লোহাগাড়ায় হাম-রুবেলা টিকা দেয়ার পর পরই শিশুর মৃত্যু

এলনিউজ২৪ডটকম : লোহাগাড়ায় হাম-রুবেলা টিকা দেয়ার পর পরই নাওরাত হানিফ (৭) নামে এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিকে উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সিকদার পাড়ায় সমশু চেয়ারম্যান বাড়ির টিকাদান কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নাওরাত হানিফ ওই এলাকার হানিফ চৌধুরী শিমুলের মেয়ে ও চট্টগ্রাম মর্ডাণ ইনস্টিটিউটের নার্সারীর ছাত্রী।

এ ঘটনায় একই এলাকার আনোয়ার হোসেন টিপুর ছেলে মোস্তাকিম মো. আবদুল্লাহ (৩) ও শহিদুর রহমানের পুত্র মুসফিকুর রহমান শুভ (৯) টিকা নেয়ার পর অসুস্থবোধ করে। তবে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তারা সুস্থ হয়ে যায়। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, টিকা নেয়ার পর শিশু মৃত্যুর খবরের আতংকে তারা অসুস্থবোধ করছিল।

ওই টিকাদান কেন্দ্রে দায়িত্বরত ছিলেন উপজেলা সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক সীমা চৌধুরী, ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য সহকারী আনোয়ার হোসেন, পরিবার কল্যাণ সহকারী ঝর্ণা রাণী দাশ ও স্বাস্থ্য সহকারী জেবুন্নিছা।

সরেজমিনে গিয়ে দেয়া যায়, টিকা নেয়ার পর শিশুর মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শত শত লোকজন ঘটনাস্থলে জড়ো হয়। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতংক। তবে ঘটনার পর পরই স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপদস্থানে রাখেন নিহত শিশুর স্বজনরা। তাই কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

শিশুর পিতা হানিফ চৌধুরী শিমুল জানান, তার মেয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল। প্রতিদিনের ন্যায় সকালে ঘুম থেকে উঠে খেলাধুলাও করেছে। সকালে হাম-রুবেলা টিকা দেয়ার জন্য টিকাদান কেন্দ্রে নিয়ে যান তিনি। টিকা দেয়ার প্রায় ১৫ মিনিট পর তার মেয়ে মাথা ঘুরা ও ঘাড় ব্যাথা করার কথা বলে। এরপর অজ্ঞান হয়ে যায়। বিষয়টি টিকাদান কেন্দ্রের স্বাস্থ্য কর্মীদের জানানো হয়। তারা মেয়েকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাবার জন্য বলেন। তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা সদরের এক বেসরকারী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরো জানান, শিশুকে টিকা দেয়ার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রতিটি টিকাদান কেন্দ্রে টিকার প্রভাব প্রতিরোধক ভ্যাকসিন রাখার নিয়ম থাকলেও তারা রেখেননি। ফলে স্বাস্থ্যকর্মীদের অবহেলায় তার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের শাস্তি দাবী করেছেন।

উপজেলা সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক সীমা চৌধুরী জানান, নিয়মমত টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। এক ডোজ থেকে ১০ জনকে টিকা দেয়া হয়। টিকা নেয়া অন্য শিশুরা স্বাভাবিক আছে। কিন্তু কি কারণে একটি শিশুর এমন ঘটনা ঘটেছে তা বুঝতে পারছি না।

লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকের হোসাইন মাহমুদ জানান, খবর পেয়ে দ্রæত ঘটনাস্থলে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছে। পরে আমি নিজেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নিহত শিশুর লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনার ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি।

লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ জানান, এ ঘটনায় জেলা সিভিল সার্জনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ঘটনা করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাবার পর শিশুর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। টিকাদানে কোন অবহেলা থাকলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসান হাবিব জিতু, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকের হোসাইন মাহমুদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা শিশুর স্বজনদের সাথে কথা বলেন এবং শান্তনা দেন। পরে মুছলেকা নিয়ে স্বাস্থকর্মীদেরকে তাদের কাছে হস্তান্তর করেন নিহত শিশুর স্বজনরা। এছাড়া রাত সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। একইদিন এশার নামাজের পর শিশুটিকে পারিবারিক
কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।