ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চট্টগ্রামে ৩১২টি ইটভাটায় জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র নেই

চট্টগ্রামে ৩১২টি ইটভাটায় জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র নেই

(ফাইল ছবি)

(ফাইল ছবি)

নিউজ ডেক্স : পরিবেশ আইন মেনেই ইটভাটার লাইসেন্স নবায়নে উৎস কর, লাইসেন্স ফি ও ভ্যাটসহ ৬০ হাজার টাকারাজস্ব দিতে হয় সরকারকে। চট্টগ্রামের ৩১২ অবৈধ ইটভাটা থেকে এই তিন খাতে কোন ধরনের রাজস্বপাচ্ছে না সরকার। এতে সরকার প্রতি বছর ১৮ কোটি ৭২ লাখ টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। তবে বৈধ–অবৈধ ইটভাটা থেকে ৬০ লাখ টাকার ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) আদায় করেছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে ৪০৮টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে বৈধ ইটভাটা হচ্ছে ৯৬টি। অবৈধইটভাটা ৩১২টি। অবৈধ ইটভাটা থেকে সরকার কোনো ধরণের কর পাচ্ছে না। তবে কর না পেলেওসকল ইটভাটা থেকে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) আদায় করা হয়। চলতি মৌসুমে (২০১৭–১৮) ইটভাটাথেকে ভূমি উন্নয়ন করের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তার বিপরীতে (গতজুন পর্যন্ত) খাজনা আদায় করা হয়েছে ৬০ লাখ ১,২০৩ টাকা। যা গত মৌসুমের চেয়ে প্রায় ৬ লাখ টাকাবেশি।

জেলা রাজস্ব সভায় জানানো হয়েছে, অবৈধ ইটভাটার মধ্যে উচ্ছেদ মামলা রয়েছে একশটির বিরুদ্ধে।২০টিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৩০টিতে আদালতের স্থগিত মামলা রয়েছে। ৩০টিমামলার নোটিস জারি করা হয়েছে। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলানির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জেলার মাসিক রাজস্ব সভায় অনুরোধ জানানোহয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের খামখেয়ালি ও উদাসীনতায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে নাবলে দাবি পরিবেশবাদীদের। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বছরের পরবছর অবৈধভাবে ইটভাটার কার্যক্রম চলে আসছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে উপজেলা প্রশাসন ইটভাটামালিকদের কাছ থেকে সুবিধা আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে।

ইটভাটার লাইসেন্স গ্রহণে জেলা প্রশাসনকে উৎস কর ৪৫ হাজার টাকা, লাইসেন্স ফি পাঁচশ টাকা এবংপরিবেশ অধিদপ্তরকে ১২ হাজার পাঁচশত টাকার সাথে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান করতে হয়।ভ্যাটসহ ১৪,৩৭৫ টাকা দিয়ে পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে হয়। ইট পোড়াতে প্রাথমিকভাবে এই দুইসংস্থাকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা গুণে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে অবৈধ ৩১২টি ইটভাটাথেকে এই ধরণের কোনো কর পাচ্ছে না সরকার। বছরের পর বছর অবৈধভাবে চলে আসছে এসবইটভাটা। এজন্য জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে দুষছেন পরিবেশবাদীরা। অপরদিকে, উৎপাদিত ইটপ্রতি আয়করে চলছে শুভংকরের ফাঁকি। এক–চতুর্থাংশ ইট উৎপাদন দেখিয়ে আয়করপ্রদান করা হয় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

একাধিক ইটভাটার ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জানা যায়, একটি ট্রাকে আড়াই থেকে তিন হাজারইট পরিবহন করা হয়। প্রতি হাজার ইট পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি দেখিয়ে আয়করচালান দেয়া হয়। এছাড়া একটি গাড়ি একাধিক ট্রিপ গাড়ি চালালেও দিনে শুধুমাত্র একটি চালান নিয়েইট পরিবহন করা হয়। এছাড়াও গাড়িপ্রতি দুই থেকে আড়াই হাজার ইট পরিবহন দেখিয়ে ভ্যাট চালানতৈরি করা হয়। এছাড়াও একটি ইটভাটায় এক মৌসুমে কমপক্ষে ৪০–৫০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। কিন্তুআয়কর বিভাগকে দেখানো হয় উৎপাদিত ইটের এক–চতুর্থাংশ। আয়কর বিভাগের কর্মকর্তাদেরযোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ চলে আসছে। অর্থাৎ শহরতলী উপজেলাতে ইটভাটা প্রতি ৬–৭ লাখ টাকা আর সাতকানিয়া, রাঙ্গুনিয়াসহ অন্যান্য উপজেলার ইটভাটাগুলোর ক্ষেত্রে ৪–৫ লাখ টাকা ‘মুঠো কর’ প্রথা চালু রয়েছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।

