ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | বৃহস্পতিবার আতঙ্ক : দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাজারো যাত্রীর

বৃহস্পতিবার আতঙ্ক : দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাজারো যাত্রীর

CTG

নিউজ ডেক্স : দক্ষিণ চট্টগ্রামে পরিবহন সেক্টরে চলছে চরম নৈরাজ্য। গাড়ির কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছেন যাত্রীরা। এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে এখন বাড়তি দুর্ভোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে বৃস্পতিবার আতঙ্ক! সপ্তাহের ছুটির দিনের আগের দিন বৃস্পতিবার আসলেই এক শ্রেণির অতিলোভী পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রীদের পকেট কাটতেই তৎপর হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী যাত্রীদের। অফিস আদালত বন্ধের আগের দিন বৃহস্পতিবার ছাড়াও অফিস আদালত খোলার দিন শনি–রবিবারও গাড়ির কৃত্রিম সংকট ও বাড়তি ভাড়া গুণতে হয় যাত্রীদের।

যাত্রীদের অভিযোগ, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় প্রতি বৃস্পতিবার দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাজার হাজার যাত্রী নাড়ির টানে বাড়ি ফিরেন। চট্টগ্রাম নগরী ছাড়াও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত মানুষ প্রতি বৃহস্পতিবার বাড়িতে আসেন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতি বৃস্পতিবার বিকেল থেকেই শাহ আমানত সেতু এলাকায় যাত্রীবাহী গাড়ির কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এক শ্রেণীর অতিলোভী পরিবহন শ্রমিকরা। ২০ টাকার নির্ধারিত ভাড়া ৪০–৫০। ৫০ টাকার ভাড়া ৮০–১০০টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয় বলে অভিযোগ করেন ভোক্তভোগী যাত্রীরা। এতে বেশি বেকায়দায় পড়েন স্বল্প বেতনের চাকুরি করা বিভিন্ন পেশাজীবী ও নিয়মিত আসা যাওয়া করা যাত্রীরা। অনেক যাত্রী জানান, তাদের বেতন ও আয়ের সাথে যাতায়াত খরচ অনেক কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে। তার উপর প্রতি সপ্তাহে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হলে আমাদের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে ওঠে।

জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী জানান, কর্ণফুলী এলাকার যাত্রীরা পরিবহন নিয়ে অবর্ণীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নগরীর থেকে কর্ণফুলীর দূরত্ব দেড় দুই কিলোমিটার হলেও নগরীর কোন গাড়ি ব্রিজের টোল দিতে হয় বলে আসেন না। শাহ আমানত সেতু থেকে ছাড়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের পরিবহনগুলোতে গাড়ি খালি থাকলেই কর্ণফুলীর যাত্রীদের গাড়িতে নেয়া হয়। যা আমি মাননীয় ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে উত্তাপণ করেছি। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুবই জরুরি।

কর্ণফুলী ব্রীজ এলাকায় সব চাইতে বেশি ভোগান্তির শিকার হয় পটিয়া ও কর্ণফুলী এলাকার যাত্রীরা। কারণ পটিয়া ও কর্ণফুলী এলাকার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে আসা যাওয়া করে। কর্ণফুলী উপজেলা চট্টগ্রাম শহর থেকে কাছে হলেও কর্ণফুলী শাহ আমানত ব্রিজ এলাকায় ছোট ছোট পরিবহন না থাকায় দূরপাল্লার পরিবহনগুলো ওই এলাকার যাত্রীদের কম ভাড়ায় ও কম দূরন্তে নিতে চাইনা। অপর দিকে পটিয়া এলাকার হাজার হাজার যাত্রী নগরীর সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে। নগরী থেকে পটিয়ার দূরত্ব তুলনামূলক কম হওয়ায় এর ৯০ভাগ যাত্রীই প্রতিদিন নগরীতে যাতায়াত করে থাকে। এর মধ্যে কম বেতনে চাকুরি ও ছোট খাট ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন যাতায়াত করতে গিয়ে বাড়তি ভাড়া নিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তার ওপর গাড়ির কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে যাত্রীদের জিম্মি করে চলে বাড়তি ভাড়া নেয়ার মহড়া। গাড়ির কৃত্রিম সংকটের কারণে শত শত যাত্রীকে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শাহ আমানত সেতু এলাকায় গাড়ির জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক মো. ইয়াসিন জানান, যাত্রী হয়রানি কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়। বৃহস্পতিবার কর্ণফুলী ব্রিজে যাত্রীদের একটা চাপ থাকে। সে অনুযায়ী পরিবহন সংকট থাকে। যার কারণে মানুষ গাড়ির জন্য কষ্ট পায়। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে কিছু গাড়ির শ্রমিক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। অনেক ড্রাইভার সন্ধ্যার পর গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেয়। এতে গাড়ির সংকট দেয়া দেয়। এ দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে রিজার্ভ ভাড়া মারা বন্ধ করতে হবে। সাথে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে যৌথ সভা আহ্বানের মাধ্যমে এ সমস্যা নিরসন করা সম্ভব। লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালীর গাড়ির রিজার্ভ বন্ধ করতে হবে।

এ বিষয়ে এডভোকেট খুরশিদ আলম নামের এক যাত্রী জানান, আমি প্রতিদিন পটিয়া থেকে নগরীতে আসা যাওয়া করি। বৃহস্পতিবার ছাড়া প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যাত্রীদের সাথে শ্রমিকদের দুর্ব্যবহার ওপেন সিক্রেট বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অফিস আদালত বন্ধের আগের দিন রিজার্ভের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। এ গুলো ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বাস শ্রমিকদের বেপরোয়া ভাড়া নেয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রিজার্ভের নামে রাস্তায় রাস্তায় গাড়ি রেখে যানজট সৃষ্টি করা হয়। অথচ এ গাড়িগুলো সুযোগ বুঝে, যাত্রীদের হয়রানি করে পরে অতিরিক্ত দুই তিনগুণ ভাড়া নিয়ে ছাড়া হয়।

বিআরটিসি বাসগুলোও সন্ধ্যার পর থেকে পাওয়া যায় না। এ ছাড়া থাকে গাড়ির অপ্রতুলতা। যার ফলে বৃহস্পতিবার যাত্রীদের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। -আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!