Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | তাদের থামাবে কে?

তাদের থামাবে কে?

মোটরবাইকের বেসামাল গতি, হর্নের বিকট শব্দ, ব্যবহৃত হচ্ছে ছিনতাইয়েও

নিউজ ডেক্স : নগরীর জামালখান এলাকা। শিশু সন্তানকে নিয়ে সড়কের পাশে রিকশার অপেক্ষায় এক নারী। হঠাৎ বিকট শব্দে বেসামাল গতিতে পাশ দিয়ে মোটরবাইক চালিয়ে গেলেন উঠতি বয়সী এক তরুণ। ভয়ে কান্নাজুড়ে দিল শিশুটি। এমন অবস্থায় মোটরবাইক আরোহীর ওপর সব ক্ষোভ ঝাড়লেন শিশুটির মা।

শুধু জামালখান নয়; নগরীর বেশিরভাগ সড়কেই এমন বেসামাল গতির মোটরসাইকেল চালকের দেখা মেলে। সকাল, দুপুর কিংবা রাত। একা অথবা দলবেঁধে বাইক চালিয়ে যান এসব বেপরোয়া বাইকার। মোটরবাইকের এই যন্ত্রণা প্রতিদিনই পোহাতে হয় নগরবাসীকে। দিনের যন্ত্রণা নিশুতি রাতে কাঁপন ধরায় বুকের ভেতর হঠাৎ করেই। অসুস্থ ব্যক্তিতো বটেই, সুস্থ অনেকেও বুকের বাঁ পাশে হাতের স্পর্শে যেন উপলব্ধির চেষ্টা করে হৃৎপিন্ড সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা। হাইড্রোলিক হর্ন আর সরু পথেও মাত্রাতিরিক্ত গতির কারণে নগরীতে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে মোটরবাইক। বেপরোয়া গতির কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটছে। আবার এসব মোটরবাইকে করে ছিনতাইয়েরও ঘটনা ঘটছে।- আজাদী

এ প্রসঙ্গে সিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, এসব মোটরসাইকেল আরোহীদের থামাতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যদি কখনো হাইড্রোলিক হর্ন যুক্ত গাড়ি নজরে আসে তবে সাথে সাথে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অনেক সময় আমরা সেসব চালকদের থামিয়ে হাইড্রোলিক হর্ন খুলে রাখি। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ১৩৯ এবং ১৪০নং ধারায় নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহার ও আদেশ অমান্য করার শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। তাদের মামলা ও জারিমানা করা হয়।

ভুক্তভোগী কয়েকজন পথচারী জানান, রাস্তাঘাটে বের হলেই আতঙ্কে থাকতে হয় সর্বদা। হঠাৎ করেই বিকট আওয়াজ তুলে একসাথে কিংবা কখনো কখনো তীব্র হর্ন বাজিয়ে ছুটে আসতে দেখা যায় মোটরবাইক চালকদের। কত আইন কানুন হচ্ছে চালকদের জন্য। কিন্তু তাদের থামাবে কে?

গত বুধ, বৃহষ্পতি ও শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায় গাড়ির ব্রেকের সঙ্গে সংযোজন হয়েছে এ ধরনের নানা ব্রেক সাউন্ডও। আছে সাইড ইন্ডিকেটর সাউন্ড। আবার কিছু সংখ্যক মোটরসাইকেল ও গাড়িতে ক্ষিপ্ত কুকুরের বিকট খ্যাক খ্যাক শব্দ সংযোজন করা রয়েছে। যে কারোর আশপাশে এসব হর্ন হঠাৎ বেজে উঠলে আঁতকে উঠেন মানুষজন, অন্য গাড়ির চালকরাও হকচকিত হয়ে উঠেন মুহূর্তেই। সন্ধ্যা পেরোলে গাড়ি চক্রের সদস্যরা ছিনতাইসহ নানারকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে মোটরবাইকে চেপে।

সমপ্রতি নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকার উঠতি তরুণ মোটরবাইক চালক, যারা হিন্দি গান, গুলির শব্দ, জীবজন্তুর বিকট শব্দ বা ভিআইপি সাইরেনসহ বাইক চালিয়ে শব্দদূষণ করে তাদের সঙ্গে কথা হয়। তাদেরই একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, এ ধরনের শব্দ করলে আলাদা মনোযোগ তৈরি করা যায়। পথে চলতি অবস্থায় ভয়ে অনেকে সাইড দিয়ে দেয়। আর গান শুনে গাড়ি চালালে নিজেকে ‘স্মার্ট’ মনে হয়। চট্টগ্রাম নগরীতে মোটরবাইক চালানোর সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, থাইল্যান্ড থেকে যে মোটরসাইকেলগুলো আনা হচ্ছে সেগুলোয় সাউন্ড হল্যার থাকায় চালানোর সময় ইঞ্জিনের উচ্চ শব্দ তৈরি হয়। এছাড়া কদমতলী, আগ্রাবাদ, চৌমুহনি, ধনিয়ালাপাড়া এলাকায় মোটরবাইক মেকানিকদের অনেকেই থাইল্যান্ড থেকে পশু-পাখির বিকট ডাকের হর্ন নিয়ে আসেন। আর তরুণদের অনেকেই এ হর্ন লাগাতে দোকানে লাইন দেয়।

নগরীর ডবলমুরিং থানার ওসি সদীপ কুমার দাশ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নাগরিক যন্ত্রণার একটি বড়ো কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বখে যাওয়া এসব ধনীর দুলাল। জামালখান থেকে চেরাগীর মোড়, সার্সন রোড, চট্টেশ্বরী রোড হয়ে ওয়ার সিমেট্রি ধরে গোলপাহাড়, কাজীর দেউড়ি, স্টেডিয়াম, নেভাল হয়ে সিআরবি, লালখান বাজার থেকে দেওয়ানহাট হয়ে বারিকবিল্ডিংসহ বিভিন্ন এলাকায় মোটরবাইক ও প্রাইভেটকার নিয়ে পরস্পরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়।

এ প্রতিযোগিতা শুধু বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোই নয়, পাশাপাশি কে কার চেয়ে কত জোরে হর্ন বাজাতে পারে, হর্নে কতোটা বৈচিত্র্য থাকতে পারে তার চেষ্টা চালিয়ে যায়। নিজেদের গাড়ির সাইলেন্সার পাইপ খুলে রেখে বিকট শব্দ তুলে নগরময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। আবার কেউ কেউ গাড়িতে ডিজিটাল হর্ন লাগিয়ে কুরুচিপূর্ণ নানা শব্দ বাজিয়ে চলছে। মোটরসাইকেল বা প্রাইভেটকারে কুকুরের তীব্র ‘ঘেউ ঘেউ’ আওয়াজ, কেউবা ধমকের শব্দ রেকর্ডিং করে তা অনবরত বাজিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত করে তুলছে। রাতে কথনো শোনা যায় গুলির শব্দ। পরে দেখা যায় গোলাগুলি নয় মোটরসাইকেলের হর্ন এটি। বিভিন্ন থানার ওসিরা এ বিষয়ে অভিযান চালাচ্ছে। তবে পরিবার যতদিন সচেতন না হবে, ততদিন এ মৃত্যুঝুঁকি বন্ধ হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!