ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক : লবণ পানিতে মৃত্যুফাঁদে পরিণত

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক : লবণ পানিতে মৃত্যুফাঁদে পরিণত

P-12-1-12

নিউজ ডেক্স : লবণ পানিতে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। পটিয়ার ইন্দ্রপুল শিল্প এলাকায় প্রতি রাতে অনেক ট্রাক থেকে আনলোড করা হয় লবণ। কক্সবাজারের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পানিযুক্ত অপরিশোধিত লবণ থেকে ঝরে পড়া পানি পিচ্ছিল করে তুলছে ইন্দ্রপুলের উভয় পাশের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার মহাসড়ক। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝরছে প্রাণ। বিগত এক বছরে প্রায় ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। যাদের বেশিরভাগই ছিল মোটরসাইকেল আরোহী। লবণ থেকে ঝরে পড়া পানিতে এত দুর্ঘটনা ঘটলেও তা বন্ধে প্রশাসন থেকে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। খবর দৈনিক আজাদীর।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পলিথিন দিয়ে লবণ পরিবহনের জন্য বার বার অবহিত করা হলেও কর্ণপাত করছে না লবণ ব্যবসায়ীরা। আবার কোনো কোনো লবণ পরিবহনকারী ট্রাকে পলিথিন ব্যবহার করলেও ইন্দ্রপুল এলাকায় সড়কের উপর লবণ আনলোড করার সময় ট্রাকের লবণাক্ত পানিতে মহাসড়ক সয়লাব হয়ে যায়। জানা যায়, পানিযুক্ত লবণ পরিবহন ও এর ফলে মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত এবং পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনা বাড়ার কারণে চট্টগ্রাম জেলার গত জানুয়ারি মাসের উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে পানিযুক্ত লবণ পরিবহনের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লবণ ব্যবসায়ীদের নিয়ে মতবিনিময় করা হবে। এদিকে মহাসড়কের পাশে পানিযুক্ত লবণ আনলোড বন্ধে এক সপ্তাহ আগে মিল মালিকদের চিঠিও দিয়েছে পটিয়া লবণ মিল মালিক সমিতি। তবে এ চিঠি পাওয়ার পরেও সড়কের উপর লবণ আনলোড বন্ধ করেনি কেউ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পটিয়া লবণ শিল্প এলাকায় চাঁনখালী খাল দিয়ে লবণ বোঝাই ট্রলার আসা কমে গেলে ট্রাকে লবণ পরিবহন বেড়ে যায়। প্রায় ১০ বছর আগে থেকে ট্রাকে করে লবণ পরিবহন করা হলেও কোন পলিথিন ব্যবহার করা হতো না। অনেক চেষ্টা তদবিরের ফলে পলিথিন ব্যবহার শুরু হলেও নতুন করে ইন্দ্রপুল এলাকা আগের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, চকরিয়া ও বাঁশখালী থেকে সড়ক পথে আসা ট্রাক থেকে ঝরে পড়া লবণের পানি খালাসের সময় ইন্দ্রপুল এলাকায় পড়ে। এসব লবণাক্ত পানি পটিয়া থানার মোড় থেকে আমজুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে পটিয়ায় বিয়ে খেতে আসা মোটরসাইকেল আরোহী চট্টগ্রাম নগর পুলিশের দুই সদস্য ইন্দ্রপুল থেকে নামতেই পিছলে গিয়ে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে দুই পুলিশ সদস্য প্রাণ হারায়।

এর কয়েকদিন পর চট্টগ্রাম থেকে লোহাগাড়া বায়তুশ শরফের ইছালে সওয়াব মাহফিলে যাওয়ার পথে সড়কে পিছলে গিয়ে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী শালা-ভগ্নিপতি নিহত হয়। সর্বশেষ গত ৯ জানুয়ারি রাত ৮টায় মহাসড়কের পটিয়া উপজেলা গেইট এলাকায় আরেক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী ইউপি সদস্য আজম খান প্রাণ হারায়। এভাবে গত এক বছরে অসংখ্য দুর্ঘটনায় ১০ জনের প্রাণহানি ও শতাধিক লোক আহত হয়।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ দোহাজারীর নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ হাসান বলেন, পানিযুক্ত লবণ পরিবহন বন্ধ করতে জানুয়ারি মাসের জেলা উন্নয়ন সভায় বলা হয়েছে। এছাড়া পানিযুক্ত লবণ পরিবহনের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে পটিয়া লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক আল্লাই বলেন, সড়কের উপর যারা পানিযুক্ত লবণ আনলোড করেন তাদের সতর্ক করে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে লবণ আনলোড বন্ধ করতে বলা হয়েছে। আমরা পুনরায় ওইসব মিল মালিকদের আবারো সতর্ক করবো। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান বলেন, বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শিগগিরই লবণ মালিকদের সাথে বসবো। তবে যারা সড়কের পাশে লবণ আনলোড করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!