ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | কালুরঘাট সেতুটি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে

কালুরঘাট সেতুটি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে

P-1-4-10

নিউজ ডেক্স : রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ১৯৯৭ সালে কালুরঘাট সেতু দিয়ে ১০ টনের অধিক যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। দীর্ঘ ২১ বছরে সেতুটি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে রেল ও নানা ধরনের ভারী যানবাহন। তবে সেতুটি যেভাবে সংস্কার করার কথা সেইভাবে সংস্কার হচ্ছে না বলে অভিযোগ সেতু ব্যবহারকারীদের। মূলত,রেলওয়ের তিন বিভাগের টানাপোড়েনে কালুরঘাট সেতুর মেরামতের কাজ তেমন একটা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এক বিভাগ কাজ করলে–অন্য বিভাগ করছে না। সেতুর গ্রাডার–স্ট্রেকচার দেখে এক বিভাগ। সেতুর কার্পেটিং দেখে এক বিভাগ ও সেতুর কাঠের রেলিং দেখে আর এক বিভাগ। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে গতকাল কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছরই সেতুটি নিয়মিত মেরামত করা হচ্ছে। এজন্য বড় একটি বাজেটও ব্যয় হয়।

গতকাল সরেজমিন কালুরঘাট সেতুতে গিয়ে দেখা গেছে, ৮৭ বছরের পুরনো এ সেতুর বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়েছে। সেতুটি অনেকাংশে যান চলাচলে অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন মেরামতের মধ্যদিয়ে সেতু দিয়ে রেল ও যানবাহন চলছে।

সেতুর প্রায় অংশে কার্পেটিং উঠে গেছে। বড় বড় গর্তে যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি ট্রেন চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গাছের রেলিং ভেঙে গেছে। সেতুর পাশদিয়ে ঝুঁকি নিয়ে হাঁটছে মানুষ।

রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত এক দশকেরও বেশি সময় আগে পুরনো সেতুটি ভেঙে নতুন একটি রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে রেলওয়ে। কর্ণফুলীতে কনস্ট্রাকশন অব রেলওয়ে কামরোড ব্রিজ প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একটি ডিপিপিও নেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন অর্থের সংস্থান করতে না পারায় সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নর জবাবে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক জানিয়েছেন কর্ণফুলী রেল কাম সড়ক সেতুর জন্য অর্থ পাওয়া গেছে।শীঘ্রই সেতুর কাজ শুরু হবে। এব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল জলিল আজাদীকে জানান, কালুরঘাট রেল সেতু মেরামতের কাজটি আমাদের চলমান প্রক্রিয়ার একটি অংশ। সেতু বিভাগ নিয়মিত পরিদর্শন করে কোথায় কখন কি করতে হবে দেখে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। এদিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী শেখ নাইমুল হক আজাদীকে জানান, প্রতি বছরই সেতুটি মেরামতের জন্য জরুরি বাজেট করি। মেরামত করা হয়। সেতুর গ্রাডার–স্ট্রেকচার ঠিক আছে কিনা, এগুলো আমি দেখি। সেগুলো মেরামত করে এখন রঙ করা হচ্ছে। কার্পেটিংগুলো বিভাগীয় প্রকৌশলী দেখেন।

সর্বশেষ ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এক কোটি টাকা ব্যয়ে কালুরঘাট সেতু মেরামত করা হয়। এর আগে ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বড় ধরনের সংস্কার করা হয়। এ সময় ১১ মাস সেতুর উপর যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। ১৯৮৬ ও ১৯৯৭ সালেও দুই দফায় সংস্কার হয় সেতুটি।

জানা গেছে, ১৯৩০ সালে শুধু রেল যোগাযোগের জন্য কালুরঘাট সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৬২ সালে ৬৩৮ দশমিক ৫ মিটার দীর্ঘ এ সেতু সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। রেলওয়ের অন্যতম পুরনো এ সেতু দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি বিভিন্ন ভারী যানবাহন চলাচল করছে। গত এক দশকে কয়েক দফা মেরামত করা হলেও সেতুটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতি বছরই এ সেতুতে দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এরপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলনও হয়েছে। স্থানীয় মানুষের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পুরনো এ সেতু ভেঙে নতুন একটি রেলসেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ১৫ বছর আগে নতুন এ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হলেও সম্প্রতি সরকার কালুরঘাট সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে এসেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো–অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) এ সেতু নির্মাণে অর্থ দেবে। এ জন্য বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ সহায়তা চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় ১১৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট বোয়ালখালী অংশে রেললাইন কাম সড়কসেতু নির্মাণ করা হবে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি–মার্চের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ দৃশ্যমান হবে বলে জানা গেছে।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!