়-পশ্রয় না দেয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ কামনা করেছেন।

চট্টগ্রাম জেলার পরিষদের সাবেক সদস্য আনোয়ার কামাল জানান, স্থানীয় কিছু কুচক্রি মহলের সহযোগিতায় বিভিন্ন সময়ে উপজেলার চুনতি, পুটিবিলা, কলাউজান ও চরম্বা ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় বসতঘর নির্মাণ করে বসবাস করছে অনেক রোহিঙ্গা। এছাড়া অনেক রোহিঙ্গা যুবক ঘরজামাই হয়ে থাকছে। আবার অনেক রোহিঙ্গা বসবাসের সুবাধে জাতীয় পরিচয়পত্রও বানিয়ে ফেলেছে। এছাড়া অনেকে পারিশ্রমিক কম দিয়ে কাজ করানোর জন্য রোহিঙ্গাদের কাজ দিচ্ছে। যার ফলে সুযোগ বুঝে রোহিঙ্গারা চুরি, ডাকাতি, খুন, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েছে। লোহাগাড়ায় রোহিঙ্গা এখন বিষপোড়ায় পরিণত হয়েছে। দ্রুত যাচাই-বাচাই করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ না করলে আগামীতে তারা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, সম্প্রতি তার ইউনিয়ন থেকে এক শিশুকে অপহরণ করে রোহিঙ্গা কর্মচারী। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কক্সবাজার থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেন। তারই প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন পরিষদে জরুরী সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় স্ব স্ব ওয়ার্ডের মেম্বার ও চৌকিদার মিলে প্রতিটি মুরগির খামারে কর্মরত কর্মচারীর তথ্য সংগ্রহ করবেন। এছাড়া শুরু থেকে এলাকাবাসীকে সচেতন করতে আসছি, যাতে কোন রোহিঙ্গাকে যেন কাজ দেয়া না হয়।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইনামুল হাছান জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়-পশ্রয় কিংবা দিনমজুর হিসেবে কাজ করাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরির জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হবে। এছাড়া সামনের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!