ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ত্রাণ বন্ধ থাকায় খাদ্য সংকটে শূন্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গারা

ত্রাণ বন্ধ থাকায় খাদ্য সংকটে শূন্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গারা

tumbro-myn-army-o-point-3-1
কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের শূন্যরেখা (নো ম্যান্স ল্যান্ড) রোহিঙ্গা শিবিরে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে সেখানে আশ্রয় নেয়া সাড়ে ৫ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও ঘুনধুম সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করা রোহিঙ্গারা জানান, জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি ডব্লিউএফপি’র আওতায় ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ রেডক্রস (আইসিআরসি) গতবছরের আগস্টের পর থেকেই তাদের মাসে দু’বার করে ত্রাণ দিয়ে আসছিল। সর্বশেষ গত ২৯ মে এখানে সবার মাঝে ত্রাণ দেয়া হয়।
এরপর থেকে সংস্থাটি ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে রোহিঙ্গা শিবিরে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। একজনের খাবার ভাগ করে খেতে হচ্ছে।
খাবার সংকটের সঙ্গে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে রোহিঙ্গা শিবিরটি তলিয়ে গেছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
গত বছরের ২৫ আগস্টে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। সেনাদের নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের মুখে পালিয়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়।
এই সময়ে ২০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও ঘুনধুম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তাদের মধ্যে তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় (নো ম্যান্স ল্যান্ড) প্রায় সাড়ে ৫ হাজার রোহিঙ্গা রয়ে যান।
এই শিবিরটি স্পর্শকাতর হওয়ায় বাসিন্দাদের মাঝে খাদ্যসহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করা বেশ কঠিন। তবে জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি ডব্লিউএফপি’র আওতায় ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ রেডক্রস (আইসিআরসি) এই শিবিরে এতদিন মাসে দু’বার করে খাদ্য সরবরাহ করে আসছিল।
পরিবার প্রতি ২৫ কেজি চাল, ৫ লিটার তেলসহ অন্যান্য সামগ্রী দেয়া হতো। কিন্তু, ২৯ মের পর হঠাৎ করেই সংস্থাটি এই খাদ্য সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। ঈদুল ফিতরের আগে খাদ্য দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। কবে নাগাদ দেয়া হবে তাও কর্তৃপক্ষ বলছে না।
কেন রেডক্রস খাদ্য সহায়তা বন্ধ করেছে তা জানাতে না পারলেও শিবিরের রোহিঙ্গা আবদুল্লাহ ও হাবিবুল্লাহ জানান, ঈদের আগে তুরস্কভিত্তিক একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থা তাদের শিবিরে কিছু ত্রাণ দিয়েছিল। এরপর থেকেই রেডক্রস খাদ্য সহায়তা বন্ধ রেখেছে।
রোহিঙ্গাদের মাঝে অন্য সংস্থা ত্রাণ দেওয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে রেডক্রস এমনটি করে থাকতে পারে বলেও জানান তারা।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘শূন্যরেখার রোহিঙ্গা শিবিরে খাদ্য সংকটের কথা আমিও শুনেছি। ঈদ ছুটির কারণে সহায়তা দিতে হয়তো দেরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করছি।’
খাদ্য সরবরাহ বন্ধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রসের কেউই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানিয়েছেন।
তবে বান্দরবান রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করার কোনো খবর আমাদের কাছে নেই। শরণার্থীদের শিবিরে কোনো খাদ্য সংকটও দেখা দেয়নি। খুব শিগগিরই তাদের নিয়মিত খাদ্য সরবরাহের চালান পৌঁছে দেয়া হবে।’
বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শফিউল আলম বলেন, ‘উড়ো খবরের পর খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবিরে রেডক্রসের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সেখানে খাদ্য সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!