Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | রোহিঙ্গা ডাকাতেরা বেপরোয়া : জনমনে আতংক

রোহিঙ্গা ডাকাতেরা বেপরোয়া : জনমনে আতংক

ডাকাত-800x450-620x330

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : গোয়ালিয়াপালং এলাকায়গণপিটুনীতে ১০ ডাকাত নিহত হওয়ার ঘটনার পর থেকে উখিয়ায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণের মতো ভীতিকর কোন ঘটনা ঘটেনি। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ব্যস্ত থাকার সুযোগে অস্ত্রধারী ডাকাতদল ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব ডাকাতের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা ডাকাত। যাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে একাধিক ডাকাতি, খুন ও অস্ত্র লুটের মামলা রয়েছে বলে রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছেন। গত ২০ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের সংমিশ্রনে গঠিত ১৮/২০জনের সংঘবদ্ধ ডাকাতদল উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের হাতিরঘোনা কুতুয়াবাদ গ্রামে বেলাল আহমদ সওদাগরের বাড়ীতে হানা দেয়। এসময় ডাকাতদল শঠামীর আশ্রয় নিয়ে পুলিশ পরিচয়ে দরজা খুলতে বললে বাড়ীতে থাকা লোকজন দরজা খোলার সাথে সাথে ডাকাতেরা হুমড়ি খেয়ে বাড়ীতে ঢুকে পড়ে। এসময় ডাকাতদল এলোপাতাড়ী ছুরিকাঘাত ও মারধর করলে বেলাল সওদাগরের স্ত্রী,পুত্র,কন্যা,পিতা-মাতাসহ প্রায় ১০জন আহত হয়। বেলাল সওদাগর জানান, ডাকাতেরা নগদ টাকা স্বর্ণালংকার সহ প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করেছে। ২৫ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরের দিকে উখিয়া থানা পুলিশ হিজলিয়া থেকে ডাকাতদলের সদস্য মনজুর আলম (২৫) কে আটক করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গত ২২ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে উখিয়ার বালুখালী পরিত্যাক্ত সড়ক ও জনপদ বিভাগের অফিস বাউন্ডারী এলাকায় একদল ডাকাত ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৭ সদস্যরা ডাকাতদের অবস্থানস্থল ঘিরে ফেলে। ডাকাতেরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন আসার খবর পেয়ে কিছু কিছু ডাকাত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও র‌্যাব সদস্যরা ধাওয়া করে মিয়ানমারের বুচিডং এলাকার মোহাম্মদ শফির পুত্র রশিদ উল্লাহ(২৭)কে গ্রেফতার করে। র‌্যাব সদস্যরা একটি শোটার গান, ৫টি কার্তুজ ও ২ কিরিচ উদ্ধার করে। র‌্যাব-৭ এর কোম্পানী কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন জানান, রোহিঙ্গা যত্রতত্র বিচরণের সুযোগ পেয়ে সশস্ত্র রোহিঙ্গা ডাকাতদল বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সোর্স মারফত খবরের ভিত্তিতে এসব চিহ্নিত রোহিঙ্গা ডাকাতদের আটক করতে র‌্যাব সদস্যরা তৎপর রয়েছে। গত ২৩ ডিসেম্বর ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের হোয়াইক্যং মিনা বাজার এলাকা অস্ত্রধারী ডাকাতদল গাছ ফেলে সড়কে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি করে। এসময় উভয় দিক থেকে আসা যাত্রী,পর্যটকবাহী, মালামাল বহণকারী ট্টাক, কার,নোহা ও মাইক্রোসহ ১৫টি যানবাহনে ২০/২৫জনের মুখোশধারী ডাকাতদল প্রায় ঘন্টাব্যাপী লুটপাট চালিয়ে যাত্রীদের নগদ টাকা,স্বর্ণালংকার, মোবাইল ও মূল্যবান জিনিসপত্রসহ কোটি টাকার মালামাল লুটপাট করে ডাকাতদল নিকটস্থ পাহাড়ের দিকে চলে যায়। পরে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে রাস্তায় ফেলে রাখা গাছ সরিয়ে যানবাহন চলাচল স্বচল রাখে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ডাকাত কর্তৃক আক্রান্ত টেকনাফ উপজেলা শ্রমিক নেতা নাজু মিয়া ড্রাইভার জানান, ডাকাতদের এলোপাতাড়ী ছুরিকাঘাত ও মারধরে প্রায় ১৮/২০যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছে। হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির এসআই রাজীব বড়–য়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলে রোহিঙ্গারা বেপরোয়া চলাচলের সুযোগের কারনে ডাকাতির,ছিনতাই,অপহরণের মতো ঘটনা বেড়েছে। রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক ও সেক্রেটারী মোহাম্মদ নুর জানান মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সংঘবদ্ধ অস্ত্রধারী গত ১এপ্রিল থেকে আগষ্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হানা দিয়ে প্রায় ১০জন রোহিঙ্গা ১জন স্থানীয়সহ ১১জনকে অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে। পরে উখিয়া থানা পুলিশ , স্থানীয় গ্রামবাসি ও রোহিঙ্গারা ব্যাপক তল্লাশী চালিয়ে মধুরছড়া ও বালুখালী এলাকা হাত-পা বাধা জবাই করা অপহৃতদের লাশ উদ্ধার করলেও অপহরণকারীদের তথ্য উৎঘাটনে ব্যর্থ হয়েছেন পুলিশ। যে কারনে বর্তমানে উখিয়ার গ্রামাবাসি ও সচেতন মহলের মাঝে ডাকাত আতংক বিরাজ করছে।  ২৩ডিসেম্বর আইনশৃংখলা কমিটির সভায় এলাকায় খুন,রাহাজানী, ডাকাতি,সন্ত্রাসী বেঁড়ে যাওয়ার কারণে সংসদ আব্দুর রহমান বদি ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে পুলিশকে আরো আন্তরিকতার সাথে দায়িত্বপালন করার নির্দেশ দেন। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের জানান, বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্টি নিয়ন্ত্রণে চাহিদা অনুপাতে জনবল না থাকার কারনে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!