ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন ও গরিব থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন ও গরিব থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

pm-01-20190224144733

নিউজ ডেক্স : বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন ও গরিব থাকবে না। সকল গৃহহীনদের ঘরবাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের খনন কাজ ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এমন ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশ অদম্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে বলেই দেশের এত উন্নয়ন আমরা করতে পেরেছি। জনগণ আমাদের পাশে আছে বলে এত কাজ আমরা করতে পেরেছি। জনগণ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের একটি নিরঙ্কুশ বিজয় উপহার দিয়েছে। আমরা জনগণের দেয়া প্রতিটি ওয়াদার পূর্ণ বাস্তবায়ন করব।

তিনি বলেন, আমরা দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখব। সকলের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করব। দেশে কেউ গৃহহীন ও গরিব থাকবে না। গৃহহীনদের ঘরবাড়ির ব্যবস্থা আমরা করে দেব। অচিরেই দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। মহেশখালী ও মাতারবাড়ী অঞ্চলে একটি এবং পায়রাতে একটি করে এনার্জি হাব গড়ে তোলা হবে। বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের অধিকতর কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। দেশে বুলেট ট্রেন চালু করা হবে। আমরা ইতোমধ্যে ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করব।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্প হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নদীর নিচে প্রথম চ্যানেল নির্মাণ প্রকল্প উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০১০ সালে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলাম। তার ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের জুন মাসে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে একটি সড়ক টানেল নির্মাণের জন্য চীন সরকারের সাথে জি টু জি ভিত্তিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সেই স্মারকের ধারাবাহিকতায় চীন সরকার চ্যানেল নির্মাণের জন্য চীনা একটি কোম্পানিকে মনোনয়ন দেয়। ২০১৫ সালের ৩০ জুন টানেল নির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সাথে চীনের এই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর এই টানেল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়।

তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে মূল টানেলটি দু’টি টিউব সম্বলিত ও ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড এবং ৭২৭ মিটার ওভার ব্রিজসহ এই টানেলটি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলাকে শহরাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ সহায়তায় ৩ হাজার ৯৬৭ কোটি ২১ লাখ টাকা ও চীন সরকারের ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা রয়েছে। বর্তমানে টানেল প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলেছে। এর বাস্তব ভৌত অগ্রগতি ৩২ শতাংশ।
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইয়েরে সাথে সংযোগ স্থাপতি হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকায় উন্নয়ন ত্বরান্নিত হবে। পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমান বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ ও উন্নত হবে। ফলে পূর্ব প্রান্তের শিল্প কারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমান বন্দর ও দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন সহজ হবে। এ যোগাযোগ ব্যবস্থা মূল চট্টগ্রাম শহরকে বাইপাস করে হবে। এর ফলে ভ্রমণ সময় ও খরচ ব্যয় কমবে এবং চট্টগ্রাম শহরের যানজট অনেক হ্রাস পাবে। কর্ণফুলী টানেল নির্মিত হলে এলাকার আশপাশে শিল্পোন্নয়ন, পর্যটক শিল্পের বিকাশ এবং ব্যবসা ব্যাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এতে করে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রফতানি বৃদ্ধি পাবে। এ এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মানুষের জীবনমান উন্নত ও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, গত ১০ বছরে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে। জনগণ উন্নয়নের সুফল উপভোগ করছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। দারিদ্র্যের হার কমে এখন ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলার হয়েছে। গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭২ বছরের ওপরে। জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ বিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নের ৯০ ভাগ কাজই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করছি। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ।
বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার ৮৮৫ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। ৯৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। ১০ বছরে যোগাযোগ অবকাঠামোর অনেক উন্নয়ন হয়েছে। মহাসড়কগুলো চারলেনে উন্নীত করা হচ্ছে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছি।

তিনি বলেন, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের জন্য আসছেন।

২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মহান স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী উদযাপন করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!