ব্রেকিং নিউজ
Home | উন্মুক্ত পাতা | ফেসবুক, বন্ধুত্ব, স্বজন ও প্রতারণা

ফেসবুক, বন্ধুত্ব, স্বজন ও প্রতারণা

ফিরোজা সামাদ : আবেগ নিয়ে ফেসবুক পরিচালনা করা ঠিক নয়। ফেসবুক বন্ধু হলো জোয়ারের মতো আসে কিছুক্ষণ থমকে আবার ভাটির স্রোতে চলে যায়। এর মাঝখানে আপনার আমার আত্মীয়, স্বজন বন্ধু হয়ে আসে তার-পর তারাও মিলিয়ে যায় হারানোর পথে। কেউ যায় ইচ্ছায় কেউ কাজের ব্যস্ততায় আবার কেউ যায় অচীনপুরের ঠিকানায়। মাঝে মাঝে প্রতারণা করেও অনেক ছদ্মবেশি বা চাটুকার বন্ধুও আসে আর যায়। তাই কখনও বিবেক বা আবেগ কোনোটাই ফেসবুকে যেনো প্রভাব না পড়ে সেদিকে সতর্ক থাকা উচিত।

মানুষ, দেখে, ঠেকে তারপর শিখে নীতিবাক্য প্রকাশ করে থাকে। এটাই বোধহয় মানুষ চরিত্রের সহজাত প্রবৃত্তি। আমার অবস্থাও কিছুটা তথৈবচ। ফেসবুক খোলার প্রথম দিকের কথা। অনেক বন্ধুত্বের রিকোয়েস্ট পাচ্ছি। তখন অবশ্য প্রোফাইল লকড এর ব্যবস্থা হয়তো ছিলো না। জানা-শোনা আত্মীয় স্বজন নিয়েই ফেসবুক চালাচ্ছি। অনেক রিকোয়েস্ট জমা পড়ে আছে। বারবার ইনবক্সে অনুরোধ আসছে এ্যাক্সেপ্ট করার জন্য। তার মধ্যে চারজন ছেলে বন্ধু আমায় ” মা ” বলে সম্বোধন করে বন্ধু হতে চাইলো।

আমি ব্যক্তিগতভাবে ” মা” সম্বোধনের উপর ভীষণ ভীষণ দুর্বল। আমার প্রিয়জনকে বিষয়টি জানালাম। তিঁনি আমার থেকেও কাহিল। তিঁনি বললেন, যখন পুত্র হতে চাইছে নিয়ে নাও! চাজনার মধ্যে দুইজন মুসলিম আর দুইজন সনাতন ধর্মালম্বী। আমি চারজনকেই পুত্র বন্ধু বানালাম। তারপর আমি যাই লিখি না কেনো? শুধু ভালো প্রশংসনীয় কমেন্টে ভরে যাচ্ছে। তারপর এলো বোনপুত্র হযে প্রায় ১৫/২০ জন। তাদের দেখলাম বরগুনার লোক। কেউ প্রবাসে কেউবা স্বদেশে পরিচিতি দেখে বোঝা যাচ্ছিলো সম্পর্কে খালা টালা হবো। যাইহোক বরগুনার আমার ঘনিষ্ঠ স্বজন ও ফেসবুক বন্ধুদের সাথেও তারা যুক্ত রয়েছেন। কেউ আমার সমসাময়িক, কেউবা কিছু বড়ো আবার কেউ বয়সে ছোট। যারা প্রবাসে থাকেন তারা আবার ইনবক্সে খোঁজখবর নিত। আমি সময় পেলে প্রতিউত্তর দিতে চেষ্টা করতাম।

একদিন প্রবাসের এক বোনপুত্র তার নিজের প্রোফাইলে একটি ভিডিও আপলোড করলো। যেটা একটা বারের হবে হয়তো। মূলত তার অজ্ঞতার কারণেই হযেছে বোঝা যাচ্ছিলো। কারণ, তার সাথে অন্য যেসব আমার পরিচিত নারীবন্ধু ছিলো তারাও দেখলো আর আমায় জানালো। আমি সাথে সাথে ঐ ছেলেকে বললাম, ” তুমি এসব কী করছো? ” প্রতিউত্তরে সে দুঃখ প্রকাশ করে বললো,”খালা আমার এক বধুভুল করে এটা করেছে, এখন ডিলিট করেছি।” যদিও তার উত্তরটি আমার কাছে গ্রহনযোগ্য হয়নি।

তারপর, বেশ কয়েকদিন পর বললো,খালা আমি দেশে ফিরে যাচ্ছি ছুটিতে। খালুকে আর আপনাকে সালাম করে বাড়ি যাবো। তারপর থেকে ওই ছেলের প্রোফাইল বন্ধ পেলাম। দুই তিনমাস পর মনে হলো একবার খোঁজ নেই। বরগুনায় আমার আত্মীয়ের ভায়রা বলে পরিচয় দিয়েছিল, তাকে জিজ্ঞেস করতেই বললো, আরে খালাম্মা ওই বদমাশটা অনেক মেযেদের চিটারি করে বউয়ের কাছে ধরা পড়ায় বউ জুতাপেটা করেছে। আমি তো হতবাক। আহা বিদেশ বিভুইয়ে গিয়েও স্বদেশের মা-বোনদের এরা নিষ্কৃতি দিচ্ছে না। তারপর মরহুম মালেক দাদা সেই ছেলে সম্পর্কে অনেক কথাই বলছিলেন।

সেই ছেলে আবার বিদেশ গিয়ে আমায় ইনবক্সে ‘ আস্সামু আলাইকুম, খালাম্মা! ‘ বললে, আমি শুধু বললাম আমার ফেসবুকে যুক্ত থাকার কোনো যোগ্যতাই নেই তোমার। তোমার সম্পর্কে আমি সব জেনে গিয়েছি। তারপর ব্লক করে দিলাম। তবে ছেলে ভালো ভদ্রলোকের ছেলে ছিলো। ওর বাবা সত্যি সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন মানুষ গড়ার কারিগর সত্বেও নিজের ছেলেকে মানুষ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। (চলবে…)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!