ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | মাতারবাড়িতে ভিড়েছে বিশেষায়িত জাহাজ ‘এক্সিলেন্স’

মাতারবাড়িতে ভিড়েছে বিশেষায়িত জাহাজ ‘এক্সিলেন্স’

P-1-33

নিউজ ডেক্স : তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির প্রথম চালান নিয়ে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ভিড়েছে বিশেষায়িত জাহাজ ‘এক্সিলেন্স’। কাতার থেকে তরলীকৃত গ্যাস নিয়ে জাহাজটি গতকাল বিকেলে এসেছে পৌঁছেছে। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৪টা নাগাদ জাহাজটি সোনাদিয়া জিরো পয়েন্টে ভিড়ে। এই জাহাজটি ২৭৭ মিটার লম্বা, ৪৪ মিটার প্রস্থ এবং ১২ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশ)। জাহাজটিতে রয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ঘনমিটার তরল গ্যাস।

তথ্যমতে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় জাহাজ আগে আসেনি। এটি সবচেয়ে বড় বিশেষায়িত জাহাজ। আমেরিকান কোম্পানির জাহাজটি কাতার থেকে এলএনজি নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। এরপর এটি ব্যবহৃত হবে ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) হিসেবে। জাহাজটি উপকূল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করবে ভাসমান টার্মিনাল হিসেবে। ১৫ বছর বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি জাহাজ ভাড়া পাবে। এরপর এটি বাংলাদেশ সরকারের মালিকানায় চলে আসবে।

প্রাকৃতিক গ্যাসকে শীতলকরণ (রেফ্রিজারেশন) প্রযুক্তির মাধ্যমে তাপমাত্রা কমিয়ে মাইনাস ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে তরলে (এলএনজি) পরিণত করা হয়। ‘এক্সিলেন্স’ জাহাজটিতে এলএনজিকে সমুদ্রের পানির উষ্ণতা ব্যবহার করে আবার প্রাকৃতিক গ্যাসে রূপান্তর করা হবে। এরপর পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ইতোমধ্যে মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৯১ কিলোমিটার পাইপলাইনের কমিশনিং (গ্যাস ঢুকিয়ে সফল পরীক্ষা) সম্পন্ন করা হয়েছে। জাহাজটি গ্যাস খালাস করতে নানা প্রক্রিয়া রয়েছে। তা করতে এক মাস সময় লাগবে। খালাস ও বিতরণ প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিডিনিউজ জানায়, মহেশখালীতে দেশের প্রথম এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে টার্মিনাল ইউজ এগ্রিমেন্টে অনুস্বাক্ষর করে পেট্রোবাংলা। প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘন মিটার এলএনজি ধারণক্ষমতার ওই টার্মিনালের রিগ্যাসিফিকেশন বা তরল থেকে গ্যাসে রূপান্তরের ক্ষমতা রয়েছে দিনে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট।

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক–ই–ইলাহী চৌধুরী বলেন, আমদানির এলএনজি থেকে চট্টগ্রামে দৈনিক ৩০০ থেকে সাড়ে তিন’শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হবে। বাকিটা পাঠানো হবে ঢাকায়। এর ফলে চট্টগ্রাম ও অন্যান্য জায়গায় গ্যাসের যে চাহিদা রয়েছে তা অনেকটা মিটবে। আমদানির ফলে আমরা এখন নতুন সংযোগও দিতে পারব।

দেশে মোটামুটি ৩৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে পেট্রোবাংলার হিসাবে সোমবার সরবরাহ ছিল ২ হাজার ৫৭৭ মিলিয়ন ঘনফুট। দেশে গ্যাসের উৎপাদন সীমিত হওয়ায় চাহিদা থাকার পরও সার, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন উৎপাদনশীল খাত এবং বাসাবাড়ি ও বাণজ্যিক খাতে সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় মহেশখালীতে লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল তৈরির উদ্যোগ নেয়। কিন্তু নানা জটিলতায় ওই মেয়াদের পাঁচ বছরে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভাসমান এই টার্মিনাল ছাড়াও মহেশখালী, খুলনা ও পটুয়াখালীর পায়রায় আরো কয়েকটি ভাসমান ও ভূমিভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, টার্মিনাল নির্মাণ ও অন্যান্য খরচ হিসেবে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের জন্য তাদের ৪৯ সেন্ট করে দিতে হবে। অন্যান্য খরচ যোগ হওয়ার পর তা ৫৯ সেন্টের মতো হবে। ১৫ বছর পর মহেশখালীর টার্মিনাল ও এফএসআরইউ কোনো বিনিময়মূল্য ছাড়া পেট্রোবাংলার কাছে হস্তান্তর করা হবে।

বাংলানিউজ সূত্রে জানা যায়, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা বলেন, আনোয়ারা থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের আরো ৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। যদি সীতাকুণ্ড পর্যন্ত পাইপলাইন তৈরির কাজ শেষ না হয়, তবে আপাতত এলএনজি থেকে পাওয়া গ্যাস শুধু চট্টগ্রামে সরবরাহ দেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রামের গ্যাস সংকট নিয়ে চেম্বার বরাবরই সোচ্চার ছিল। বর্তমান সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে, কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। কাতার থেকে জাহাজে এলএনজি গ্যাস আমদানি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এর ফলে শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারা দেশের গ্যাস সংকট ক্রমে নিরসন হবে।

তিনি বলেন, গ্যাসের অভাবে অনেক কারখানা যেমন মুখ থুবড়ে পড়েছিল, তেমনি অনেকে বিনিয়োগ করেও উৎপাদন ক্ষমতা সংকুচিত করেছিল। এখন তারা নির্বিঘ্নে উৎপাদনে যেতে পারবে। নতুন নতুন আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণ হবে, বৈদেশিক আয় বাড়বে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!