Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে প্রধানমন্ত্রীর ৩ প্রস্তাব

রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে প্রধানমন্ত্রীর ৩ প্রস্তাব

24-09-18-BD-PM_Addressing-At-High-Level-Meeting-On-Refugees-At-UNHQ-3-copy-FILEminimizer

নিউজ ডেক্স : এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে তিনটি প্রস্তাব বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সঙ্কটের ভুক্তভোগী দেশের সরকার প্রধান হিসেবে গতকাল সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে প্রস্তাবগুলো দেন তিনি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছনোর পরদিনই এই বৈঠকে যোগ দিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। খবর বিডিনিউজের।

জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশানার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডির সভাপতিত্বে সোমবারের বৈঠকে সঙ্কট অবসানে যে তিন প্রস্তাব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয় সেগুলো হল– প্রথমত, মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আইন ও নীতি বাতিল এবং বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক স্থানান্তরিত করার প্রকৃত কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নাগরিক সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে একটি ‘সেফ জোন (নিরাপদ অঞ্চল)’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তৃতীয়ত, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সুপারিশের আলোকে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নৃশংসতার হাত থেকে বাঁচাতে হবে।

বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যেখানে তারা শতাব্দী ধরে বসবাস করত, সেখান থেকে তাদের জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।’ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিলেও ভিন্ন দেশের এই নাগরিকদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার কথাও তিনি আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে জানান। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের আরাকানের এই বিপুল সংখ্যক নাগরিকদের স্থান দেওয়ার বিরূপ প্রভাব আমাদের সমাজ, পরিবেশ ও অর্থনীতির উপর পড়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল সরকার হিসাবে আমরা আমাদের সীমানা খুলে দিয়েছি এবং জোরপূর্বক স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা কেবল তাদের জীবনই বাঁচাইনি, আমরা অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছি। আমরা চাই রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে তাদের মূল ভূমিতে ফিরে যাক।’ রোহিঙ্গাদের সাময়িকভাবে ভাসান চরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তাদের প্রত্যাবর্তন না হওয়ায় আমরা তাদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছি। ভূমির স্বল্পতা এবং সামাজিক–সাংস্কৃতিক ও পরিবেশের ওপর প্রভাবের কারণে আমরা তাদের ভাসান চর নামে একটি নতুন দ্বীপে স্থানান্তরিত করতে যাচ্ছি। সেখানে তাদের আরও ভালো জীবনযাত্রা নিশ্চিত হবে।’

রোহিঙ্গাদের সাহায্যে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এগিয়ে আসার প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি একই সঙ্গে বলেন, ‘দুঃখজনক বিষয় হল, জাতিসংঘের ২০১৮ সালের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য ৯৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দরকার হলেও মাত্র ৩৩ শতাংশ তহবিল নিশ্চিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য আক্রান্ত জনগোষ্ঠির জন্য মানবিক সাহায্য ও সহযোগিতা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে আরও দায়িত্বশীল মনোভাব দেখাতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোকেই এই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো মানবতার ডাকে সাড়া দিয়েই তা করে।’ উন্নয়নশীল দেশগুলোর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্বনেতাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকে অবশ্যই ভুলে গেলে চলবে না যে, প্রত্যেক উদ্বাস্তু তার নিজের দেশে নিরাপদে ফেরত যেতে চায়। মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন মানুষকে নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে তাদের ঘরে ফিরে যেতে হবে।’

সোমবার এই বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিশনের আয়োজনে ‘গ্লোবাল কল টু অ্যাকশন অন ড্রাগ প্রবলেম’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেন। এবারের সাধারণ অধিবেশনে শেখ হাসিনা ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পক্ষে তার বক্তব্য তুলে ধরবেন। গতবারের মতো এবারও তার ভাষণে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ গুরুত্ব পাবে বলে জানানো হয়েছে। গত বারের সাধারণ অধিবেশনে তিনি রোহিঙ্গাদের রক্ষায় পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরে তাতে বিশ্বনেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!