ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় শিশুর কপাল কেটে ফেলায় আয়া এবং নার্সের বিরুদ্ধে মামলা

ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় শিশুর কপাল কেটে ফেলায় আয়া এবং নার্সের বিরুদ্ধে মামলা

জন্মের পর শিশুটিকে দেখতে দেয়া হচ্ছিল না। (প্রতীকী ছবি)

নিউজ ডেক্স : ফরিদপুর জেলায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের বদলে আয়া ও নার্স দিয়ে প্রসবের সময় নবজাতকের কপাল কেটে যাওয়ার ঘটনায় মামলা করেছে পরিবার। এই ঘটনায় আয়া ও নার্স সহ হাসপাতালের দুই পরিচালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ডাক্তারের বদলে নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া চিকিৎসা দিয়েছেন এমন ঘটনা একদম নতুন নয়।

যা ঘটেছিল হাসপাতালে

রাজবাড়ির গোয়ালন্দ উপজেলার শফি খান জীবনে প্রথমবারের মতো বাবা হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। স্ত্রী রুপা বেগমকে তার বাবা-মায়ের বাড়িতে রেখে ঢাকায় গিয়েছিলেন পেশায় পেয়ারা চাষি মি. খান। গতকাল সকাল সাড়ে আটটার দিকে হঠাৎ ফোন এলো, তার স্ত্রীর প্রত্যাশিত সময়ের দিন দশেক আগেই প্রসব বেদনা উঠেছে।

তখন তিনি শ্বশুরকে বললেন ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যেতে। এরপর নিজেও ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। আর অন্যদিকে গাড়িতে করে রুপা বেগমকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হলো।

হাসপাতাল
ছবির ক্যাপশান,বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে দালাল চক্র সক্রিয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

শফি খান বলছিলেন, “ওরা বুঝতে পারেনি। এক দালাল এসে বলল রাস্তার ওপারে একটা প্রাইভেট হাসপাতাল আছে। ওখানে তাড়াতাড়ি হবে, যেহেতু আমার স্ত্রীর অনেক ব্যথা হচ্ছিল। ওরা তাই করলো।”

আর সেটাই হলো কাল। রুপা বেগমকে নিয়ে যাওয়া হলো রাস্তার ওপারে মদিনা প্রাইভেট হাসপাতালে। অনেক সময় পার হয়ে গেলেও কোন খবর না পেয়ে শফি খানের পরিবারের সদস্যরা বারবার জানতে চাইছিলেন। তাদের বলা হলো মেয়ে শিশু হয়েছে কিন্তু কিছুতেই দেখতে দেয়া হচ্ছিল না নবজাতককে।

“বাইরে থেকে হঠাৎ আমার বাচ্চাটার ভয়াবহ চিৎকার আসছিল। যেটা স্বাভাবিক মনে হয় না। তখনও ঢুকতে দেবে না। পরে আমার বোন জোর করে ভেতরে ঢুকে দেখে যে বাচ্চাটার মাথায় সেলাই দিচ্ছে। আমার প্রথম বাচ্চা। মেয়েটার সাথে এটা কি হলো? আমার বাচ্চাটা কি কষ্টটাই না পাইছে”, কাঁপা গলায় বলছিলেন শফি খান।

প্রথমে কেউই বুঝতে পারছিলেন না কী ঘটেছে। পরে জানতে পারলেন, কোন চিকিৎসকের উপস্থিতি ছাড়াই একজন আয়া ও নার্স তার স্ত্রীর প্রসব করিয়েছেন।

শিশুর পা
ছবির ক্যাপশান,শিশুটির কপালে নয়টি সেলাই দিতে হয়েছে। (প্রতীকী ছবি)

সমস্যা দেখা দিয়েছিল, যখন প্রসবের পথ নবজাতকের মাথা বের হওয়ার জন্য যথেষ্ট প্রসারিত হচ্ছিল না।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, “তারা নিজেরাই ভদ্রমহিলার এপিসিওটমি করেছে। মানে বাচ্চা বের হতে সমস্যা হলে প্রসবের রাস্তার পাশে একটু কেটে প্রসারিত করা হয়। বাচ্চা হওয়ার সময় এটা প্রায়শই করা দরকার হয়। কিন্তু তারা ঠিক মতো করতে পারেনি। সেটা করতে গিয়ে তারা বাচ্চাটার কপালের বাঁদিক এবং বাঁ চোখের উপরের পাতার বেশ কিছু অংশ কেটে ফেলে।”

তিনি জানিয়েছেন সেখানে নার্স হিসেবে যিনি কাজ করছিলেন তিনি এমনকি পাশ করা নার্সও ছিলেন না। কাঁচি দিয়ে এপিসিওটমি করতে হলে যে হাত দিয়ে কাটা হয়, অন্য হাত দিয়ে তখন যোনিপথে দুই আঙুল ঢুকিয়ে কাঁচির সামনে বাধা সৃষ্টি করতে হয় যাতে অন্য কোন কিছু কেটে না যায়। ডা. রহমান জানিয়েছেন, সেটি করা হয়নি বলেই শিশুটি আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে।

যে ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ

এই ঘটনাটি জানা মাত্রই স্থানীয় পুলিশ ও সিভিল সার্জন মদিনা প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে হাজির হন। ডা. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “সেখানে গিয়ে দেখি বাচ্চাটাকে নয়টা সেলাই দিতে হয়েছে। তারা নিজেরাই দিয়েছে। সেটা ঠিকমতো হয়নি। মায়ের যে এপিসিওটমি করেছে সেটাও ঠিকঠাক হয়নি। এরপর মা এবং বাচ্চাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।”

এপিসিওটমি কেচি
ছবির ক্যাপশান,এই ধরনের কাঁচি দিয়ে সাধারণত এপিসিওটমি করা হয়।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার অপারেশন্স বিষয়ক পরিদর্শক মোঃ আব্দুল গাফফার জানিয়েছেন, ঘটনার সাথে জড়িত আয়া ও নার্স, হাসপাতালের পরিচালকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিকেলের দিকে হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এই ঘটনায় বাদী হয়ে গত রাতেই মামলা করেছেন শফি খান। আজই গ্রেফতার চারজনকে আদালতে তোলা হয়েছে।

শিশু ও তার মায়ের এখন যা অবস্থা

শফি খান জানিয়েছেন, কপালে সেলাই ছাড়া নবজাতকের অন্যকোন আঘাত নেই। সে শারীরিকভাবে ভালো আছে। কিন্তু রুপা বেগমের অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাই তাকে তিন ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে।

তিনি বলছিলেন, শিশুটির জন্য কয়েকটি নাম চিন্তা করছিলেন তারা। এখন সেই নাম নিয়েও ভাবতে পারছে তারা পরিবার।নবজাতকের প্রথম কান্না যে আনন্দ দেয়, শফি খানের পরিবারের বেলায় তা বরং সবার দুঃখ এবং উৎকণ্ঠার কারণ হলো। -বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!