Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | দেশের ২১শ স্বাস্থ্যকর্মীর উপর চলবে চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল

দেশের ২১শ স্বাস্থ্যকর্মীর উপর চলবে চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল

নিউজ ডেক্স : বাংলাদেশে চীনের সিনোভেক কোম্পানির তৈরি নতুন করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকার তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) দেশের সাতটি হাসপাতালের দুই হাজার ১শ জন স্বাস্থ্যকর্মীর উপর এর ট্রায়াল চালাবে।

বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি) সূত্রে জানা যায়, আইসিডিডিআর,বি দেশের সাতটি হাসপাতালে টিকা পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে অনুমোদন চেয়েছে। অধিদপ্তর অনুমোদন দিলে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিট-১, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ইউনিট-২ এবং ঢাকা মহানগর হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর টিকা প্রয়োগ করা হবে।

বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) পরিচালক ডা. মাহমুদ-উজ-জাহান বলেন, চীনের সিনোভেক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড কোম্পানির তৈরি টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য আইসিডিডিআর,বি আমাদের কাছে প্রটোকল জমা দিয়েছিল। এটি ন্যাশনাল রিসার্চ এথিকস কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।

তিনি বলেন, আইসিডিডিআর’বির পক্ষ থেকে যে প্রটোকল দেওয়া হয়েছে, তাতে ৪ হাজার ২শ জনের ওপর এ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে বলে উল্লেখ ছিল। তবে ৪ হাজার ২শ জন টিকা পাবেন না। এদের মধ্যে অর্ধেক টিকা পাবেন, অর্ধেক পাবেন না। এটাই গবেষণার নিয়ম।

আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে চীনের ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল মানে এটা নিয়ে গবেষণা হবে। চীনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালে দেখা হবে, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এই ভ্যাকসিনটা দিলে তার ভেতরে যে এন্টিবডি তৈরি হবে সেটার প্রটেক্টিভিটি ক্ষমতা কতটুকু, এই ভ্যাকসিন দিয়ে দেশের মানুষের কোনো অসুবিধা কিংবা ক্ষতি হবে কিনা, এটার গ্রহণযোগ্যতা কেমন। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতা এ দু’টি বিষয় দেখাই হলো মূল উদ্দেশ্য।

‘এটি মানুষের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ, ভ্যাকসিনটি নিলে কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কিংবা কোনো সমস্যা আছে কিনা। এছাড়া তাৎপর্যপূর্ণ সংখ্যায় প্রতিরোধ ক্ষমতা মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে কিনা। এটা হলো কার্যকারিতা। এই দু’টি বিষয় তখন পাওয়া যাবে, তারপরে প্রশ্ন হলো এই ভ্যাকসিনটা বাংলাদেশ প্রয়োগ করা যায় কিনা? তখন এটি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’

তিনি বলেন, সাধারণত ভলান্টিয়ারদের মধ্যে এই ভ্যাকসিন ট্রায়াল দেওয়া হয়। যাদের বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে ৬০ বছরের নিচে হতে হবে। তাদের সবাইকে স্বাভাবিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে, যাদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ নেই- এরকম কিছু ক্রাইটেরিয়া আছে তাদের উপর প্রয়োগ করতে হবে।

ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, গবেষণা শেষে বিজ্ঞানীরা একটা প্রস্তাবনা দেবেন। এই ভ্যাকসিনটা কার্যকরী অথবা কার্যকরী নয়। যদি কার্যকরী না হয় তাহলে এটি ব্যবহারের প্রশ্নই থাকবে না। আর যদি কার্যকরী হয়, তখন সরকার বিবেচনা করবে এই ভ্যাকসিনটা বাংলাদেশে ব্যবহার করা যাবে কিনা।

এছাড়াও অন্য যেসব ভ্যাকসিন যেমন বাংলাদেশে ভ্যাকসিন আছে কিংবা ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড, জার্মানি, ভারতের ভ্যাকসিন তৈরি করছে। সেগুলোও মূল্যায়ন করা হবে। এই মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে যদি চায়নিজ ভ্যাকসিনটা বেশি কার্যকরী হয় তাহলে চীনের ভ্যাকসিন বাংলাদেশ গ্রহণ করবে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে এসব দেশের সব মানুষকে টিকা দেওয়ার মতো মজুদ শিগগিরই গড়ে তুলতে পারবে না সংস্থাটি। প্রতিটি দেশের ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের অগ্রাধিকারের তালিকা তৈরি হচ্ছে। এই তালিকার শীর্ষে আছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

জানা যায়, সারা বিশ্বে করোনার টিকা বানাতে এখন অন্তত ১৬০টি উদ্যোগ চালু রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দু’টি টিকা তৃতীয় ধাপে আছে। সিনোভেকের এ টিকার পাশে তৃতীয় ধাপে আছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা।

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছিল গত ডিসেম্বরে। ভাইরাস প্রতিরোধে চীন শুরু থেকে যেসব উদ্যোগ নিয়েছিল, তার মধ্যে টিকা উদ্ভাবনের প্রচেষ্টাও ছিল। সিনোভেক বায়োটেক এক্ষেত্রে এগিয়ে। তাদের টিকার সম্ভাব্য নাম ‘করোনাভেক’। বাংলানিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!