বোয়ালখালী উপজেলার দুটি ইটভাটার ম্যানেজার ও সহকারী ম্যানেজারের সাথে কথা বলে আয়করেএই শুভংকরের ফাঁকির তথ্যটি পাওয়া যায়। একটি ইটভাটার ম্যানেজার জানান, এক চালানে পুরোদিনইট পরিবহন করা হয়। কিন্তু শহরে পরিবহনের ক্ষেত্রে আলাদা ভ্যাট চালান দিতে হয়।

জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখায় জুন মাসের খাজনা আদায়ের তথ্যে দেখা যায়, চান্দগাঁও থানা এলাকারইটভাটা থেকে খাজনা আদায় হয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ৪শ টাকা। মিরসরাই উপজেলায় ২ লাখ২৪,৮১২ টাকা, সীতাকু– উপজেলায় ৭ লাখ ৪৯,২৯৯ টাকা, সন্দ্বীপে ৫ হাজার একশ টাকা, ফটিকছড়িউপজেলায় সাত লাখ ৪৯,১৪০ টাকা, হাটহাজারী উপজেলায় ৯ লাখ ১৫,৭৫০ টাকা, রাউজানউপজেলায় ২ লাখ ৮০,২১০ টাকা, রাঙ্গুনীয়া উপজেলায় ৪ লাখ ১০,৫৫০ টাকা, বোয়ালখালী উপজেলায় ৮৪,৪০০ টাকা, পটিয়া উপজেলায় ৪২,৯৭৬ টাকা, আনোয়ারা উপজেলায় ১৮,৪৮০ টাকা, চন্দনাইশ উপজেলায় ৪ লাখ ৪১,৩৪০ টাকা, সাতকানিয়া উপজেলায় ১০ লাখ ২৬,৪৩৫ টাকা, লোহাগাড়া উপজেলায় ৭ লাখ ৫০,৫০৩ টাকা, বাঁশখালী উপজেলায় ৯৮,৮০৮ টাকা আদায় করা হয়েছে। মোটআদায় করা হয়েছে ৬০ লাখ ১,২০৩ টাকা।

পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, ২০১৩ সনের ৫৯ নং আইনে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইনের ৪ নং ধারায়লাইসেন্স ব্যতীত ইট তৈরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনেযা কিছুই থাকুক না কেন, ইটভাটা যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার জেলা প্রশাসকের নিকট থেকেলাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে, কোন ব্যক্তি ইটভাটায় ইট প্রস্তুত করতে পারবেন না। কিন্তু ইট পোড়ানোআইনের তোয়াক্কা না করে বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে ইট তৈরি চলে আসছে। এতে সরকার বড়ধরণের রাজস্ব হারাচ্ছে। এজন্য জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেনপরিবেশবাদীরা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, লাইসেন্সবিহীন ইটভাটাগুলো থেকে লাইসেন্স নবায়ন ফি ও হালনাগাদ করার কোনো সুযোগ নেই।লাইসেন্স নবায়ন না হলে রাজস্ব আদায় হবে না। এতে সরকার প্রতিবছর বড় ধরণের রাজস্ব হারাচ্ছে।তিনি বলেন, পরিবেশ আইনে ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন ও লাইসেন্স প্রদানে কড়াকড়ি আরোপ করাহয়েছে। তবে কয়েক মৌসুম ধরে জেলা প্রশাসক অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ অভিযানপরিচালনা করে আসলেও পরিবেশ অধিদপ্তর নির্লিপ্ত ছিল।

সূত্র : দৈনিক পূর্বকোণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!